ঢাকা | ডিসেম্বর ২২, ২০২৪ - ৩:০০ অপরাহ্ন

ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের কোমরে রশি, বিক্ষোভ

  • আপডেট: Monday, June 27, 2022 - 10:16 pm

 

স্টাফ রিপোর্টার: হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলার অপরাধে ওষুধ কোম্পানির কয়েকজন প্রতিনিধির কোমরে রশি দিয়ে তাদের বেধে রাখার ঘটনা ঘটেছে। রোববার সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে সোমবার ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা বিক্ষোভ-মিছিল ও সমাবেশ করেছেন।

রামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে রোববার সকাল ১০টার দিকে এই সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশ চলে বেলা ১১টা পর্যন্ত। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল করেন। বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যালস রিপ্রেজেন্টেটিভস অ্যাসোসিয়েশনের (ফারিয়া) রাজশাহী জেলা ও মহানগর শাখা এ কর্মসূচির আয়োজন করে। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর কমিটির আহ্বায়ক নাজমুল সাকিব। এতে শতাধিক মেডিকেল প্রোমোটিং এক্সিকিউটিভ (এমপিই) অংশগ্রহণ করেন।

বক্তব্য রাখেন- ফারিয়ার কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব, নির্বাহী সভাপতি শফিউর রহমান শফি, ময়মনসিংহের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল খান, অরিয়ন ফার্মার প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। তাঁরা বলেন, দেশে চাহিদার ৯৮ শতাংশ ওষুধের যোগান দেয় দেশীয় ওষুধ কোম্পানি। এখানে ২৫ হাজার কোটি টাকার বাজার। ওষুধখাত বিপুল পরিমাণ রাজস্ব দেয়। তা দিয়ে সরকারী কর্মকর্তাদের বেতন হয়। কিন্তু রামেক হাসপাতালের পরিচালক প্রজাতন্ত্রের গোলাম হয়ে মালিকের কোমরে রশি বেধেছেন। তিনি সব ওষুধ কোম্পানিকে অপমান করেছেন। দেশের ১৫ লাখ এমপিইকে বেধেছেন।

এখন থেকে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দেখে লাঠি নিয়ে তেড়ে এলে সেই লাঠি ভেঙে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন বক্তারা। তাঁরা বলেন, ওষুধ কোম্পানির তিন প্রতিনিধিকে রশি দিয়ে বেধে রাখার ঘটনায় রামেক হাসপাতালের পরিচালককে ১২ ঘণ্টার মধ্যে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। তা না হলে প্রথমে রাজশাহীতে এবং পরে সারাদেশে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হবে। তখন চিকিৎসা কীভাবে চলে তাঁরা সেটি দেখবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তাঁরাই এসে ক্ষমা চাইবে। ভুল ওরা করেছে।’

তিনি বলেন, ‘ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা ইন্টার্নী ডাক্তারদের প্যাড, খাতা-কলম বা এ ধরনের গিফট-টিফট দেয়। এর বিনিময়ে তাঁরা তাঁদের কোম্পানির ওষুধ লিখতে চাপ দেয়। তাই কেউ কেউ সরকারি সাপ্লাই থাকা স্বত্বেও ওই কোম্পানির ওষুধ লেখে। দামি এসব ওষুধ কিনতে গরীব রোগীদের খুব কষ্ট হয়। কোম্পানির প্রতিনিধিরা আবার হাসপাতালে এসে দেখে ডাক্তার কোন ওষুধ লিখছেন। তাঁরা রোগীকে আটকে প্রেসক্রিপশনের ছবি তোলেন। এমনভাবে তাঁরা দাঁড়ান কোন রোগীর পাশ কাটিয়ে যাওয়ার উপায় নেই।’

পরিচালক বলেন, ‘এই সমস্যাগুলো আমরা জানি। সিসি ক্যামেরায় সবই দেখতে পাই। নতুন ওষুধ সম্পর্কে জানার জন্য ডাক্তারদেরও কোম্পানির প্রতিনিধিদের দরকার। সে জন্য আমরা সপ্তাহে দুইদিন সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছি। কিন্তু ওরা আসে সবদিন, সবসময়। ওই ছবি তোলার একই কাজ করে। আমি চিঠি দিয়ে তাঁদের সতর্ক করেছি। ওদের বড় অফিসাররা বলেছিলেন এ রকম হবে না। কিন্তু লাভ হয়নি। ওরাও ছবি তোলার জন্য চাপ দেন।’

তবে রশি দিয়ে বাধা ঠিক হয়নি বলে স্বীকার করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় আমি রেগে গিয়ে আনসারদের বলি- এই ওদের ধরো, বাধো। এ রকম। অতি উৎসাহী দু’একজন আবার এই কাজটা করে ফেলেছে। এটা ঠিক হয়নি।’

উল্লেখ্য, রোগীদের আটকে ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলার কারণে রোববার সকালে ওষুধ কোম্পানির তিন প্রতিনিধিকে একসঙ্গে রশি দিয়ে বেধে রাখার ঘটনা ঘটে। হাসপাতালের আনসার সদস্যরা এই কাণ্ড ঘটান। কিছুক্ষণ পর মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।