ঢাকা | নভেম্বর ২৩, ২০২৪ - ২:১৩ অপরাহ্ন

রাজশাহীতে অবৈধ দখলে সড়ক-ফুটপাত: চলাচলে বিড়ম্বনা মানুষের

  • আপডেট: Thursday, August 24, 2023 - 7:00 pm

তৈয়বুর রহমান: রাজশাহী নগরীর ফুটপাতগুলো এখন অবৈধ দখল হয়ে গেছে। ফুটপাতের সাথে সড়কের অর্ধেকটা দখল করে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসা। ফুটপাত আর সড়কের অর্ধেকটা দখলে হয়ে যাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে মানুষের চলাচল। অথচ মানুষের নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন চলাচলের জন্য তৈরি হয়েছে ফুটপাত। আর নগরীকে যানজটমুক্ত রাখার জন্য সড়কগুলোকে করা হয়েছে প্রশস্ত। কিন্তু এরপরও কিছুতেই ফুটপাত নির্বিঘ্ন আর সড়কগুলো যানজটমুক্ত হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, ফুটপাত তৈরি হতে না হতেই তা দখল হয়ে যাচ্ছে। এতে বিড়ম্বনা ও বিপাকে পড়েছেন নগরীর সাধারণ মানুষ। নগরীর তালাইমারী হতে অক্ট্রয় মোড় পর্যন্ত ফুটপাত তৈরির কাজ চলছে। এরই মধ্যে ফুটপাতের ওপর তৈরি হতে শুরু হয়েছে দোকানঘর। গড়ে উঠছে অবৈধ স্থাপনা।

এদিকে সাহেববাজার এলাকার অধিকাংশ সড়ক ও ফুটপাতে পসরা সাজিয়ে বসছে বিভিন্ন পণ্যের দোকান। তার ওপরেই চলছে জমজমাট কেনাকাটা। এভাবে ফুটপাত আর সড়কের অর্ধেকটা দখল করে ফেন্দে বসেছে ব্যবসা। ক্রেতা-বিক্রেতা আর যানবাহনের দখলে চলে যাচ্ছে সমস্ত সড়ক। এতে চরম বিপাকে পড়েছে পথচারী সাধারণ মানুষ। ফুটপাতে চলতে গিয়ে অধিকাংশ পথচারীকে হোঁচট খেতে হচ্ছে অহরহ। বিশেষ করে নগরীর কয়েকটি পয়েন্টে ফুটপাত আর সড়ক দখল হয়ে যাওয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। যানজটের কারণে পথচারীদের সড়কে চলতে গিয়ে ধাক্কা খেতে হচ্ছে যখন-তখন।

নগরজুড়েই ফুটপাত আর সড়কের ওপর চলছে ফলমূল, জুতা-স্যান্ডেল, গেঞ্জি-লুঙ্গি, ভাজা-পোড়া, আলু-পটল, মাছ-মাংস, সবই কেনাবেচা চলছে । সড়ক আর ফুটপাতই এখন যেন ব্যবসার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এর সাথে মূল শহরের সড়কের ওপর প্রাইভেট গাড়ি পার্কিং এখন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সাহেব বাজারে ঢুকলেই দেখা যায় সড়কে গাড়ি পার্কিং করে কেউ মার্কেটিং করছেন নয় তো কারো না কারো সাথে দেখা করতে এসেছেন। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যায়, জিরোপয়েন্ট হতে মনিচত্বর পর্যন্ত প্রাইভেট কারের লম্বা পার্কিং। অথচ পাশেই ট্রাফিক দাঁড়িয়ে থেকেও দেখে না দেখার ভান করে চলে যায়।

এসব দেখে মনে হয় কারগুলো হয়তো বা কোন না কোন অফিসার, নয়তো প্রভাবশালী ব্যক্তির। সে কারণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকরী বাহিনীর লোকেরা কিছু বলতে সাহস পায় না। আর জিরো পয়েন্ট হতে গণকপাড়া পর্যন্ত ত্রিমুখী অটো আর রিকশার চাপে সড়কে নামলেই ধাক্কা খেতে হয়। সব মিলিয়ে শহরের অধিকাংশ সড়ক আর ফুটপাত এখন বেদখল হয়ে গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র থেকে জানা গেছে, সড়ক ও ফুটপাতে গড়ে উঠা অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে একটি চক্র নিয়মিত চাঁদা আদায় করে থাকে। এতেই তারা অবাধে অবৈধ ব্যবসা করে সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ বাড়িয়ে চলেছে। প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে তাদের কেউ ছুঁতেও পারে না।

