কমতে শুরু করেছে পদ্মার পানি
সেপ্টেম্বরে আরেকদফা বাড়ার শঙ্কা
জগদীশ রবিদাস: গত জুলাই মাস থেকে চলতি মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে রাজশাহীর পদ্মা নদীর পানি বাড়তে থাকলেও এখন তা কমতে শুরু করেছে। গত বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী শহরের টি-বাঁধ পয়েন্টে পদ্মার পানি কমেছে ১১ সেন্টিমিটার। তবে উজানে বৃষ্টি হলে আগামী সেপ্টেম্বরে পদ্মার পানি আরেক দফা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড। একইসঙ্গে বন্যা বা নদী ভাঙনের মতো কোন পরিস্থিতি তৈরি হলে তা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি আছে বলেও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গেজ রিডার এনামুল হক জানান, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় শহরের টি-বাঁধ পয়েন্টে পদ্মার পানির উচ্চতা ছিল ১৫ দশমিক ৩৮ মিটার। এর আগের দিন গত বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় রাজশাহীর একই পয়েন্টে পদ্মার পানির উচ্চতা ছিল ১৫ দশমিক ৪৯ মিটার। অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টায় পানি কমেছে ১১ সেন্টিমিটার। সে অনুযায়ী বর্তমানে রাজশাহী শহরের পয়েন্টে পদ্মার পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার ৪ দশমিক ১২ মিটার নিচে দিয়ে। শহরে পদ্মার পানির বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, পদ্মার পানি বাড়তে শুরু করে মূলত গত জুলাই মাসের শুরুর দিক থেকে। গত ৩০ জুন রাজশাহী শহরের বড়কুঠি পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ৯ দশমিক ৯৪ মিটার। পরদিন ১ জুলাই তা বেড়ে দাঁড়ায় পুরোপুরি ১০ মিটারে। ২ জুলাই পানির উচ্চতা ছিল ১০ দশমিক ৫০ মিটার। ৩ জুলাই ছিল ১১ দশমিক ০৫ মিটার। জুলাই মাস থেকে এভাবেই পর্যায়ক্রমে পদ্মার পানি বাড়তে-বাড়তে চলতি আগস্ট মাসের ১৫ তারিখ সকাল ছয়টায় পানির উচ্চতা গিয়ে দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ৯৫ মিটারে। পরে ১৭ আগস্ট সকাল ছয়টা থেকে পদ্মার পানির প্রবাহ কমতে শুরু করে।
গেজ রিডার এনামুল হক সোনালী সংবাদকে বলেন, উজানে বৃষ্টি হওয়ার কারণে গত জুলাই থেকে পদ্মার পানি বাড়তে শুরু করলেও এখন কমতে শুরু করেছে। তিনি জানান, গত ১৫ আগস্ট টি-বাঁধ পয়েন্টে পদ্মার পানির উচ্চতা ১৫ দশমিক ৯৫ মিটারে উঠে পরদিন ১৬ আগস্ট পর্যন্ত তা একই উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি কমতে শুরু করে ১৭ আগস্ট সকাল থেকে। ১৭ আগস্ট পানির উচ্চতা ছিল ১৫ দশমিক ৯৩ মিটার। অর্থাৎ পানি কমেছে ২ সেন্টিমিটার। পরদিন সকাল পর্যন্ত পানির উচ্চতা আরো ৩ সেন্টিমিটার কমে ১৮ তারিখ সকাল ৬টায় গিয়ে দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ৯০ মিটারে। ১২ ঘন্টার ব্যবধানে ৪ সেন্টিমিটার কমে ১৮ তারিখ সন্ধ্যা ৬টায় পানির উচ্চতা দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ৮৬ মিটারে।
এনামুল হক আরো জানান, গত ১৯ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টায় পানির উচ্চতা ছিল ১৫ দশমিক ৮২ মিটার। ২ সেন্টিমিটার কমে পরদিন ২০ আগস্ট সকাল ৬টায় পানির উচ্চতা পাওয়া যায় ১৫ দশমিক ৮০ মিটার। ফের ১২ ঘন্টার ব্যবধানে ৫ সেন্টিমিটার কমে ওইদিন সন্ধ্যায় পানির উচ্চতা গিয়ে দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ৭৫ মিটারে। ২১ আগস্ট সকাল ৬টায় টি-বাঁধ পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল ১৫ দশমিক ৭৩ মিটার। ওইদিন সন্ধ্যায় পানির উচ্চতা পাওয়া যায় ১৫ দশমিক ৬৮ মিটার। ২২ আগস্ট সকাল ৬টায় পানির উচ্চতা ছিল ১৫ দশমিক ৬৫ মিটার। আর ওইদিন সন্ধ্যায় পানির প্রবাহ পাওয়া যায় ১৫ দশমিক ৬০ মিটার। পরবর্তী ২৪ ঘন্টায় ১১ সেন্টিমিটার কমে গত ২৩ আগস্ট সন্ধ্যায় পানির উচ্চতা পাওয়া যায় ১৫ দশমিক ৪৯ মিটার। পরের ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে আবারো ১১ সেন্টিমিটার কমে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সবশেষ পদ্মার পানির উচ্চতা পাওয়া যায় ১৫ দশমিক ৩৮ মিটার।
বর্তমানে পানি কমতে থাকলেও উজানে বৃষ্টির হলে পানি আবারো বাড়তে পারে বলে জানিয়ে এনামুল হক বলেন, বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে এসে পদ্মার পানি সচরাচর বাড়তে থাকে। গত জুলাই মাসের শুরুর দিক থেকে পানি পর্যায়ক্রমে বাড়লেও আগস্টের মাঝামাঝিতে এতে সেটি নিম্নমুখি। তবে জলবায়ু যেভাবে পরিবর্তন হচ্ছে; তাতে নদীতে পানির প্রবাহ ও ভবিষ্যৎ কোন পরিস্থিতি নিয়ে পরিষ্কারভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।
এনিয়ে জানতে চাইলে পাউবোর বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুর সোনালী সংবাদকে বলেন, ‘পদ্মার পানি কয়েকদিন ধরে কমতে শুরু করলেও আগামী সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে আরেকদফা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’ পানি কমলে নদী ভাঙনের একটি আশঙ্কা তৈরি হয়।
সেটি মোকাবিলায় কোন প্রস্তুতি আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুর বলেন, ‘আমরা সতর্ক আছি। পানি কমার পরে শহরের নিম্নাঞ্চল বা নদীর যেকোন স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হলে আমরা সরেজমিন স্থান পরিদর্শন করে সেটি মোকাবিলায় সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এনিয়ে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।’
সোনালী/জেআর