ঢাকা | ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪ - ১০:০৭ পূর্বাহ্ন

বাদশার নেতৃত্বে রাজশাহীকে এগিয়ে নিন: মেনন

  • আপডেট: Saturday, February 25, 2023 - 10:01 pm

স্টাফ রিপোর্টার: টানা তিন বারের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনীতি ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতাকে এগিয়ে নিতে রাজশাহীবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ রাশেদ খান মেনন।

শনিবার বিকালে ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে দলের রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। এর আগে লাল পতাকাবাহি দলীয় নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে মাদ্রাসা মাঠ। জাতীয় ও দলীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করা হয়।

সমাবেশে রাশেদ খান মেনন বলেন, এই রাজশাহীকে বিএনপি জামায়াত জোট সরকার একসময় জঙ্গিবাদের চারণ ভূমিতে পরিণত করেছিল। তাদের ভয়ে, আতঙ্কে সাধারণ মানুষ বাইরে বের হতে পারেনি। আপনাদের নেতা কমরেড বাদশা সেদিন জীবন বাজিয়ে রেখে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। সেদিন তার নেতৃত্বে জঙ্গিবাদ বিরোধী লড়াই গড়ে উঠেছিল বলেই আজকে রাজশাহীর মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে। এর জন্য আমরা কৃতিত্ব চাইনা। শুধুমাত্র চাইবো- আবারো যারা সেই অশান্ত পরিবেশে ফিরে যেতে চায়; তাদের প্রত্যাখ্যান করে ফজলে হোসেন বাদশার নেতৃত্বেই রাজশাহীকে এগিয়ে নিন।

দেশের প্রবীণ এই রাজনীতিক বলেন, রাজশাহীর মানুষ যখন যখন বিপদে পড়েছে, তখন তখন ওয়ার্কার্স পার্টি তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছুদিন আগেও করোনা মহামারীতে ওয়ার্কার্স পার্টির সম্মুখ যোদ্ধারা নিজের জীবন বাজি রেখে মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছে। আগের রাজশাহী ও আজকের রাজশাহীর মধ্যে কোন মিল নেই। ফজলে হোসেন বাদশা নিজের অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেধা দিয়ে রাজশাহীকে শিক্ষা নগরীতে পরিণত করেছেন। কখনো কোনদিন তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগ ওঠেনি। এর জন্য আমরা গর্ববোধ করি। রাজশাহীর মানুষ আরো বেশি গর্ববোধ করে।

মেনন বলেন, কিছুদিন আগে এই মাদ্রাসা ময়দানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রেখেছেন। আগামী নির্বাচনে তিনি নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন। ভোট চান, আপত্তি নাই। তবে কেবলমাত্র নিজেদের জন্য নয়, সেই ভোট চাইতে হবে ১৪ দলের জন্য, সকল অসাম্প্রদায়িক শক্তির জন্য। আজকে মিত্রদের ঐক্যের প্রয়োজন। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করি, সেই বাঁধন শিথিল থেকে শিথিলতর হয়। মুখে কথা থাকে এক, কাজে সেটা মিলে না।

বিদ্যুৎ, তেল, গ্যাস, জ্বালানি ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম কমিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম প্রধান এই নেতা বলেন, গরীব মানুষ অনেক কষ্টে আছে। মানুষের এখন মূল প্রশ্ন আমরা বাঁচব কীভাবে? মূল্যস্ফীতি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি সংকট; এমনকি আমরা যে রুটি দিয়ে নাস্তা করি, সেই গমেরও সঙ্কট। মানুষ প্রতি মুহূর্তে পথ খুঁজছে। কীভাবে বাঁচব, কীভাবে এগোব। মানুষের জীবনে এখন অস্থিরতা ও আস্থাহীনতা বিরাজ করছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানির অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধি প্রত্যাহার করুন, গরীব মানুষের কষ্ট লাঘবে উদ্যোগ নিন।

বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে মন্তব্য করে মেনন বলেন, বর্তমান বাংলাদেশে উন্নয়ন হচ্ছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এর পাশাপাশি আমাদের দেশের সম্পদ মুষ্টিমেয় লোকের কাছে কেন্দ্রীভূত হয়েছে। যার ফলে উন্নয়নের পাশাপাশি বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের ৪ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। বর্তমানে মুষ্টিমেয় লোকেরা যেসব সম্পদ উপার্জন করেছে, সেগুলো দুর্নীতি, ঋণখেলাপি ও বিদেশে অর্থ পাচারের মাধ্যমে অর্জন করেছে। আর এসবে প্রশ্রয় এসেছে ক্ষমতা থেকে।

