বিভিন্ন পক্ষের স্বার্থের বলি ইউক্রেন
অনলাইন ডেস্ক: ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পেছনে নানা পক্ষের স্বার্থ আছে। আর এই স্বার্থের বলি হচ্ছে ইউক্রেন এবং দেশটির সাধারণ মানুষ। বর্তমান পরিস্থিতিতে ইউক্রেন বলির পাঁঠা। ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে ডয়চেভেলে বাংলার সঙ্গে আলাপচারিতায় এমনাটাই বলছিলেন বিশ্লেষকরা।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা অবশ্যই আগ্রাসন। আমরা এর নিন্দা জানাই। কিন্তু এই হামলা এড়ানো যেতো। যুক্তরাষ্ট্র কি তার নিরাপত্তার জন্য হুমকি এমন কিছু তার পাশের দেশে করতে দেবে? মেক্সিকোতে কি রাশিয়ান সামরিক ঘাটি মেনে নেবে?
তিনি আরও বলেন , রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করেছে জার্মানি ও ফ্রান্স। জার্মানির বিরোধিতার মুখে গ্যাস পাইপ লাইন বন্ধ করা যায়নি, স্থগিত করা হয়েছে। ১৯৪৫ সাল থেকে ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন নিরপেক্ষ অবস্থানে ছিল। এই বছরের শুরুতে তারা ভাবছিল ন্যাটেতে আসবে। কিন্তু এই দুইটি দেশ এখন ভিন্নভাবে চিন্তা করছে। আর এখন ইউক্রেনও বলছে তারা ন্যাটোতে যাবে না। অথচ ওখানে ‘প্রক্সি ওয়ার’ চলছে।
তিনি জানান, এখন ন্যাটের ন্যারেটিভ পরিবর্তন হচ্ছে। যুদ্ধ বিমান এখানো দেয়নি। সদস্য না হওয়ায় সরাসরি ন্যাটের ফোর্স সেখানে যাচ্ছে না। ইউক্রেন এখন বলির পাঁঠা। নিরাপত্তা পরিষদের যে পাঁচ শক্তি তারা সবাই যুদ্ধ দেখছে, অসংখ্য মানুষের মৃত্যু দেখছে, তারপরও রাশিয়া ভেটো দিলো। রাশিয়া নিজেই একটি পক্ষ। অতীতেও রাজনৈতিক কারণে এই ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করা হয়েছে। ইরাক, আফগানিস্তানে এটা কোনো কাজে আসেনি । মানবতার পক্ষে যায়নি। তবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় রাশিয়ার ভেটো আমাদের সহায়তা করেছে। নয়তো পরিস্থিতি ভিন্ন রকম হতে পারতো।
এদিকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ প্রশ্ন করেন, ইউরোপে এখনো কেন এত অ্যামেরিকান সৈন্য থাকবে? এখন তো আর কমিউনিজম নেই। তাই গুরুত্বহীন ন্যাটোকে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার মধ্য দিয়ে আরো অন্তত: ১০ বছররে জন্য নিশ্চিত করা গেল। অথোরিটেরিয়ান যদি সমস্যা হয়, তাহলে মিয়ানমার তো সাধারণ পরিষদে অ্যামেরিকার পক্ষে ভোট দিয়েছে। আফ্রিকান দেশগুলো নিয়ে কী বলবেন? ন্যাটোর ১২ সদস্য থেকে ৩০ সদস্য হওয়া। জার্মানিতে ১১০টি সামরিক ঘাঁটি। এগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দরকার। রাশিয়ার সাথে জার্মানির গ্যাস পাইপ লাইন হলে তো অ্যামেরিকার ওপর নির্ভরতা আরো কমবে।
তিনি মনে করেন, জাতিসংঘের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ আরো অনেক খাতে সাফল্য থাকলেও বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কোনো ভ‚মিকা নেই। যুদ্ধ অবসানে কোনো ভূমিকা নেই। এর মূলে নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্যের ভেটো ক্ষমতা। জাতিসংঘ একটি আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংস্থা। তার তো নিজের কোনো স্বাধীনতা নেই। সুপার পাওয়ার যারা, তারা নিজেদের স্বার্থে এটাকে ব্যবহার করে।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন ভেঙে যায় তখন তো কথাই ছিল ন্যাটো আর বাড়বে না। কিন্তু সেটা তো মানা হয়নি। রাশিয়া দুর্বল হয়ে যাওয়ার পরও তাদের ন্যাটোর পূর্ব দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রয়োজন ছিলো কিনা এটা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। ন্যাটো-ওয়ারশর সময়ও কিন্তু ওই এলাকায় নিরপেক্ষ দেশ ছিল।
তিনি বলেন, আমি ইউক্রেনে হামলার নিন্দা জানাই। হামলার পক্ষে কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। কিন্তু রাশিয়ার মতো একটি দেশ সব সময় অ্যামেরিকার অনুগত থাকবে- এটা আশা করা যাায় না। তারা কেন ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিলে তা সহ্য করবে? এটা তো ওই অর্থে রাশিয়ার বর্ডার নয়। ইউক্রেন অনেকখানি রাশিয়ার ভেতরে।
আর জাতিসংঘের সুপার পাওয়ারদের ভেটো ক্ষমতা সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা কাজের চেয়ে অকাজ বেশি করে। তারা ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ায় না। তারা তাদের রাজনীতির হিসাব করে। ১৯৭১ সালে অ্যামেরিকা তো আমাদের পক্ষে দাঁড়ায়নি। তারা চেয়েছিল একটি যুদ্ধ বিরতির ব্যবস্থা করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ঝুলিয়ে দিতে। তবে রাশিয়ার ভেটো তাদের সে ইচ্ছা সফল হতে দেয়নি। আর এখন রাশিয়া তার নিজের স্বার্থে এটা ব্যবহার করছে।