ঢাকা | মে ১৬, ২০২৫ - ৬:০৪ অপরাহ্ন

শিরোনাম

বাঘায় ৫০টি বাড়ি নদী গর্ভে বিলিন

  • আপডেট: Friday, August 26, 2022 - 11:17 pm

 

 

লালন উদ্দীন, বাঘা থেকে: রাজশাহীর বাঘায় ফুঁসে উঠেছে পদ্মা। ইতিমধ্যে সেখানে নদী গ্রাস করেছে ৫০টি পরিবাররের বাড়িঘর। নদীর পাড়ের সাথে পানিতে তলিয়ে যাওয়া (সলিল সমাধী) বৃদ্ধ মজাহার হোসেন ওরোফে মজা মাঝির সন্ধান গতকালও পাওয়া যায়নি।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলের চকরাজাপুর ইউনিয়নের চৌমাদিয়া গ্রামে মজা মাঝির সলিল সমাধির এই ঘটনা ঘটে। গত দুইদিনে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্বামীর লাশ ভেসে উঠবে এ অপেক্ষায় নদীর পাড়ে বসে আহাজারি করতে দেখা গেছে স্ত্রী মজিরণ বিবিকে। এদিকে এক মাসের ব্যবধানে সেখানে ৫০টি পরিবারের বাড়িঘর পদ্মা গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। গতকাল শুক্রবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ফায়ার সার্ভিসের টিম ও বাঘা থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছেন।

জানা গেছে, চকরাজাপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের চৌমাদিয়া চরের মৃত আলী মাঝির ছেলে মুজা মাঝির বাড়ি ১৫ দিন আগে পদ্মা গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। মনের দু:খে গত বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে পাড়ে বসে কান্নাকাটি করছিলেন। এ সময় পদ্মার পাড় ভেঙ্গে পড়ে তিনি নিখোঁজ হয়েছেন। তারপর এলাকার লোকজন জানতে পেরে নৌকা ও জাল নিয়ে খোঁজ করতে থাকেন। কিন্তু দুইদিন অতিবাহিত হলেও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিশ্চিত করেন চকরাজাপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল আযম।

চকরাজাপুর ইউনিয়নের চৌমাদিয়া চরের ওয়ার্ড মেম্বর আবদুর রহমান বলেন, এক মাসের ব্যবধানে চৌমাদিয়া, আতারপাড়া, দিয়ারকাদিরপুর চরের এরশাদ মাঝি, শাহপরায়ন, দিলু ব্যাপারি, করিম তাতীসহ ৫০টি পরিবারের বাড়িঘর পদ্মা গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এছাড়া আম বাগান, বড়ই বাগান, পেয়ারা বাগান, শাকসবজি, আখ ক্ষেত, বিভিন্ন ফসলি জমিসহ শত শত বিঘা জমি পদ্মা গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।

চকরাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান বলেন, পদ্মার চরের মধ্যে ৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে চৌমাদিয়া, আতারপাড়া, চকরাজাপুর, পলাশি ফতেপুর, ফতেপুর পলাশি, লক্ষ্মীনগর, চকরাজাপুর, পশ্চিম চরকালিদাসখালী, পূর্ব চকরাজাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। চকরাজাপুর ও পলাশি ফতেপুর এই দুটি উচ্চ বিদ্যালয়। পদ্মার চরে ৯টি প্রাথমিক ও দুটি উচ্চ বিদ্যালয় মিলে প্রায় ২ হাজার ৬০০ শিক্ষার্থী রয়েছে আতঙ্কে।

এলাকাবাসি জানান, গত একমাস ধরে নদীতে পানি বাড়ছে। সেই সাথে দেখা দিয়েছে ভাঙন। ইতোমধ্যে ৫০ টি বাড়ি পদ্মা গর্ভে বিলিন হয়েছে। অনেক ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই তাদের বসত ভিটা অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। তাদেরই একজন মজাহার হোসেন (৬২)।

এদিকে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে থানা পুলিশ এবং শুক্রবার সকালে বাঘা ফায়ার সার্ভিস এর লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, নদীতে এখন অনেক স্রোত। মজাহার হোসেন মাঝির লাশ কোথায় কখন ভেসে উঠবে সেটা বলা মুসকিল। অনেকেই ধারনা করছেন এ লাশ হয়তো আর কখনোই খুঁজে পাওয়া যাবেনা। তবে লাশ পাওয়ার অধীর অপেক্ষায় নদীর পাড়ে এসে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন তার স্ত্রী মজিরণ।

চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডি.এম মনোয়ার হোসেন বাবলু বলেন, আগে থেকেই ভাঙন চলছিল। বর্তমানে পানি বৃদ্ধির সাথে ভাঙন পূর্বের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাঁর মতে, মজাহার হোসেন পানিতে পড়ে নিখোঁজ হওয়াটি মর্মান্তিক। তিনি এ ঘটনার জন্য দু:খ প্রকাশ করেন।

এদিকে শুক্রবার বিকেলে বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আখতার মজাহার হোসেনের পরিবারের সাথে দেখা করেন ও নদী ভাংগন এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি সকলকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবার আশ্বাস দেন।

 

 

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS