ঢাকা | ডিসেম্বর ২৭, ২০২৫ - ৫:৪২ পূর্বাহ্ন

রাজশাহীতে হিমাগারে মজুদ ৬ লাখ বস্তা আলু এখন গলার কাঁটা

  • আপডেট: Saturday, December 27, 2025 - 12:00 am

মালিকদের লোকসান ৫০ কোটি টাকা:

স্টাফ রিপোর্টার: আলু চাষি ও ব্যবসায়ীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে হিমাগারে মজুদ আলু। ওই আলু বিক্রি করে হিমাগারের ভাড়াও উঠছে না বরং পকেট থেকে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। লোকসানে চাষি ও ব্যবসায়ীরা এখন হিমাগার থেকে আলু তুলছেন না। ফলে হিমাগার মালিকরা মজুত আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। হিমাগার কর্তৃপক্ষ এলাকায় মাইকিং করে আলু তুলে নেয়ার সময় বেঁধে দিয়েছে। ভাড়া ও ঋণ বাবদ রাজশাহীর হিমাগার কর্তৃপক্ষকে লোকসান গুনতে হচ্ছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা।

রাজশাহীর হিমাগার কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় হিমাগারে আলু সংরক্ষণের সময় শেষ হয়েছে ৩০ নভেম্বর। অথচ তারপরেও থেকে গেছে বিপুল পরিমান আলু। গতকাল শুক্রবার রাজশাহীর ৪৬টি হিমাগারের হিসাব অনুযায়ি এখনও প্রায় ৬ লাখ বস্তা আলু মজুদ রয়েছে। প্রতিটি হিমাগারে আলু রয়েছে প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার ব্যাগ। বর্তমানে হিমাগারে শুকনা আলু ৫/৬ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কৃষকরা আলু বের করতে না আসায় সংরক্ষিত আলু নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন হিমাগারে মালিকরা। তারা ভাড়া বাবদ প্রায় ২৫ কোটি টাকা এবং ঋণসহ অন্যান্য খাতে আরো ২৫ কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়েছেন।

সুত্র জানায়, অন্যান্য বছর ১ ডিসেম্বরের মধ্যে হিমাগার খালি করা হয়। কিন্তু এবার বিপুল পরিমান আলু থেকে যাওয়ায় আগামী ১ জানুয়ারির মধ্যে হিমাগারেগুলো খালি করতে হবে। ১ মাস সংস্কার শেষে আগামী ১ ফেব্রুয়ারী থেকে ২০২৬ মৌসুমের আলু সংরক্ষণ শুরু হবে। এজন্য লোকসান হলেও হিমাগার মালিকরা স্টোরেজ খালি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

জানা গেছে, গতবছর ফলন ভালো হওয়ায় লাভের আশায় বিপুল পরিমাণ মজুত আলু নিয়ে চাষী ও ব্যবসায়ীদের এখন ত্রাহি অবস্থা। যদিও কৃষি মন্ত্রণালয় কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনকে কৃষকের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ডিসেম্বর পর্যন্ত আলু সংরক্ষণের অনুরোধ জানিয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি অর্থনীতিবিদ এবং ভুক্তভোগীদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে বাজারে নতুন আলুর সরবরাহ বাড়ায় পুরোনো আলুর চাহিদা নেমেছে তলানিতে। পুরোনো আলু কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত ১ সপ্তাহে পুরোনো আলুর দাম কেজিতে প্রায় আট টাকা কমেছে। কোথাও কোথাও গরু-ছাগলকে আলু খাওয়ানো হচ্ছে। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে আলুর আবাদ হয়েছে প্রায় চার লাখ ৯৫ হাজার হেক্টর জমিতে। আর এক কোটি ১৫ লাখ টনেরও বেশি উৎপাদন হয়েছে। দেশে আলুর বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৮০ লাখ টন। বীজের জন্য আরো ৮-১০ লাখ টনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু গত মৌসুমেই উদ্বৃত্ত থেকে যায় অন্তত ২৫-৩০ লাখ টন আলু। ওই আলুই হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে ৩৮৪ হিমাগারে রয়েছে। তাতে আলু সংরক্ষণ করা যায় প্রায় ৩৩ লাখ টন। তার প্রায় পুরোটাই ভর্তি ছিল গত মৌসুমে। তার মধ্যে ১০ লাখ টনের বেশি বীজ আলু রয়েছে। এখন ওই বিপুল পরিমাণ আলু বাজারে ছাড়ার মতো দাম নেই। আর এর মধ্যেই বাজারে নতুন আলুর সরবরাহ শুরু হয়েছে। ফলে পুরোনো আলুর চাহিদা আরো কমেছে। কোথাও পুরোনো আলু পাঁচ-ছয় টাকা এবং নতুন আলু ২০-২১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাতে আগাম জাতের আলুচাষিরাও লোকসানে পড়েছে। অথচ সরকার ২২ টাকা কেজি দরে আলু কেনার ঘোষণা দিলেও তা এখনো কার্যকর হয়নি।

সূত্র আরো জানায়, দেশে উৎপাদিত আলুর মাত্র ৩ থেকে ৪ শতাংশ সবজির বাইরে অন্য কাজে ব্যবহার হয়। অথচ অনেক দেশেই আলু একটি বড় শিল্পপণ্য। যদিও দেশে আলুর প্রসেসড খাবারের বাজার বড় হচ্ছে। তবে ওই খাতে নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সব জাতের আলু দিয়ে সব ধরনের প্রসেসড খাবার বানানো যায় না। সঠিক জাত নির্বাচন, ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ বড় সমস্যা। কৃষক পর্যায়ে অনেক সময় সংরক্ষণ সঠিকভাবে না হওয়ায় আলুর গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া বাংলাদেশে আলুতে পানির পরিমাণ বেশি, ড্রাই-ম্যাটার কম। ফলে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন বহুমুখীকরণ ব্যয় সাপেক্ষ।

এদিকে মজুত আলু নিয়ে বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী জানান, হিমাগারে থাকা চার থেকে পাঁচ লাখ টন আলু নিয়ে হিমাগার মালিকরা বিপদে রয়েছে। নভেম্বরের মধ্যে আলু নেয়ার কথা থাকলেও অনেকে নেননি।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান জানান, সাধারণত কৃষক ও ব্যবসায়ীরা নভেম্বরের মধ্যে হিমাগার থেকে আলু বের করে থাকেন। তবে ১৮ নভেম্বর মন্ত্রণালয় থেকে হিমাগার মালিকদের অনুরোধ করা হয়, যেন ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা আলু সংরক্ষণ করে। তাতে হিমাগার মালিকরা সম্মতি দেন।