বিএনপি দেশকে পেছনে ঠেলে দিতে নতুন ষড়যন্ত্র করছে মন্তব্য করে রাশেদ খান মেনন বলেন, এ দেশের জনগণ অবশ্যই জানেন, সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমান পঞ্চম সংশোধনীর মধ্য দিয়ে সংবিধান বদলে যে রাষ্ট্রচরিত্র নির্ধারণ করেছিলেন, তা ছিল প্রগতির বিরুদ্ধে পশ্চাতপদতার সংস্কার। বিএনপি দেশকে পেছনের দিকে ঠেলে দিতে নতুন ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। তাদের ১০ দফা সেই নতুন ষড়যন্ত্রেরই রূপরেখা। বিএনপি জামাতের নতুন এই ষড়যন্ত্র ও অন্ধকারের শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন, আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম যেদিন সংসদে দাঁড়াই সেদিন দলের ও নিজের কোন কথা বলিনি। সেদিন বলেছি; রাজশাহীর মানুষের দুর্ভোগের কথা। সম্প্রতি সংসদে দাবি তুলেছিলাম, রাজশাহীর সাথে ঢাকার নির্বিচ্ছিন্ন যোগাযোগের জন্য বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশ দিয়ে নতুন রেল সেতু করার। রেলমন্ত্রী যতক্ষণ এটি মেনে নেন নি, ততক্ষণ আমি আমার বক্তব্য চালিয়ে গেছি। আজকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশ দিয়ে রেল সেতু হচ্ছে। এটি হয়ে গেলে আমার এলাকার কৃষকের ফসল সহজেই ঢাকায় পৌঁছাবে। তাদের আত্মসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।

রাজশাহী-২ আসনের টানা তিন বারের এই এমপি আরও বলেন, আমরা রাজশাহীর উন্নয়নে রাজপথে যেমন লড়াই করেছি একইভাবে সংসদেও লড়েছি। সেই লড়াইয়ের একটি প্রধান ইস্যু হচ্ছে বরেন্দ্র সেচ প্রকল্প। আপনারা জানেন কয়েকদিন আগে দুই জন আদিবাসী কৃষক বিএমডিএ’র কাছে কৃষি জমির জন্য পানি চাইতে গিয়ে পানি না পেয়ে আত্মহত্যা করেছে। কৃষকের উন্নয়নের জন্য প্রকল্প খুলে তারা কৃষকের সাথেই বৈষম্য করছে। ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে পরিচালিত এই সেচ প্রকল্প বন্ধের জন্য আমরা দীর্ঘদিন লড়াই করছি। আবারো দাবি জানাচ্ছি অবিলম্বে এই সে প্রকল্প বন্ধ করতে হবে।

রাজশাহীতে উন্নয়ন হলেও কর্মসংস্থান হয়নি মন্তব্য করে বাদশা বলেন, রাজশাহীতে উন্নয়ন হয়েছে এটি অস্বীকারের কোন সুযোগ নেই। কিন্তু তরুণ, যুবকদের বেকারত্ব নিরসনে প্রত্যাশিত কর্মসংস্থান গড়ে ওঠেনি। কর্মসংস্থান তৈরির জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। পাটকল, চিনিকল খুলে দিতে হবে। রেশম কারখানাকে আমরা বুক দিয়ে আগলে রেখেছি, কিন্তু সেটিও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে মুখ থুবড়ে আছে। শ্রমিকরা বেতন পাচ্ছে না। রাজশাহীর কর্মসংস্থান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সংসদ সদস্য হিসেবে আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। এখানে জড়িয়ে আছে সিটি কর্পোরেশন। সুতরাং সিটি কর্পোরেশন এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য হিসেবে আমি, আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবেই এক হয়ে রাজশাহীতে কর্মসংস্থান গড়ে তোলার বিষয়ে কাজ করতে হবে।

উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে বাদশা বলেন, গত ১৪ বছরে বাংলাদেশসহ রাজশাহীতে যে উন্নয়ন হয়েছে, অতিতে সেই উন্নয়ন দেখিনি। আমি টানা তিনবার এই এলাকায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি কখনো নিজের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হইনি। দুর্নীতি আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি। কখনো কাউকে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত করিনি। কারো সঙ্গেই দুর্ব্যবহার করিনি। মানুষের কল্যাণে যতটুকু ভালো কিছু করা যায় সব সময় সে চেষ্টা করেছি। ওয়ারকাস পার্টি সবসময় রাজশাহীবাসীর আপদে-বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছে। তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা মহান জাতীয় সংসদের তুলে ধরেছে। তার ধারাবাহিকতাতেই আজকে রাজশাহীর উন্নয়ন। প্রত্যাশা করি, রাজশাহীর মানুষ ঐক্যবদ্ধ থেকে উন্নয়ন ও সুশাসনের এই ধারাকে অব্যাহত রাখবে।

ওয়ার্কাস পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও রাজশাহী মহানগরীর সভাপতি লিয়াকত আলী লিকুর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন, পলিটব্যুরোর সদস্য আমিনুল ইসলাম গোলাপ, আনিসুর রহমান মল্লিক, অধ্যাপিকা তসলিমা খাতুন প্রথম। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন রাজশাহী মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টি সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ প্রামাণিক দেবু ও জেলার সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক তোতা।

সোনালী/জগদীশ রবিদাস