ভিসি হওয়ার জন্য সিভি নিয়ে গেলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়
স্টাফ রিপোর্টার: অ্যাকাডেমিক কাজে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে (কুয়েট) যাওয়ার জন্য নেয়া ছুটিতে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় (রুয়েট) শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) হওয়ার প্রত্যাশায় নিজের জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) নিয়ে ঢাকায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে বেড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত শিক্ষক অধ্যাপক ফারুক রুয়েটের তড়িৎ ও যন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষক ও বিশ^বিদ্যালয়টির গবেষণা ও সম্প্রসারণ বিভাগের পরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছেন।
সূত্র জানায়, কুয়েটের পিএইচডি ডিগ্রিধারী এক শিক্ষার্থীর ডক্টরাল সিকিউরিটি কমিটির (ডিএসসি) সাধারণ সভায় বহিঃসদস্য হিসেবে (কর্তব্যকর্ম হিসেবে) যোগ দেয়ার জন্য গত ২৪-২৫ আগস্ট ছুটি নিয়েছিলেন রুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক ড. ফারুক হোসেন। জানা গেছে, ২৪ আগস্ট অধ্যাপক ফারুক খুলনায় না গিয়ে ঢাকায় যান। সেখানে বেলা ১১টায় রুয়েটের রেস্ট হাউজে ওঠেন। সেখানে রেস্ট নিয়ে পরে রওয়ানা দেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্যে। রুয়েটের ভাইস-চ্যান্সেলর হওয়ার আশায় একটি ‘চ্যানেল’Ñএর মাধ্যমে নিজের জীবনবৃত্তান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দেন। পরে তিনি রুয়েটের ভিসি হওয়ার লবিং করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বেশ কিছু দপ্তর চষে বেড়ান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রুয়েটের বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা জানান, তিনি (অধ্যাপক ফারুক) রুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি। এছাড়া অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে বিশ^বিদ্যালয়ের গবেষণা ও সম্প্রসারণ বিভাগের পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি রুয়েট শিক্ষকদের ‘আইডল’। অথচ অ্যাকাডেমিক কাজে কুয়েটে যাওয়ার জন্য ছুটি নিয়ে ভিসি হওয়ার লবিং করতে গিয়েছিলেন ঢাকায়। এটি রুয়েটের অফিসিয়াল নিয়ম-কানুনের পরিপন্থি বলে মনে করেন রুয়েটের এই শিক্ষক-কর্মকর্তাররা।
গত ২৪ আগস্ট ঢাকাস্থ রুয়েটের রেস্ট হাউজে অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত করে রেস্ট হাউজের এক কর্মচারি বলেন, গত বুধবার (২৪ আগস্ট) সকাল থেকে স্যারের (ফারুক হোসেন) নামে রেস্ট হাউজের একটি কক্ষ বরাদ্দ ছিলো এবং তিনি তার বরাদ্দকৃত কক্ষে অবস্থানও করেছিলেন।
মুঠোফোনে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক ও রুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. ফারুক হোসেন কুয়েটে অ্যাকাডেমিক কাজের জন্য নেয়া ছুটিতে ঢাকায় যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ২৪ আগস্ট আমি বিমানযোগে ঢাকায় গিয়েছিলাম। কিন্তু ঢাকায় থেকে বিমানের টিকেট না পাওয়ায় ওইদিন রাতেই সড়কপথে খুলনায় যায়। পরের দিন বেলা ১১টায় কুয়েটের ওই সভায় বহিঃসদস্য হিসেবে যোগ দেয়।’
কুয়েটের অ্যাকাডেমিক কাজে ছুটি নিয়ে ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় যাওয়া বিধি সম্মত কী-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো সদুত্তর না দিয়ে বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান। অবশ্য অধ্যাপক ফারুক ২৪ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ভিসি হওয়ার জন্য নিজের বায়োডাটা জমা দিয়ে এসেছেন বলে স্বীকার করেন।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে রুয়েটের ভাইস-চ্যান্সেলর (দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেনের মুঠোফোনে গতকাল শনিবার বিকালে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, গত ৩০ জুলাই ভিসি হিসেবে অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সেখের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর বিশ^বিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চলমান রাখতে গত ৩ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, বৃত্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপসচিব রোখছানা বেগম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিশ^বিদ্যালয়টির অ্যাপ্লাইড সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেনকে তার দায়িত্বের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ভাইস-চ্যান্সেলরের দায়িত্ব দায়িত্ব প্রদান করেন। তবে ইতোমধ্যেই বিশ^বিদ্যালয়টির ৫-৬ জন সিনিয়র অধ্যাপক ভিসি হওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সিভি জমা দিয়েছেন। তাদের একজন শিক্ষক অধ্যাপক ড. ফারুক হোসেন।