নগরীর মনিচত্বর থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ফুটপাত নয় সড়কের অর্ধেকটা জুড়ে চলছে ফল-মূল,লুঙ্গি-গামছা, টুপি,কসমেটিকসহ সকল পণ্যের কেনাকাটা। মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজারে ঢুকতেই মোড় জুড়েই চলে শতশত মণ শাক-সবজি ও কাঁচামাল কেনাবেচা। তারা সারাদিন কেনাকাটায় সড়কটি দখলে রাখে আর সড়কের যে সামান্য বাকি থাকে তা দিয়েই অটো, রিকশা, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বাজার করতে আসা সাধারণ মানুষকে চলাচল করতে হয়। এতে এলাকাটি আবর্জনায় ভরে যায়। পথচারীদের চলাচল স্বাভাবিক রাখতে রাসিক আগে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালালেও এখন অভিযান না হওয়ায় এ সড়ক দিয়ে পথচারীদের চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে বৃষ্টি হলে তো কথাই নাই। নগরীর নিউমার্কেট-ওমর প্লাজা সড়কটি এখন ঝঞ্জাপূর্ণ সড়কে পরিণত হয়েছে। এ পথ দিয়েই নগরীর বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ মার্কেট করতে আসেন। অথচ এ সড়কটি একেবারে অপ্রশস্ত ও বিপদজনক সড়কে পরিণত হয়েছে।

এ সড়কটির এক পাশে ওমর প্লাজা অপর পাশে কাঁচা মালের দোকান। এ সব কাঁচা মালের ব্যবসায়ী এই নিউমার্কেটে ব্যবসা করতেন। আর দারুচিনি প্লাজার নির্মাণ কাজ শেষ হলে সেখানে পুনর্বাসিত করা হবে বলে কথা দেয়া হয়েছিল। এ কয় বছরে দারুচিনি প্লাজার নির্মাণ কাজ এখনও শেষ হয়নি। কবে দারুচিনি প্লাজার কাজ কবে শেষ হবে আর এই সব ব্যবসায়ীদের কবে নাগাদ পুনর্বাসিত তার কোন শেষ নাই। দারুজিনি প্লাজার কাজও শেষ হচ্ছে না তারা পুনর্বাসিতও হতে পারছে না। ফলে সড়কটিতে যানজট লেগেই থাকে। সন্ধ্যার সময় এই সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে প্রায় সময় ওমর প্লাজার নিরাপত্তা কর্মির হাতে কোন না কোন রিকশা অথবা অটোচালককে ধাক্কা খেতে হয়। সেখানে প্রতি দিনই নিউমার্কেট আর ওমর প্লাজা মার্কেটের ক্রেতা বিক্রেতার উপস্থিতিতে সৃষ্টি হয় চরম যানজট।

আর ভদ্রা রেলগেটের আশে-পাশে ফুটপাত দেখাই যাচ্ছে না। এখানে ফুটপাত ও রাস্তা দখলে নিয়ে চায়ের দোকান, ফলের দোকান, মুদিখানাসহ অনেক ধরনের ব্যবসা ফেঁদেছে। কারও বোঝার উপায় নেই যে এখানে ফুটপাত আছে। ব্যবসায়ীদের ভাব দেখে মনে হয়, তারা ফুটপাত ও সংলগ্ন রাস্তা দেখভালকারি প্রতিষ্ঠান থেকে এককালীন বরাদ্দ নিয়েছেন। ফুটপাত দখলে রেখে ছোট ছোট দোকান, নির্মাণসামগ্রী, ব্যবসাসামগ্রী আর হকারদের ঠেলে গন্তব্যে পৌঁছাতে প্রতিদিনই হয়রানিতে পরছেন পথচারীরা। আবার কোথাও কোথাও পাশের দোকানের পণ্যসামগ্রী রাখা হয় সামনের ফুটপাত দখল করেই।

ফুটপাতে ব্যবসা বা খাবার বিক্রয় তো আছেই। ফুটপাত দখল করে ব্যবসা যেন বেড়েই চলেছে। ফুটপাত দখলমুক্তে উদাসীন রয়েছে সিটি করপোরেশন ও প্রশাসন। নগরীর বেশির ভাগ ফুটপাত ধরে হাঁটার উপায় নেই। এখানকার রাস্তার দুই পাশের ফুটপাতে গড়ে ওঠেছে অসংখ্য দোকানপাট-স্থাপনা। ফুটপাত দখলে থাকায় পথচারীরা বাধ্য হন রাস্তায় নেমে চলতে। এর সাথে যত্রতত্র গাড়ি ও রিকশা পার্কিং তো রয়েছেই।

নাম না লেখার শর্তে ফুটপাত ব্যবসায়ীরা বলছেন, পুলিশ ও নেতাদের ম্যানেজ করেই ব্যবসা চালাচ্ছেন তারা। ভদ্রা রেলগেট সড়ক থেকে শুরু করে লক্ষ্মীপুর হয়ে কোর্ট, স্বচ্ছ টাওয়ার থেকে সাহেববাজার হয়ে কোর্ট, রানীবাজার থেকে মেডিকেল হয়ে লক্ষ্মীপুর, লক্ষ্মীপুর থেকে রাজপাড়া থানার বড় একটা অংশই চায়ের দোকান, ফলের, খেলনার, মেট্রেস, জামা-কাপড়ের, গাড়ির ভাঙড়ি, ভাতের হোটেল, ফার্নিচার পণ্য ব্যবসায়ীদের দখলে। বিশেষ করে রাজশাহী-নওগাঁ সড়কের রেলগেটে বিভিন্ন গাড়ি পার্কিং এর জন্য ফুটপাত আছে বোঝাই যায় না। এমনকি দিনের বেলা হাঁটা-চলাফেরাতো দূরের কথা গাড়ি চালিয়ে যেতেও হিমশিম খেতে হয়।

শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বর থেকে ঘোড়া চত্বর পর্যন্ত রাস্তার এক পাশের প্রায় চার ফুট প্রস্থের যে ফুটপাত আছে, তার বিশাল একটা অংশ নতুন-পুরাতন ফার্নিচার ব্যবসায়ীদের দখলে। ফার্নিচারের মালামাল ফুটপাতজুড়েই রাখা হয়েছে। নগরীর প্রায় মোড়ের ফুটপাত ব্যবসায়ীদের দখলে রয়েছে। গাড়ির ইঞ্জিন, ওয়ার্কশপ, শোরুমের মালামালসহ যে যেভাবে পেরেছে দখলে রেখেছে। যে কারণে নগরীর প্রতিটি ফুটপাত দিয়ে পথচারিদের হাঁটা, চলাফেরা করার কোন সুযোগ নাই। এতে একদিকে গ্রিন-সিটি, সিল্কসিটি ও হেলদি সিটির সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং অন্যদিকে রাস্তা কমে যাওয়ায় যানজোট ও চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে।

নগরীর ঝুকিপূর্ণ সড়ক হচ্ছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হতে লক্ষ্মীপুর ঝাউতলা মোড় সড়কটি। যানজট আর ফুটপাত বেদখল হওয়া সড়কের মধ্যে এই সড়কটি অন্যতম। এ সড়কের দু’ধারে রয়েছে রাজশাহী সরকারি হাসপাতালসহ অসংখ্য বেসরকারি হাসপাতাল। সকাল হলেই এই সড়ক দিয়ে শুরু হয় শহর আর শহরের বাইরের অসংখ্য মানুষের চলাচল। একেতো অসংখ্য মানুষের চাপ তার ওপর সড়কের দু’ধারে গড়ে উঠা ফল-মূলসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকানের চাপ এই দু’য়ের চাপে চাপা পড়ে চলাচলকারী মানুষের ভিড়ে-চ্যাপ্ট অবস্থা।

এছাড়াও রেলগেট হতে রাজশাহী জেলা স্টেডিয়াম, রেলস্টেশন-বাস টার্মিনাল, বর্নালী মোড় এবং হড়গ্রাম অক্ট্রয় মোড় হতে কোর্ট স্টেশন পর্যন্ত সড়কটির ফুটপাত দখল এবং সড়কে অধিকাংশ সময় অটো-রিকশার দখলে থাকায় মানুষের চলাচল বিপদজনক হয়ে উঠেছে। এ সব সড়ক আর ফুটপাত ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের চলাচল।

এতে অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় নিত্যনতুন প্রশস্ত সড়ক হচ্ছে। ঐসব সড়ক ও ফুটপাতের ওপর গড়ে উঠেছে ইট-বালু ও খোয়ার জমজমাট ব্যবসা। ইতিপূর্বে এর বিরুদ্ধে রাসিকের অভিযান চালানো হলেও বেশ কিছু দিন ধরে তা বন্ধ রয়েছে। ফুটপাত দখলে কোন বাধা না থাকায় তার ওপরে অবাধে চলছে রমরমা বালু-ইটের ব্যবসা। অপর দিকে নগরীর অধিকাংশ ছোট ছোট যানবাহনে সড়কের ওপর যাত্রীদের উঠা-নামা চলছে অহরহ। কেউ হোন্ডা, কেউ ব্যক্তিগত কার আবার অনেক চালক অটো রাস্তার ওপর রেখে সড়কের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রকৌশলী বলেন, ফুটপাত, ড্রেন, রাস্তা এই তিনের সমন্বয়েই পূর্ণাঙ্গ সড়ক ব্যবস্থা অথচ আমাদের নগরে ফুটপাত উপেক্ষিত। যৎসামান্য ফুটপাত যা আছে তার শতভাগই অবৈধ দখলে আছে। এ বিষয়ে মহানগর পুলিশ কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, মূলত নগরীর কোন কিছুতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে সিটি করপোরেশন দেখভাল করে থাকে। সিটি করপোরেশন সহযোহিতা চাইলে অবশ্যই সহযোহিতা করা হবে। এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এ বি এম শরীফুদ্দিন বলেন, উচ্ছেদ অভিযান চলমান রয়েছে। তবে বর্তমানে ম্যাজিট্রেট না থাকায় উচ্ছেদ অভিযান আপাতত বন্ধ রয়েছে। খুব শীঘ্রই আবারও অভিযান চালানো হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সোনালী/জেআর