ঢাকা | ডিসেম্বর ২১, ২০২৫ - ৫:৪১ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

রাণীনগরে বধ্যভূমিতেই নির্মিত হলো স্মৃতিসৌধ

  • আপডেট: Sunday, December 21, 2025 - 12:07 am

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগরে আতাইকুলা পালপাড়া বধ্যভূমিতে প্রায় ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হলো স্বাধীনতা যুদ্ধের শহিদদের স্মরনে স্মৃতিসৌধ। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর শহিদদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য স্মৃতিসৌধ নির্মাণ কাজ প্রায় ১০ মাস আগে শুরু হয়। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের রং তুলি আর সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ। এর মধ্য দিয়ে শহিদ পরিবারের সদস্যদের কিছুটা দাবি দাওয়া পূরণ হতে শুরু করেছে। দীর্ঘ সময় ধরে ৫২ জনের এই গণকবরটি অযত্নে অবহেলায় ঝোপ-ঝাড়ের মধ্যে পরে ছিলো।

সরকার আসে সরকার যায় এই গণকবরের উন্নয়নের ছোঁয়া তেমন দৃশ্যমান ছিলো না এমনই আক্ষেপ করে বলেন, শহিদ পরিবারের সদস্যরা। জানা গেছে, উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের আতাইকুলা পালপাড়া গ্রাম। ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল পাক হানাদার বাহিনী তাদের স্থানীয় দোসর রাজাকার আলবদরদের পত্যক্ষ সহযোগিতায় পালপাড়া গ্রাম ঘেরাও করে।

সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পাক-বাহিনী ও তাদের দোসররা সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারের বৃদ্ধ ও যুবকদের ধরে নিয়ে আতাইকুলা গ্রামের সুরেস্বর পালের বাড়ির আঙ্গীনায় একত্রিত করে। পাক সেনারা ব্রাশ ফায়ারে ৫২ জন মুক্তিকামী জনগণকে নির্বিচারে হত্যা করে।

এ সময় পাক-বাহিনী গনহত্যা, লুটপাট ও নারী নির্যাতনসহ ধ্বংসলীলা চালিয়ে নওগাঁ শহরের উদ্দেশে চলে যায়। পাক হানাদার বাহিনীর ব্রাশ ফায়ারে সুরেশ্বর পাল, সতীশ চন্দ্র পাল, যুগেশ্বর চন্দ্র পাল, লকেশ্বর চন্দ্র পালসহ ৫২ জন নিহত হন। ৫২ জন শহিদের তাজা রক্তে সে দিন নওগাঁর ছোট যুমনা নদীর পানি লাল হয়ে গিয়েছিল। নির্যাতিত নারী ও স্বজনদের হৃদয় বিদারক আর্তনাথ ও কান্নায় সে দিন রাণীনগর উপজেলার আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে। ঘটনার পর শহিদ পরিবারের সদস্যরা ৫২ জনকে একই স্থানে গণকবর দিয়ে রাখে। পারিবারিক উদ্যোগে তারা আংশিক ইটের প্রাচীর ও বাঁশের বেড়া দিয়ে গণকবরটি ঘেরাও করে রেখেছিলো।

সেই স্থানে শহিদের স্মৃতি রক্ষায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহযোগিতায় প্রায় ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে নওগাঁর গণপূর্ত বিভাগ এই স্মৃতিশোধের নির্মাণ কাজ প্রায় ১০ মাস আগে শুরু করেন। ইতিমধ্যে কাজ শেষ হয়েছে। আগামী সপ্তাহে হস্তান্তর হতে পারে এমনটাই বলছে নওগাঁ গণপূর্ত বিভাগ।

শহিদ পরিবারের সদস্য গৌতম পাল জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বাবাসহ ৫২জনকে পাক-বাহিনীরা হত্যা করে চলে যায়। এই লাশগুলো আমরা গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে যুদ্ধকালীন সময়ে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়। প্রায় ৫৪বছর পর তাদের স্মরণে এখানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হলো।

এতেকরে আমরা শহিদ পরিবার একটু হলেও শান্তির নিশ্বাস ফেলছি। নওগাঁর গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জাহিদ হাসান জানান, ৮০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে রাণীনগর উপজেলার আতাইকুলা বধ্যভূমির স্মৃতিসৌধের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। সামনে সপ্তাহের মধ্যে আমরা হস্তান্তর করবো।