২০ বছর পর মালদ্বীপকে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ
অনলাইন ডেস্ক: রেফারির শেষ বাঁশি বেজে উঠল। সব চাপ নিমেষেই উধাও। বাংলাদেশের ফুটবলাররা ক্লান্তির শেষ সীমায় পৌঁছেও সিনা টান টান করে লড়াইয়ের ময়দানে দাঁড়িয়েছিলেন।
মালদ্বীপের ফুটবলারদের প্রতিটা পদক্ষেপ অনুসরণ করছিলেন পায়ে পায়ে।
ম্যাচের শেষ মুহূর্তে আর কোনো ভুলের নজরানা পেশ করতে রাজি ছিলেন না তারা। ম্যাচটা শেষ হতেই ক্রমাগত বাড়তে থাকা চাপ শেষ হয়ে গেল।
ব্যাঘ্র গর্জনে কেঁপে উঠল বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামের চারপাশ। বঙ্গবন্ধু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মালদ্বীপকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সেমিতে খেলার আশা জোরাল করল বাংলাদেশ।
হাভিয়ের কাবরেরার ‘আশায় বাঁধিনু ঘর’ নীতিটা অবশেষে কাজে এলো। বঙ্গবন্ধু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বড় স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা করে বাংলাদেশ।
প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত ফুটবল খেললেও শেষদিকের ভুলে লেবাননের কাছে হেরে যান জামাল ভূঁইয়ারা। ভুল করেছিলেন তারিক।
ভুল করেছিলেন ফাহিম। সে ভুলের কাফফারা গতকাল আদায়ও করে দিলেন দুজন। অসাধারণ খেলেছেন ফাহিম। তারিক কাজী আন্তর্জাতিক ফুটবলে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় গোল করলেন। দলকে এনে দিলেন জয়ের দারুণ এক উপলক্ষ।
যে জয় মুছে দিয়েছে ক্লান্তির সব চিহ্ন। যে জয় বাংলাদেশের কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমীর মনে আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে দিয়েছে।
ম্যাচটা শেষ হতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন কোচ হাভিয়ের কাবরেরা, অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া, তপু বর্মণরা। মালদ্বীপের সঙ্গে হারলেই যে শেষ হয়ে যেত সাফ জয়ের স্বপ্ন। এখনো কঠিন বাধা আছে। তবে সাফের মাঠে ২০ বছর পর মালদ্বীপকে হারানোর তৃপ্তি সত্যিই অন্যরকম।
এ জয় ভাষায় বর্ণনা করার উপায় নেই। যেমনটা পারেননি বাংলাদেশের ফুটবলাররা। কেবল চোখ আর মুখ দেখেই বোঝা গেছে তাদের আনন্দের মাত্রা। সাফের লড়াইয়ে মালদ্বীপকে শেষবার বাংলাদেশ হারিয়েছে ২০০৩ সালে, গ্রুপ পর্বে। ফাইনালে দুই দল মুখোমুখি হলে বাংলাদেশ ১-১ গোলে ড্রয়ের পর টাইব্রেকারে জয় পায়। সেই প্রথম।
সেই শেষ সাফ জয় বাংলাদেশের। এরপর ২০০৫ সালে ফাইনাল খেলে। পরের ইতিহাস কেবলই বেদনার। বারবারই স্বপ্নভঙ্গ হয় বাংলাদেশের ফুটবলের। দেশের ফুটবলপ্রেমী মানুষের। গতকালও কী সেই ভয়টা ছিল না! বিশেষ করে ম্যাচের ১৭ মিনিটেই মালদ্বীপের ফরোয়ার্ড হামজা মোহাম্মদের গোলের পর! বাংলাদেশ কিছুক্ষণের জন্য বিমূঢ়ই হয়ে পড়েছিল।
তবে তপু বর্মণ, জামাল ভূঁইয়ারা মিলে দলটাকে পুনরায় উজ্জীবীত করে তোলেন। ম্যাচের পর মিক্সড জোনে দাঁড়িয়ে রাকিব বললেন, ‘আমরা পিছিয়ে পড়ার পর সিনিয়ররা আমাদের উৎসাহ দেন। ম্যাচটা জিততে পারব, এমন প্রেরণা জোগান। ’ এই রাকিবই ম্যাচের ৪২ মিনিটে দারুণ এক গোল করে বাংলাদেশকে সমতায় ফেরান। বিশ্বনাথের ছোট থ্রো থেকে বল পেয়ে ডি বক্সে ক্রস দেন সোহেল রানা। ডি বক্সের ভিতরে হেড করেন তপু। এবার বল পেয়ে হেডে বল জালে জড়ান রাকিব। দ্বিতীয়ার্ধ্বে আরও দুটো গোল করে বাংলাদেশ।
৬৭ মিনিটে ইব্রাহিমের কর্নার কিকের পর হেড করেন তপু। ছোট ডি বক্সে দাঁড়িয়ে পর পর দুবার শট নেন তারিক কাজী। দুবারই গোললাইন থেকে বলটা ফিরিয়ে দেন মালদ্বীপের ফুটবলার। তৃতীয়বার হেডে বল জালে জড়ান বসুন্ধরা কিংসের এই ডিফেন্ডার। তৃতীয় গোলটা করেন বাংলাদেশের ফুটবলে তরুণ তারকা মোরসালিন।
ম্যাচের ৯০ মিনিটে ডান দিক থেকে বাংলাদেশ আক্রমণে যায়। বিশ্বনাথ ঘোষ অনেকটা পথ এগিয়ে বল দেন মোরসালিনকে। ডান দিক থেকে ডি বক্সে ঢুকে ডান পায়ের শটে বল জালে জড়ান আন্তর্জাতিক ফুটবলে তৃতীয় ম্যাচ খেলতে নামা মোরসালিন। ম্যাচের ৬৪ মিনিটে জামালের পরিবর্তে খেলতে নামেন বসুন্ধরা কিংসের এই তরুণ তারকা।
মালদ্বীপকে হারিয়ে সেমিফাইনাল খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখলেও এখনো শঙ্কা কাটেনি বাংলাদেশের। পরের ম্যাচে (২৮ জুন) ভুটানকে হারাতে হবে বেশ বড় ব্যবধানে। তাছাড়া লেবানন ও মালদ্বীপের ম্যাচের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে।
সোনালী/জেআর