ঢাকা | নভেম্বর ২৫, ২০২৪ - ২:৪২ অপরাহ্ন

তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, পানিবন্দি হাজারো পরিবার

  • আপডেট: Saturday, July 15, 2023 - 8:00 am

অনলাইন ডেস্ক: লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লালমনিরহাটে ৮ হাজার পরিবার, কুড়িগ্রামে ১০ হাজার মানুষ, নীলফামারীতে ৩ হাজারের বেশি পরিবার।

রংপুরে তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঘরে হাঁটুসমান পানি ওঠায় রান্না করতে পারছে না এসব পরিবার। চরম দুর্ভোগে পড়েছে পানিবন্দি মানুষ।

লালমনিরহাট : উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল সকাল ৬টায় ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, তিস্তার পানি দোয়ানি ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ও ধরলা নদীপাড়ের প্রায় ৮ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ডুবে গেছে রাস্তাঘাট বাড়িঘর। হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের দোয়ানি গ্রামের আক্কাস আলী বলেন, ঘরে হাঁটু পর্যন্ত পানি। রান্নাবান্না করা যাচ্ছে না। শুকনো খাবার খেয়ে আছি। খুব কষ্টে আছি।

গড্ডিমারীর ইউপি সদস্য জাকির হোসেন বলেন, গড্ডিমারী ইউনিয়নে প্রায় ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিস্তাপাড়ের অনেক বাসিন্দা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। দহগ্রাম ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, দহগ্রামের গুচ্ছগ্রাম যাওয়ার রাস্তাটি ভেঙে গিয়ে এলাকায় ১ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, ভারত থেকে প্রচুর পানি ছেড়ে দেওয়ায় তিস্তা ও ধরলার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

রংপুর : তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধিতে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী ইউনিয়নের চর বাগডোহরা, মিনারবাজার, কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনার চর, মটুকপুর, চিলাখাল, লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের ইচলী, শংকরদহ, বাগেরহাট, জয়রামওঝা, গজঘণ্টা ইউনিয়নের রাজবল্লভ, চর ছালাপাক, মর্ণেয়া ইউনিয়নের নরসিংহ, চর মর্ণেয়া, কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ও টেপামধুপুর ইউনিয়নের হরিচরণ শর্মা, আজমখাঁ, হয়বত খাঁ, বিশ্বনাথের চর, চরগনাই, ঢুষমারা, চর রাজিব, গোপিঙ্গা, গদাই, পাঞ্জরভাঙ্গা, তালুক শাহবাজপুর, পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের গাবুড়া, শিবদেব, রামসিং, জুয়ান, হাগুরিয়া হাশিম এলাকায় মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, উজানের ঢলে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমারসহ রংপুর বিভাগের সব নদনদীর পানি বেড়েছে। গঙ্গাচড়া লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল হাদী বলেন, তার ইউনিয়নে প্রায় ২ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিস্তার তীব্র স্রোতে ২২টি বাড়ি ভেঙে গেছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে সব নদনদীর পানি হুহু করে বাড়ছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, দুধকুমার নদের পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার, ধরলা নদীর শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। নদনদীর তীরবর্তী শতাধিক চর ও দ্বীপচরের প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ভগবতীপুর গ্রামের গৃহবধূ নার্গিস জানান, চার দিন থেকে পানিবন্দি হয়ে আছি। কেউ খোঁজখবর নিচ্ছে না। ঘরের চৌকি পর্যন্ত বন্যার পানি উঠেছে। নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া ইউনিয়নের চরকাফনা গ্রামের নুর বখত জানান, পানি এত জোরে বাড়ছে, কল্পনা করতে পারিনি।

নীলফামারী : তিস্তা নদীর পানি বাড়ায় জেলার ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী, গয়াবাড়ি, খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের তিস্তাবেষ্টিত ১৫টি চর গ্রামের তিন সহস্রাধিক পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।

ডিমলা উপজেলার খালিশাচাপানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সহিদুজ্জামান সরকার বলেন, ‘রাতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ইউনিয়নের ছোটখাতা ও বাইশপুকুর গ্রামের প্রায় ১ হাজার ২০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান বলেন, পূর্বছাতনাই, ঝাড়সিংহেশ্বর গ্রামের ১২০০ পরিবারের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে।

বগুড়া : বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ী, কাজলা, কর্ণিবাড়ী, বোহাইল ইউনিয়নের সম্পূর্ণ এবং হাটশেরপুর, সদর ও চন্দনবাইশা ইউনিয়নের ১২২টি চরের হাজারো পরিবার পানিবন্দি হতে শুরু করেছে।

সোনালী/জেআর