ঢাকা | নভেম্বর ২৫, ২০২৪ - ১:২৪ অপরাহ্ন

রাবি শিক্ষক তাহের হত্যা: প্রাণভিক্ষা চেয়েছেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি

  • আপডেট: Monday, May 15, 2023 - 6:00 pm

অনলাইন ডেস্ক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি প্রাণভিক্ষা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছেন। তবে আবেদনের পর আরও কিছু আইনি প্রক্রিয়া বাকি থাকায় এই ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

গত ২ মার্চ এই দুজনের ফাঁসি এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করেন সর্বোচ্চ আদালত। তবে তার সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এখনও কারাগারে পৌঁছায়নি। কাগজপত্র পৌঁছানোর পর নিম্ন আদালত থেকেও একটি নির্দেশনা আসবে।

এরপর প্রাণ ভিক্ষার আবেদনের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রাজশাহীর কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ। নিম্ন আদালতে দুজনের মৃত্যুদণ্ডের যে রায় এসেছিল তাই বহাল থাকে আপিলে, খারিজ হয় রিভিউ আবেদনও। তাই রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা ছাড়া আর কোনো পথই খোলা ছিল না তাদের।

তবে এরপরও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় দণ্ডিত এই দুজনের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে গত ৭ মে ফের রিট আবেদন করেন তাদের স্বজনরা। যদিও উত্থাপিত হয়নি মর্মে পরবর্তীতে সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন বিচারপতি মো. জাফর আহমেদ ও মো. বশির উল্ল্যার হাইকোর্ট বেঞ্চ। হাইকোর্ট রিট আবেদনটি করেছিলেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের স্ত্রী ইসরাত রহমান এবং ফাঁসির দণ্ড পাওয়া জাহাঙ্গীর আলমের ভাই মিজানুর রহমান।

আবেদনে বলা হয়, এ মামলায় আসামিদের গ্রেফতার ও জবানবন্দি গ্রহণে সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার ব্যত্যয় হয়েছে। তবে আপিল বিভাগ ফাঁসি বহাল রাখার পরও রাবি ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া দুই আসামির হাইকোর্টে রিট আদালত অবমাননার সমান বলে মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

এই রিট সম্পর্কে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, আপিল বিভাগ ফাঁসি বহাল রাখার পরও তাদের হাইকোর্টে রিট আদালতকে একরকম অসম্মান করার সামিল। কারণ এখন আর তাদের কিছুই করণীয় নেই। শুধু তারা এতটুকু করতে পারেন যে, মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে দোষ স্বীকার করে প্রাণভিক্ষা চাওয়া।

এদিকে, প্রাণভিক্ষার আবেদনের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতে ফাঁসির আদেশ বহাল থাকার পরপরই কারাবিধি অনুযায়ী এই আসামির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তারা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে চান কিনা। এরপর তারা এই ঘটনায় নিজেদের দোষ স্বীকার প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন। পরে তা নিয়ম মেনে পাঠিয়েও দেওয়া হয়। তবে উচ্চ আদালতে বহাল থাকা ফাঁসির আদেশের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ডাকযোগে কারাগারে পাঠানো হয়।

সেই কাগজপত্র পাওয়ার পর নিম্ন আদালত (যেই আদালতে প্রথম রায় হয়েছিল) থেকেও এই ব্যাপারে পরবর্তী করণীয়র কথা উল্লেখ করে একটি নির্দেশনা কারাগারে আসে। সেটি দেখে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে আবারও বিষয়টি জানাতে হয় যে, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন এবং তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ছাড়া ফাঁসি কার্যকরের আর কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল জলিল বলেন, সাধারণত কোনো মামলায় সর্বোচ্চ আদালত থেকে ফাঁসির আদেশ বহাল রাখার পরপরই প্রাণভিক্ষার আবেদনটি আসামিদের সম্মতিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ড. এস তাহের হত্যা মামলায়ও তার ব্যত্যয় হয়নি। কারাবিধি অনুযায়ী আবেদন ওই সময়ই (লিভ টু আপিল খারিজের পর) চলে গেছে। এরপর তারা (দুই আসামি) আবারও উচ্চ আদালতে রিট করেছেন বলে জানতে পেরেছি।

আর আবেদনের পর পরবর্তী এই প্রক্রিয়াগুলোও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে সরকারকে জানাতে হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সমস্ত প্রক্রিয়া শেষে যখন নিম্ন আদালত থেকে নির্দেশনা আসে যে, আর কোনো আইনি প্রক্রিয়া অবশিষ্ট নেই। তখন তা আবারও রাষ্ট্রপতি বরাবর জানাতে হয়। এরপর প্রাণভিক্ষার আবেদনের ব্যাপারে সদয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত চাওয়া হয়। আর পুরো বিষয়টিই একটি প্রক্রিয়া।

এখন আদালত থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এলে সেই প্রক্রিয়াগুলো কারাবিধি অনুযায়ী প্রতিপালন করা হবে বলেও উল্লেখ করেন রাজশাহী কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামি বর্তমানে রাজশাহী কারাগারে আটক আছেন।

গত ২ মার্চ প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বধীন আপিল বিভাগের আট বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ওই দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন। এতে আসামিদের দণ্ড কার্যকরে ‘রাষ্ট্রপতির ক্ষমা ব্যতীত’ আর কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন অ্যার্টনি জেনারেল। এখন রাষ্ট্রপতি যদি তাদের প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ করে দেন তবে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর যেকোনো দিন হতে পারে।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি এর শুনানি শেষে আদেশের জন্য গত ২ মার্চ দিন ধার্য করেন আপিল বেঞ্চ। এর আগে ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ। ৩ ফেব্রুয়ারি তার ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহী নগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয় পুলিশ। এ হত্যা মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেন।

দণ্ডিতরা হলেন—একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, নিহত অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম, জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের সমন্ধি আব্দুস সালাম। খালাসপ্রাপ্ত চার্জশিটভুক্ত দুই আসামি হলেন—রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী।

২০০৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন। শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল এবং অন্য দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন করেন হাইকোর্ট। ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রাখা দুই আসামি হলেন—একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম।

ফাঁসির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া দুই আসামি হলেন—মো. জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের সমন্ধি আব্দুস সালাম। এরপর আসামিরা আপিল বিভাগে আপিল করেন। পাশাপাশি যাবজ্জীবন দণ্ডিত দুই আসামির দণ্ড বৃদ্ধি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি শেষে গত বছরের ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায় বহাল রাখেন। সোনালী/জেআর

সোনালী/জেআর