‘আমি রোজা আছি, ইফতারের পরে মারিস’ বলেও রক্ষা পাননি চাঁপাইয়ের কাউন্সিলর
অনলাইন ডেস্ক: চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও জেলা যুবলীগের সাবেক সদস্য খাইরুল আলম জেমকে (৫০) বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
জেলা শহরের উদয়ন মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। হত্যাকাণ্ডের আগে খাইরুল পাষণ্ডদের আকুতি জানিয়ে বলেন, ‘আমি রোজা আছি আমাকে তোরা মারিস না, ইফতারটা করতে দে, তারপর মারিস। ’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী হত্যাকাণ্ডের ঘটনা এভাবেই বর্ণনা করছিলেন।
খাইরুল হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী ও পৌর যুবলীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মামুন অর রশিদ জানান, বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে আমি উদয়ন মোড়ে ইফতারি কিনে বাসায় ফিরছিলাম। এ সময় উসকাঠিপাড়া মসজিদের সামনে হঠাৎ চিৎকার শুনে পেছনে ফিরে দেখি টুটুল, রানা, ইব্রাহিম ও শামিম জেম ভাইকে এলোপাতাড়ি কোপ দিচ্ছে। এছাড়া আরও কয়েকজন আশপাশে ছিল। আমি জেম ভাইকে বাঁচাতে গেলে তারা আমাকে অস্ত্র নিয়ে ঘিরে ধরে রাখে এবং আমাকে হত্যার হুমকি দেয়।
পরে ওরা পালিয়ে গেলে জেম ভাইকে হাসপাতালে নিয়ে যাই; কিন্তু আমরা তাকে বাঁচাতে পারিনি।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সারাদিন শহরজুড়ে চলে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ। এর আগে রাতে ঘেরাও করা হয় সদর থানা, ভাঙচুর করা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর ভবন।
বৃহস্পতিবার যুবলীগ নেতা খায়রুল আলম জেম হত্যায় জড়িত মূল পরিকল্পনাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে লাশ নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছেন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
দুপুর দেড়টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়কের শান্তিমোড়ে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখা হয়। জেমকে বহনকারী লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স এ সময় সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। অবরোধ চলাকালে নেতাকর্মীরা জেম হত্যার পরিকল্পনাকারী ও জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান।
এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর-৩ আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আলম ঝাপড়া মার্ডার ও মর্দনা গ্রামের ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পরিকল্পনা নিয়ে গেল ১৫ এপ্রিল জেম ফেসবুকে লাইভে এসে ঢাকার ডিআইজি নুরুল ইসলামের বিষয়ে অনেক কথা ফাঁস করে দেয়। এছাড়া ডিআইজির গ্রামের বাড়ির একটি দেবোত্তর সম্পত্তি নিয়েও দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এসব ঘটনার জেরে সন্ত্রাসী টুটুল বাহিনীকে দিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশের মুখপাত্র এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম সাহিদ জানান, কতিপয় দুর্বৃত্ত অতর্কিত হামলা চালিয়ে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে। রাজনৈতিক কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি।
এ বিষয়ে পৌর মেয়র মুখলেসুর রহমান বলেন, এমপি সাহেব আমার পোস্টার দেখে এসব অভিযোগ করেছেন। আমাকে এমপি হিসেবে দেখতে চায়- এ রকম পোস্টার দেখেই তিনি এখন আমাকে প্রতিপক্ষ ভাবছেন।
একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে অনেকের সঙ্গে আমাকে চলতে হয়, সে হিসেবেই চলি। টুটুলের বিরুদ্ধে তো এর আগেও মার্ডার মামলা আছে। তখন তো আমার সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল না। এখন তাহলে এখন আমার ওপর দায় আসবে কেন?
সোনালী/জেআর