রাজশাহীর বাজারে সুমিষ্ট গোপালভোগ
|মণপ্রতি বিক্রি ১,৬০০ থেকে ২,২০০ টাকায়| |শুক্রবার থেকে বেড়েছে সরবরাহ| |এবার দেড় হাজার কোটি টাকার বাণিজ্যের আশা|
জগদীশ রবিদাস: বৈশাখকে বিদায় জানিয়ে অভিষেক ঘটেছে ফল উৎসবের মাস জ্যৈষ্ঠের। শুরু হয়েছে আমের ভরা মৌসুম। রাজশাহী অঞ্চল ছাড়াও প্রতিবেশী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁজুড়ে আছে আমের বিস্তৃতি। আমের বিদ্যমান কয়েকটি উন্নতমানের জাতের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘গোপালভোগ’। জাত আম খ্যাত সেই গোপালভোগ আসতে শুরু করেছে রাজশাহীর বাজারে।
বাজারে গুটি আমি সবার আগে এলেও মূলত সুমিষ্ট গোপালভোগ আমের জন্যই অপেক্ষায় থাকেন রাজশাহী অঞ্চলের চাষি, ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা। এই আম দিয়েই আমের রাজ্যে আম কেন্দ্রীক ব্যবসা-বাণিজ্যগুলো জমে উঠে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য আম বাজারে আসতে শুরু করে। বর্তমানে রাজশাহীর বাজারে সদ্য আগত গোপালভোগ মানভেদে মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১,৬০০ থেকে ২,২০০ টাকায়।
রাজশাহী জেলায় প্রকাশিত ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, গুটি আমের পর গোপালভোগ ১৫ মে, লক্ষ্মণভোগ বা লখনা ও রানীপসন্দ ২০ মে এবং হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাতি ২৫ মে থেকে বাজারজাত করা যাবে। বাকি অন্যান্য জাতের আম এর পরপর বাজারে আসবে। সেই হিসাব অনুযায়ী গত সোমবার দুপুরে পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজারে গিয়ে গুটি আমের সঙ্গে প্রথমবারের মতো রসালো গোপালভোগ আম দেখা গেছে।
ইতিমধ্যেই রাজশাহীর বাজারে গোপালভোগ আম নামার খবর পেয়েছেন অনলাইনে আম সরবরাহকারীরাও। তাঁরা আমের গাড়ির সঙ্গে ভিডিও কল করে আম পাকা নিয়ে ক্রেতাদের বিভ্রান্তি মেটানোর চেষ্টা করছেন। ১৫ মে প্রথম গোপালভোগ আম নামানো শুরু হলেও গত বুধবার পর্যন্ত বাজারে এ আমের সরবরাহ তেমন বাড়েনি।
টক-মিষ্টি স্বাদের গুটি আমের চাহিদা কম থাকায় বেঁচাকেনাতেও ছিল ঢিলেঢালা ভাব। তবে গতকাল শুক্রবারের বাজার ধরতে বৃহস্পতিবার থেকে রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকাতেই গোপালভোগ আম নামানো শুরু হয়েছে। এতে শুক্রবার থেকে বাজারে গোপালভোগের সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। শনিবারও বিভিন্ন এলাকায় নামানো হচ্ছে রসালো এই আম।
রাজশাহী জেলার সবচেয়ে বড় আমের হাট বসে পুঠিয়ার বানেশ্বরে। শুক্রবার এই হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতি মন্দ ছিল না! আম বিক্রেতাদের হাঁকডাকে জমে উঠতে শুরু করেছে কেনাবেচা। সরেজমিনে দেখা যায়, প্লাস্টিকের ক্যারেট বোঝাই করে জেলার বিভিন্ন এলাকার বাগান থেকে গোপালভোগ আম আসতে শুরু করেছে।
একটু দূরের বাগানগুলো থেকে ভটভটি, নসিমন ও ব্যাটারিচালিত রিকশাভ্যান; এ ধরনের পরিবহণে করে হাটে আম নিয়ে আসছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। আমের আকার বিবেচনায় তারা নানা রকমের দাম হাঁকছেন। হাট ঘুরে দেখা গেছে, গুটি আমের উপস্থিতি এখনও বেশি। এর সঙ্গে আসতে শুরু করেছে গোপালভোগ আম।
হাটের আম ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক জানান, বেঁধে দেওয়া সময়ের প্রথম দিনেই তিনি প্রায় ১০ মণ গোপালভোগ আম নামিয়েছেন। মণপ্রতি সেই আম তিনি বিক্রি করছেন ২,০০০ থেকে ২,২০০ টাকা পর্যন্ত।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আরেক আম ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম জানালেন, বানেশ্বরে হাটে এদিন তিনি প্রায় ১৪-১৫ মণ গোপালভোগ আম এনেছেন। কয়েকদিন আগে থেকেই তার নিজস্ব বাগানের আম পাকা শুরু হয়েছে। ১৫ মণ গোপালভোগ আম তিনি ১,৪০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন।
রাজকুমার সাহা নামে আরেক জন খুচরা আম ব্যবসায়ী বলেন, জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী আম নামানো হচ্ছে। শুরুতে গুটি জাতের আমের দাম কিছুটা কম থাকে। এরপর পর্যায়ক্রমে গোপালভোগসহ অন্যান্য রসালো আম বাজারে আসতে শুরু করলে দাম মানভেদে বাড়তে শুরু করে।
অতএব, মৌসুমের সময় যতোটা বাড়বে, তার সঙ্গে তাল দিয়ে বিভিন্ন আমের দামও বাড়তে শুরু করবে। তিনি আরও জানান, বর্তমানে গুটি আম বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা কেজি দরে। আর গোপালভোগ আম কোথাও ৪০-৪৫ আবার কোথাও ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মোজদার হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, রাজশাহীতে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে গোপালভোগ আম চাষ হয়ে থাকে। এবার সামগ্রীক আমের বাগান বেড়েছে ১ হাজার ৬৩ হেক্টর। এ বছর হেক্টর প্রতি ১৩ দশমিক ২০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
তিনি জানান, লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে জেলায় এ বছর মোট ২ লাখ ৫৮ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে। সবমিলিয়ে এবার রাজশাহীজুড়ে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্য হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ বছরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘ম্যাংগো ক্যালেন্ডার’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে করে বাজারে ভোক্তাদের জন্য নিরাপদ, বিষমুক্ত ও পরিপক্ব আম নিশ্চিত করা যাবে।
সোনালী/জেআর