অন্তঃসত্ত্বার পেটে ‘লাথি মেরে’ আ.লীগ নেতা বললেন, একটু শাসন করেছি
অনলাইন ডেস্ক: গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি বাড়িতে যাওয়ার জন্য রাস্তা প্রয়োজন। সেই পথটি অন্য একজনের বাবার কবরের ওপর দিয়ে নিতে মধ্যস্থতা করছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন ফরাজী। এতে জমির মালিক রাজি না হওয়ায় ক্ষেপে যান তিনি।
এক পর্যায়ে রাস্তা নির্মাণে বাধা দিলে জায়গার মালিক কাওসার মোকামীকে মারধর করেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গরা। তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে যান তাঁর বোন অন্তঃসত্ত্বা নাসরিন আক্তার। এ সময় তাঁকেও মারধর করলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাটিতে পড়ে যান। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মারধরের সময় একটি লাথি তাঁর পেটে লাগে বলে দাবি করেছে পরিবার।
মঙ্গলবার উপজেলার রাজাবাড়ী ইউনিয়নের নালিয়াটেকি গ্রামে এ ঘটনা ঘটলেও আজ রোববার কামাল ফরাজীকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় বিষয়টি আলোচনায় আসে।
গুরুতর অবস্থায় গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে ভর্তি থাকা অন্তঃসত্ত্বা নাসরিনের অবস্থা ভালো নয় বলে দাবি করেছেন তাঁর স্বামী আল আমীন।
তিনি বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বড় কোনো ঝুঁকির বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে নাসরিনের পেটে আঘাতের কারণে যে ক্ষতি হয়েছে, তা তাঁকে ও তাঁর গর্ভের সন্তানকে দীর্ঘদিন বয়ে বেড়াতে হবে।
কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন আল আমীন। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিয়ের সাত বছরের মাথায় এই প্রথম স্ত্রী সন্তানসম্ভবা হয়েছেন। দীর্ঘদিনের সেই স্বপ্ন দুনিয়ার আলো দেখার আগেই তার ওপর আঘাত হেনেছেন আওয়ামী লীগ নেতা কামাল।
আমার স্ত্রী হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন আর হাউমাউ করে কাঁদছেন। তিনি প্রথম সন্তানকে সুস্থ দেখা নিয়ে শঙ্কায় নিদ্রাহীন রাতযাপন করছেন। তাঁর প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে, পানি যাচ্ছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, অবস্থার উন্নতি না হলে গর্ভের সন্তান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে।’
আহত নাসরিনের ভাই কাওসার বলেন, আমাদের জমির ওপর দিয়ে রাস্তা করতে না দেওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা কামাল ও তাঁর লোকজন আমাকে ও আমার বোনকে মারধর করেছেন। এতে আমার বোন ও তাঁর অনাগত সন্তানের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে। আমরা কামাল ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা কামাল বলেন, ‘আমি অন্তঃসত্ত্বা নাসরিনকে লাথি মারি নাই। একটু শাসন করেছি মাত্র। তাঁদের সঙ্গে এমন কিছু হয়নি। একটু ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। এর বেশি কিছু নয়। কিন্তু বিষয়টিকে কেন্দ্র করে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।’
শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হারুন অর রশিদ ফরিদ বলেন, এক অন্তঃসত্ত্বার পেটে লাথি মারা এবং অন্যকে জমি দখল করে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে রোববার সকালে অনুষ্ঠিত রাজাবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় কামাল ফরাজীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়নের সহসভাপতি শফি দেওয়ানের সভাপতিত্বে এ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়।
শ্রীপুর থানার ওসি এ এফ এম নাসিম বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা কামাল এক অন্তঃসত্ত্বার পেটে লাথি মেরেছেন বলে অভিযোগ পেয়েছি। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে। ঘটনার সত্যতা পেলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোনালী/জেআর