হাতিয়ায় চর দখলে গোলাগুলিতে নিহত ৫
সোনালী ডেস্ক: দেশের বিভিন্নস্থানে চর দখল নিয়ে প্রতিদিনই ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা। এসব ঘটনায় দু’পক্ষের সংঘর্ষে ঝরছে প্রাণ। আবার অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। আইনশৃংখলা বাহিনীর নিয়মিত নজরদারি ও অভিযানের পরও থামছে না দখলবাজি ও প্রাণহানি।
নোয়াখালীর হাতিয়ার জাগলারচর দখলকে কেন্দ্র করে জলদস্যুদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৮-১০ জন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে উপজেলার জাগলারচরে এ সংঘর্ষ হয়। নিহতদের মধ্যে একজন হলেন আলাউদ্দিন (৪০)। তিনি উপজেলার সুখচর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চর আমান উল্যাহ গ্রামের ছেরাং বাড়ির মহিউদ্দিনের ছেলে। নিহত অন্যদের নাম জানা যায়নি।
নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, নিহতদের মধ্যে একজন নোয়াখালীর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। আর চারজনের মৃতদেহ ঘটনা স্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার জাগলারচরের জমি সরকার এখন পর্যন্ত কাউকে বন্দোবস্ত দেয়নি। এ সুযোগে ৫ আগস্টের পর জাহাজমারা ইউনিয়নের কোপা সামছু বাহিনী জাগলারচরের বেশ কিছু জমি বিক্রি করে। এরপর সুখচর ইউনিয়নের আলাউদ্দিন বাহিনী জাগলারচরের জমির দখল নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে আলাউদ্দিন বাহিনী আরও বেশি দামে কিছু জমি বিক্রি করে। এরপর দুটি গ্রুপ আলাদা আলাদাভাবে চরের জমি বিক্রির চেষ্টা চালায়।
অভিযোগ রয়েছে, চর দখলে যুক্ত আলাউদ্দিন সুখচর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি বেলায়েত হোসেন সেলিম, আওয়ামী লীগের নিজাম মেম্বার ও বিএনপির নবীর ঘনিষ্ঠ। তাঁরা কোপা সামছু বাহিনীকে চর থেকে বিতাড়িত করে চরের জমি দখলে নিতে ডাকাত আলাউদ্দিনের বাহিনীর সঙ্গে আঁতাত করেন। এ নিয়ে দুটি গ্রুপ একাধিকবার বিরোধে জড়ায়।
মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে চরের জমি দখলকে কেন্দ্র করে কোপা সামছু ও আলাউদ্দিন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত হয়। এতে অপর পক্ষের ছোড়া গুলিতে আলাউদ্দিনসহ পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। পরে আলাউদ্দিনকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। চারজনের মরদেহ ঘটনাস্থলে পড়ে ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে সুখচর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি বেলায়েত হোসেন সেলিমের মোবাইলে একাধিক কল করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
হাতিয়া থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল আলম বলেন, একটি মরদেহ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে রয়েছে। চারটি মরদেহ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্গম চরাঞ্চল হওয়ায় বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। ময়নাতদন্ত শেষে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
এদিকে পাবনা, কুষ্টিয়া, নাটোর ও রাজশাহী পদ্মা নদীর চরে কাশের খড় ও বালুমহালের বাণিজ্য হয় বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার। এসব নিয়ন্ত্রণ করে একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী। সম্প্রতি কাশের খড়কে কেন্দ্র করে পদ্মার চরে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। নদীর বুকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া ও কথায় কথায় গুলি চালানো কাঁকন বাহিনীর ভয়ে তটস্থ চার জেলার চরাঞ্চলের মানুষ। নিরাপত্তার ভয় আর শঙ্কায় ব্যাহত হচ্ছে চরের চাষাবাদ।
পদ্মার বুকে জেগে ওঠা বির্স্তীণ চরে বিনা পুজিঁর ফসল কাশ। ব্যবসায়ীদের দাবি, শুধুমাত্র বাঘার উপজেলার চরেই বছরে কাশের খড়ের ব্যবসা হয় অন্তত ৫০ কোটি টাকার। পাবনা থেকে রাজশাহী পর্যন্ত হয় ৩শ কোটির বাণিজ্য। পদ্মার চরে বালুর ওপরে জন্মানো কাশবন থেকে পাওয়া খড়ের বেশিরভাগ পানচাষিদের পানের বরজে ছাউনি তৈরিতে কাজে লাগে। রাজশাহী জেলার পবা, মোহনপুর, দুর্গাপুর ও বাগমারা এলাকার পানের বরজে এই খড়ের বেশ চাহিদা।
স্থানীয়দের ভাষ্য, বিভিন্ন সময় চার জেলা জুড়ে বিস্তৃত পদ্মার দুর্গম চরাঞ্চলে নামে-বেনামে বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনীর উত্থান ঘটেছে। সব বাহিনী আধিপত্য বিস্তার করেছে বালু আর চরের ফসল দখলকে কেন্দ্র করে। সন্ত্রাসীদের ভাগ না দিয়ে কেউ চরের ফসল ঘরে তুলতে পারতেন না। এ নিয়ে দ্বন্দ্বে বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসী গ্রুপের হাতে ৪১ জন মানুষ খুনের ঘটনা ঘটেছে। এসব সন্ত্রাসী বাহিনীর অন্যতম আলোচিত ছিল ‘পান্না বাহিনী’ ও ‘লালচাঁন বাহিনী’। পান্নার ওস্তাদ ছিলেন বর্তমানের প্রভাবশালী সন্ত্রাসী বাহিনী প্রধান কাঁকন। আমান ও নাজমুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হাসানুজ্জামান কাকনকে প্রধান আসামি করে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানায় মামলা হয়েছে। গত জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এ বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বেশ কয়েকটি। দুর্গম চরে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান চলানো হয়েছে। নৌ-পুলিশও বাড়িয়েছে তৎপরতা।











