আগামীকাল পবিত্র ঈদুল আজহা
অনলাইন ডেস্ক: ত্যাগের মহিমায় চিরভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা বাংলাদেশে উদযাপিত হবে কাল বৃহস্পতিবার। ঈদুল আজহা ইসলাম ধর্মের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব।
উদযাপিত হয় হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুসারে জিলহজ মাসের ১০ তারিখে। ধর্মীয় বিধান অনুসারে এ ঈদে পশু কোরবানি করা হয় বলে সবার কাছে ‘কোরবানির ঈদ’ নামেই পরিচিত।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদসহ রাজনৈতিক নেতারা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ঈদুল আজহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে সকাল সাড়ে ৭টায়।
এখানে সামিয়ানার নিচে একসঙ্গে ৩৫ হাজার মুসল্লি ঈদের জামাতে অংশ নিতে পারবেন। তবে আবহাওয়া বৈরী থাকলে ঈদগাহের বদলে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
সেক্ষেত্রে আধা ঘণ্টা পিছিয়ে সকাল ৮টায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় ঈদগাহের পাশাপাশি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এবারও পাঁচটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। বায়তুল মোকাররমে প্রথম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টায়। এর পর পর্যায়ক্রমে সকাল ৮টা, ৯টা, ১০টা ও বেলা পৌনে ১১টায় হবে চারটি জামাত।
গরু ও ছাগল কেনা এবং কোরবানির মাধ্যমে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য অনেকেই গ্রামের বাড়িতে গেছেন। এ ঈদে কোরবানির পশু কেনা, তার যত্ন-পরিচর্যাতেই ঈদের মূল প্রস্তুতি ও আনন্দ।
সারা দেশে জমে উঠেছে কোরবানির গরু-ছগলের হাট। রাজধানীর বেশির ভাগ কোরবানিদাতা পছন্দের পশুটি কিনে ফেলেছেন। অনেকে সুবিধামতো দামে পছন্দের পশুটি কেনার জন্য বিভিন্ন হাটে যাচ্ছেন।
আজ পশু ব্যবসায়ীদের চাঁদরাত। ইসলামের পরিভাষায় কোরবানি হলো একমাত্র আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে তারই নামে নির্দিষ্ট পশুকে জবাই করা। মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে জবাই করা পশুর গোশত বা রক্ত কিছুই পৌঁছায় না, কেবল নিয়ত ছাড়া।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে ‘এগুলোর গোশত আমার কাছে পৌঁছায় না। কিন্তু তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে যায়। ’ ঈদুল আজহার অন্যতম শিক্ষা হচ্ছে, আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় মনের পশু অর্থাৎ ‘লোভ’ ও ‘কুপ্রবৃত্তি’কে পরিত্যাগ করা। তাই এ ঈদে ধনী ও সামর্থ্যবানরা পশু কোরবানি করলেও গরিবরাও সে আনন্দে সমান অংশিদার। কারণ ইসলামের শরিয়তি বিধান মোতাবেক কোরবানির গোস্ত সমান তিন ভাগে ভাগ করে একভাগ নিজের জন্য রাখতে পারেন কোরবানিদাতারা।
অপর দুভাগের একভাগ বিলিয়ে দেন গরিব-দুঃখীদের মধ্যে। অপর একভাগ বিতরণ করেন আত্মীয়-পরিজনের কাছে। এভাবেই নিজের কেনা পশুর গোস্ত বিতরণের মাধ্যমে লোভকে পরিত্যাগ করে আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।
আল্লাহতায়ালার প্রতি অপার আনুগত্য এবং তারই রাহে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের এক ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণে মুসলিম বিশ্বে ঈদুল আজহা উদ্যাপিত হয়ে আসছে। মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিমের (আ.) আত্মত্যাগ ও অনুপম আদর্শের প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে কোরবানির রেওয়াজ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য দুম্বা ও উট কোরবানি করার পরও প্রিয়বস্তু কোরবানি করার নির্দেশ পেয়ে হজরত ইব্রাহিম (আ.) তার প্রাণপ্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইলকেই (আ.) কোরবানি করতে উদ্যত হন। কিন্তু মহামহিম আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অপার কৃপায় হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়।
আল্লাহতালা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর আত্মোৎসর্গের এ নিয়তকে কবুল করে নেন এবং হজরত জিবরাইল (আ.)-কে দিয়ে বেহেশত থেকে দুম্বা পাঠিয়ে দেন। এ অনন্য ঘটনার স্মরণে প্রচলিত হয় কোরবানি। সে ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে মুসলিম জাতি জিলহজ মাসের ১০ তারিখে পশু কোরবানি করে থাকেন।
দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানালেন প্রধানমন্ত্রী : দেশবাসীকে কোরবানির ঈদের শুভেচ্ছা জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল এক ভিডিওবার্তায় সরকারপ্রধান এ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বলে তাঁর উপপ্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার জানান।
বৃহস্পতিবার ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। ভিডিওবার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘বছর ঘুরে আবার আমাদের মাঝে এসেছে পবিত্র ঈদুল আজহা, কোরবানির ঈদ। কোরবানি অর্থ ত্যাগ। ক্ষুদ্রতা, নিচুতা, অহংকার, স্বার্থপরতা ত্যাগের মাধ্যমে কোরবানির ঈদ সার্থক হয়ে ওঠে। ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হয়ে আমরা মানবকল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত করি।
সৌহার্দ্য এবং ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ঈদুল আজহার আনন্দ ভাগাভাগি করে নিই। ’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘সবাই ভালো থাকুন, নিরাপদ থাকুন, সুস্থ থাকুন। খোদা হাফেজ। ঈদ মুবারক। ’
সোনালী/জেআর