ঢাকা | ডিসেম্বর ২৪, ২০২৫ - ৫:২২ পূর্বাহ্ন

সরিষা ফুলে হলুদ উত্তরাঞ্চলের ফসলের মাঠ

  • আপডেট: Wednesday, December 24, 2025 - 12:06 am

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জসহ উত্তরবঙ্গে বিভিন্ন অঞ্চলে মাঠজুড়ে এখন শুধুই হলুদের সমারোহ। যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই সরিষা ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য। ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি এবং সরকারি কৃষি প্রণোদনার ফলে এ অঞ্চলে সরিষা চাষে রীতিমতো ‘হলুদ বিপ্লব’ ঘটেছে। বিশেষ করে রাজশাহী অঞ্চলে এই বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে চাষ হয়েছে এবং ভালো ফলনের আশা করা হচ্ছে। তবে কিছু এলাকায় বৃষ্টির কারণে ক্ষতিরও খবর আছে। মূলত গোদাগাড়ীসহ উত্তরাঞ্চলের বিস্তৃত এলাকাজুড়ে এই সোনালী ফসল দেখা যাচ্ছে এবং মৌমাছি পালকদের আনাগোনাও বেড়েছে।

সরেজমিনে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, শীতের শিশিরভেজা সকালে সরিষা ফুলের সুবাস বাতাসে ভাসছে। গাঢ় হলুদ ফুলে ফুলে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহের জন্য ভিড় করছে। অনেক কৃষক তাদের সরিষা খেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে মৌ-বক্স বসিয়েছেন। এতে একদিকে যেমন খাঁটি মধু উৎপাদিত হচ্ছে, অন্যদিকে পরাগায়নের ফলে সরিষার ফলনও ২০-২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকরা বলছেন, সরিষা খেতগুলো দেখে মনে হয় যেন প্রকৃতিতে কেউ নিজ হাতে হলুদ চাদর বিছিয়ে দিয়েছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে গোদাগাড়ীতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার ২৪০ হেক্টর। ইতিমধ্যে প্রায় ১৪ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। তথ্যমতে, গত বছর এখানে সরিষা চাষ হয়েছিল আনুমানিক ৭ হাজার ৪২০ হেক্টর। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় আবাদ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। মূলত দোআঁশ ও বেলে-দোআঁশ মাটির উর্বরতা এবং স্বল্প খরচে অধিক লাভের আশায় কৃষকরা সরিষা চাষে ব্যাপকভাবে ঝুঁকেছেন।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসে সরিষার বীজ বপন করা হয়। এতে সেচ ও সারের প্রয়োজন হয় খুবই কম। সরিষা চাষের বহুমুখী সুবিধার কথা জানিয়ে তারা বলেন, সরিষার পাতা ঝরে মাটিতে মিশে উৎকৃষ্ট জৈব সার তৈরি করে। এছাড়া তেল আহরণের পর সরিষার খৈল গরুর জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। এমনকি সরিষা চাষের পর একই জমিতে বোরো ধান আবাদ করলে সারের খরচ অনেক কম লাগে। ভোজ্যতেলের আকাশচুম্বী দামের কারণে সাধারণ মানুষ এখন নিজেদের তেলের চাহিদা মেটাতে এবং বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে সরিষা চাষ করছেন। কৃষি বিভাগ থেকে সময়মতো সার, বীজ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ পাওয়ায় তারা এবার বড় ধরনের লাভের আশা করছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, সরিষা মূলত একটি সাশ্রয়ী ও স্বল্পমেয়াদী ফসল। কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, গোদাগাড়ীর এই চিত্র তারই প্রতিফলন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে এলাকায় সরিষার রেকর্ড উৎপাদন হবে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তারা আশাবাদী।

এদিকে, দেশে সরিষা উৎপাদনের শীর্ষস্থান দখল করেছে সিরাজগঞ্জ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ৯০ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। জেলায় উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর ও তাড়াশে সবচেয়ে বেশি সরিষা আবাদ হয়েছে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৮৭,১১৫ হেক্টর। জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সরিষা আবাদ হয়েছে উল্লাপাড়ায় ২৪ হাজার ৬০৫ হেক্টর, আর তাড়াশে আবাদ হয়েছে ১০,৪৭০ হেক্টর। জেলায় আবাদকৃত সরিষার মধ্যে বারি ১৪, ১৭, ১৮, বিনা ৪, ৯ এবং টরি ৭ জাতের সরিষা চাষ করা হয়েছে।

সয়াবিন তেলের ঘাটতি পূরণের জন্য দেশে তেলজাতীয় ফসল উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা শুরু হয়েছে। উৎপাদনের এই ধারা অব্যাহত থাকলে ভোজ্যতেলের চাহিদার একটি বড় অংশ দেশেই পূরণ করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এ.কে.এম. মঞ্জুরে মওলা বলেন, ভোজ্যতেলের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের জন্য আমরা সরিষার চাষাবাদ বৃদ্ধি করতে সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছি। এবছর জেলায় ৯০ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। কৃষকদের উদ্দীপনা বৃদ্ধির জন্য সার ও বীজ প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে।