ঢাকা | ডিসেম্বর ৩১, ২০২৫ - ৫:১৩ পূর্বাহ্ন

ভূগর্ভস্থ পানির সঙ্কট মোকাবিলায় জাতীয় পানিনীতি প্রণয়নের উদ্যোগ

  • আপডেট: Tuesday, December 30, 2025 - 10:22 pm

স্টাফ রিপোর্টার: দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ক্রমবর্ধমান ভূগর্ভস্থ পানি সঙ্কট মোকাবিলায় প্রস্তাবিত জাতীয় পানিনীতি-২০২৫ প্রণয়নকে সময়োপযোগী ও জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন পানি বিশেষজ্ঞরা।

রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় পানিস্তর দ্রুত নিচে নেমে যাওয়ায় কৃষি, পানীয় জল ও পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। এ পরিস্থিতিতে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ এবং বিকল্প পানি ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার পবা উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে প্রস্তাবিত জাতীয় পানিনীতি-২০২৫ প্রণয়ন বিষয়ক গণশুনানি ও তারুণ্যের মতামত গ্রহণ সংক্রান্ত কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়। কর্মশালাটি আয়োজন করে পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (ওয়ারপো)।

কর্মশালায় জানানো হয়, রাজশাহী অঞ্চলের অতি উচ্চ পানি সঙ্কট ঘোষিত ২৫টি উপজেলার মধ্যে পবা উপজেলা অন্যতম। এ উপজেলার চারটি ইউনিয়নকে ইতিমধ্যে ‘অতি উচ্চ পানি সংকট এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু পবা নয়, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার ২৫টি উপজেলার ২১৫টি ইউনিয়নের ৪ হাজার ৯১১টি মৌজা ও সাড়ে পাঁচ হাজার গ্রাম বর্তমানে পানি সঙ্কটের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে ৪৭টি ইউনিয়নের ১ হাজার ৫০৩টি মৌজাকে অতি উচ্চ পানি সঙ্কটাপন্ন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব অঞ্চলে প্রায় ৮৭ লাখেরও বেশি মানুষ সরাসরি পানির সঙ্কটে ভুগছেন।

ওয়ারপোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত কয়েক বছর ধরে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানিস্তর নিয়ে বিস্তৃত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত গভীর নলকূপ স্থাপন, অপরিকল্পিত সেচব্যবস্থা, জলাশয় ভরাট ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানির স্বাভাবিক পুনঃভরাট ব্যাহত হচ্ছে।

এর ফলে প্রতিবছর পানিস্তর গড়ে কয়েক ফুট করে নিচে নেমে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে উপদ্রুত এলাকাগুলোতে ভূগর্ভস্থ পানি সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় ১১টি নির্দেশনা অনুসরণের ওপর জোর দেয়া হয়। নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে নিয়ন্ত্রিত পানি উত্তোলন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, খাল-বিল ও জলাশয় রক্ষা, সেচে পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিকল্প পানির উৎস সৃষ্টি।

পানি আইন অনুযায়ী এসব এলাকায় পানি উত্তোলন ও ব্যবহারকারী সব সংস্থাকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেউ আইন লঙ্ঘন করে নির্বিচারে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন, পানি বিক্রি বা বিতরণ করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানানো হয় প্রশাসনকে।

কর্মশালার উদ্বোধন করেন পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার মহাপরিচালক মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান, যিনি ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার পরিচালক (পরিকল্পনা) নুর আলম ও পরিচালক (কারিগরি) শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন।

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আরাফাত আমান আজিজ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (পানি সম্পদ) ড. আমিনুল হক।