ঢাকা | নভেম্বর ২৬, ২০২৪ - ২:৪৩ পূর্বাহ্ন

আন্তঃব্যাংক ডলার সংকটের নেপথ্যে কী?

  • আপডেট: Thursday, March 24, 2022 - 8:46 pm

 

অনলাইন ডেস্ক: মহামারী পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসার মধ্যে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে আমদানি। এর ফলে দেশে ডলারের চাহিদাও বেড়ে গেছে। কিন্তু কমে গেছে রেমিট্যান্স। তারই প্রভাব দেখা যাচ্ছে মুদ্রাবাজারে। তবে বাজারে ডলার সংকট তৈরির পেছনে ব্যাংকগুলোকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা। অন্যদিকে কারা কেন ডলার কিনছেন তা খতিয়ে দেখার পরামর্শ অর্থনীতিবিদের।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাহিদা অনুযায়ী অন্যান্য ব্যাংকগুলোকে ডলার সরবরাহ করছে না। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নতুন এলসি খুলতে অনিহা প্রকাশ করছে ব্যাংকগুলো। এর সঙ্গে আগের এলসির পেমেন্ট পরিশোধে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঘোষিত মূল্যের চেয়ে ৪ টাকা পর্যন্ত বেশি আদায় করছে বলেও অভিযোগ তাদের। বর্তমানে আমদানি পেমেন্টের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের প্রতি ডলারের জন্য গুনতে হচ্ছে প্রায় ৮৯ টাকা থেকে ৯০ টাকা।

ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের আমদানি খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। আর আমদানি খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় পণ্যমূল্যও বাড়ছে। তাই সংকট কাটাতে রিজার্ভ থেকে ডলারের সরবরাহ বাড়িয়ে এলসি খোলার সুযোগ ও দাম নিয়ন্ত্রণের দাবি তাদের।

অভিযোগ উঠেছে, এলসি খোলার সময় ব্যাংকগুলো ডলারের যে রেট ধরে, পেমেন্টের দিনে সেই রেট নিতে চায় না। এমনকি পেমেন্টের তারিখে যেই রেট থাকে সেই রেটেও ডলার দিচ্ছে না। বুধবার আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম ২০ পয়সা বেড়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সায় উঠলেও সংকটের কথা বলে অনেক ব্যাংক ৮৯ টাকা থেকে ৯০ টাকা আদায় করেছে।

এদিকে, করোনা মহামারির কারণে আড়াই মাস স্থির থাকার পর বুধবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সা হয়েছে। তবে নতুন এলসি খুলতে ঘোষিত এ রেটের চেয়ে বেশি দাম নির্ধারণ করছে ব্যাংকগুলো।

আন্তঃব্যাংক ডলার সংকট তৈরি করা হচ্ছে কি-না তা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তদারকির পরামর্শ দিচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ডলারের সংকট কি শুধু আমদানি বৃদ্ধির কারণে হচ্ছে, নাকি ব্যাংকগুলো ডলার ধরে রেখেও সংকট তৈরি করছে সেটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক যথাযথ তদারিকর মাধ্যমে দেখাতে পারে।’

‘এছাড়া খোলাবাজার থেকে কারা ডলার কিনছেন, কেন কিনছেন, প্রয়োজনে নাকি অপ্রয়োজনে কিনে ব্যবসা করছেনও সেটিও খতিয়ে দেখা দরকার। ডলারের দাম বেশি হলে আমদানি খরচ আরও বাড়বে, পণ্যমূল্যে যার প্রভাব পড়বে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে পণ্য আমদানি বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৫২ শতাংশ। একই সময়ে বিভিন্ন পণ্যের এলসি বেড়েছে প্রায় ৪৯ শতাংশ। ফলে আমদানিতে ডলারের চাহিদা বেশ বেড়ে গেছে। কিন্তু ব্যাংকের কাছে ডলার আসার উৎস রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় সাড়ে ১৯ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের ২ আগস্ট আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮১ পয়সায় বিক্রি হয়, যা বাড়তে বাড়তে চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি ৮৬ টাকা ওঠে। এর পর থেকে প্রায় আড়াই মাস ডলারের দাম এই জায়গাতেই আটকে রেখেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে বুধবার ২০ পয়সা দাম বৃদ্ধি পেয়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সায় উঠে। আজ বৃহস্পতিবার ৮৫ টাকা ৯৮ পয়সা।

এদিকে খোলাবাজারে ডলারের দাম আরও চড়া। এখানে প্রতি ডলার কিনতে ক্রেতাকে খরচ করতে হচ্ছে প্রায় ৯৩ টাকা। বর্তমানে আন্তঃব্যাংকের সঙ্গে খোলাবাজারের ডলারের দামের পার্থক্য প্রায় ৬ টাকা। স্বাভাবিক সময়ে এই পার্থক্য আড়াই থেকে ৩ টাকার মধ্যে থাকে।