ঢাকা | ডিসেম্বর ২৮, ২০২৫ - ৮:০৮ পূর্বাহ্ন

সোনামসজিদ স্থলবন্দরে আমদানি কমেছে ৪০ শতাংশ

  • আপডেট: Sunday, December 28, 2025 - 12:00 am

দু’দেশের কূটনৈতিক টানাপোড়ন: 

স্টাফ রিপোর্টার ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ ব্যুরো: বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়নের কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ৪০ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি কমে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি মন্তব্য করে তারা বলছেন, সার্কভুক্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করে জনগণের স্বার্থে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে স্বাভাবিক আমদানি-রপ্তানি নিশ্চিত করতে হবে।

গতকাল শনিবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার ভবনে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ী অংশিজনেরা এসব কথা বলেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়নের কারণে চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর। সোনামসজিদ স্থলবন্দরসহ দেশের সব স্থলবন্দরের একই চিত্র বিরাজ করছে। আগের তুলনায় ভারত থেকে পণ্য আমদানি হচ্ছে মাত্র ৬০ শতাংশ। এতে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব দেখা দিচ্ছে। এজন্য সার্কভুক্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে স্বাভাবিক আমদানি-রপ্তানি নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। তাই ব্যবসা বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশের জন্য নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকার প্রয়োজন। মতবিনিময় সভায় সোনামসজিদ স্থলবন্দরের অবকাঠামো ও রহনপুর রেলশুল্ক স্টেশনের উন্নয়নসহ ৯ দফা দাবি তুলেন ধরেন তিনি।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহ-সভাপতি খাইরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি আকতারুল ইসলাম রিমন, পরিচালক রাইহানুল ইসলাম লুনা, জাহাঙ্গীর কবির, আব্দুল বারেক, শুকুরুদ্দিন, শহিদুল ইসলাম ও মনিরুল ইসলাম মনি প্রমুখ।

আমদানি কমেছে বেনাপোল বন্দরেও: নানা প্রতিবন্ধকতায় বেনাপোল স্থলবন্দরেও আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ ক্রমেই কমছে। গত অর্থবছরে তার আগের বছরের তুলনায় বেনাপোল বন্দরে আমদানি কমেছে ৭৫ হাজার ৭৪৬ মেট্রিক টন এবং রপ্তানি কমেছে ৭৫ হাজার ২৩২ মেট্রিক টন। রেলপথেও বাণিজ্য কমেছে ২৯ হাজার মেট্রিক টন।

বেনাপোল কাস্টমস সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৭৮০ মেট্রিক টন পণ্য। আগের বছর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ ছিল ২১ লাখ ১৪ হাজার ৫০৯ মেট্রিক টন।

এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ১৪ লাখ ৪৫ হাজার টন, ২০২১-২২ সালে ২১ লাখ ১৪ হাজার টন, ২০২০-২১ সালে ২৬ লাখ ৪৪ হাজার টন এবং ২০১৯-২০ সালে ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৬৪ টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি ছিল ২০ লাখ ১১ হাজার ৬ টন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি-রপ্তানির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা দ্রুত প্রত্যাহার না হলে বড় ধরনের বাণিজ্য ও রাজস্ব ঘাটতি তৈরি হবে।

তবে বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, সরকার চাইলে বাণিজ্য বৈঠকে এসব বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হবে। বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ৫ আগস্টের আগে বেনাপোল দিয়ে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ ট্রাক ভারতীয় পণ্য আমদানি হতো। আর বাংলাদেশি পণ্য ভারতে রপ্তানি হতো ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাক।

কিন্তু ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়, যা পরবর্তীতে বাণিজ্যকে প্রভাবিত করে। সরকার পরিবর্তের পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে ভারত তিন দফায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বছর শেষে বড় ধরনের বাণিজ্য ও রাজস্ব ঘাটতি দেখা দেবে। গত অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় বেনাপোল বন্দরে আমদানি কমেছে ৬ লাখ ৩১ হাজার ৩৩০ মেট্রিক টন এবং রপ্তানি কমেছে ৭৫ হাজার ২৩২ মেট্রিক টন। রেলপথেও বাণিজ্য কমেছে ২৯ হাজার মেট্রিক টন।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের দপ্তর সম্পাদক মোস্তাফিজ্জোহা সেলিম বলেন, সরকার পরিবর্তন স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলালেও ভারত যেন বাণিজ্য নীতিতে স্থিতিশীল অবস্থানে থাকে-এটাই প্রত্যাশা।

বেনাপোল স্থলবন্দর পরিচালক শামিম হোসেন বলেন, গত ২৫ নভেম্বর বেনাপোল দিয়ে ভারত থেকে ২৪৩ ট্রাক পণ্য আমদানি হয়েছে এবং বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৪৫ ট্রাক। তিনি আরও বলেন, সীমান্তে বাণিজ্য বৈঠক বন্ধ থাকায় অনেক সমস্যা সমাধানে দেরি হচ্ছে। তবে দুই দেশের সরকার চাইলে আলোচনা পুনরায় শুরু হতে পারে।

বিলোনিয়া স্থলবন্দরের অবস্থাও তাই: ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলার বিলোনিয়া স্থলবন্দর দিয়ে কমেছে আমদানি-রপ্তানি। এপথে যাত্রী পারাপার হ্রাস পাওয়ায় কমেছে ভ্রমণকরও। বাণিজ্য কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বন্দরের সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গণ-অভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তনের পর থেকে চলছে দুই দেশের কূটনৈতিক টানাপোড়েন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশ পাল্টাপাল্টি বিধিনিষেধ আরোপ করায় বিলোনিয়া স্থলবন্দরে কমছে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। বিলোনিয়া স্থল শুল্ক স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এ বন্দর দিয়ে এপর্যন্ত রপ্তানি হয়েছে ৩৭ হাজার ১৬৫ মেট্রিক টন পণ্য। যার আর্থিক মূল্য ৩৪ কোটি ৫৭ লক্ষ ৬৫ টাকা। অপরদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই চলতি সময়টাতে এ বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল ৯১ লক্ষ ৯৩৯ মেট্রিক টন পণ্য।

আর্থিক মূল্য ছিল ৮৫ কোটি ৫৫ লাখ ২৭৯ টাকা। বিলোনিয়া কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে রপ্তানিকৃত পণ্য থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯৯ হাজার ৭০৮ টাকা। অপরদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রপ্তানিকৃত পণ্য থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১০ লক্ষ ৮০ হাজার ৭৪ টাকা। যা গত অর্থবছরের তুলনায় পরিমাণগত দিক থেকে অনেক কম এবং চলতি অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি হলেও এই অর্থবছরে গড়ে পরিমাণ ও রাজস্ব আয় কমেছে বিলোনিয়া স্থলবন্দরে। রপ্তানি পণ্যের মধ্যে ছিল শুধু সিমেন্ট।