ঢাকা | ডিসেম্বর ২১, ২০২৫ - ৫:৩৮ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

রাজশাহীতে জেঁকে বসেছে শীত

  • আপডেট: Sunday, December 21, 2025 - 12:33 am

দুর্ভোগে জনজীবন, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী:

স্টাফ রিপোর্টার: পৌষের শুরুতেই রাজশাহী মহানগরসহ এর আশপাশের অঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত। গত এক সপ্তাহ ধরে জেঁকে বসা শীতের সঙ্গে গতকাল শনিবার সকাল থেকে যোগ হয়েছে ঘন কুয়াশা ও টানা হিমেল বাতাস। গতকাল সকাল থেকেই মৃদু বাতাস ও কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে রাজশাহীর নগরজীবন।

শনিবার সকালে শুরু হয় ঘন কুয়াশা। দুপুর পর্যন্ত কুয়াশাচ্ছন্ন ছিল পুরো নগরী। এতে রাস্তাঘাটে মানুষের উপস্থিতি যেমন কমেছে, তেমনই দোকানপাটও দেরিতে খুলছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। পৌষের শুরুতেই উত্তরের জেলা রাজশাহীতে শীতের প্রকোপ বেড়েছে। এদিকে, শীত নিবারণে রাজশাহী শহরের বিভিন্ন এলকায় শীতের কাপড়ের বাজারগুলোও জমে ওঠেছে। এছাড়াও শীতের তীব্রতা বাড়ায় রাজশাহীতে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। হাসপাতালগুলোতে ভর্তি রোগীদের মধ্যে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। এসব রোগীর মধ্যে শিশু ও বয়স্করাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। আর আক্রান্তদের বেশিরভাগই ডায়রিয়ায় ভুগছেন।

রাজশাহীর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শনিবার দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৬ টায় জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ৯৬ ভাগ, বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬ কিলোমিটার। আগের দিন শুক্রবার সর্ননিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত এক সপ্তাহে গড়ে দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত দুদিন ধরে বেড়েছে বাতাসের তীব্রতা। আবহাওয়া অফিস বলছে, চলতি সপ্তাহে উত্তরাঞ্চলের তাপমাত্রা আরও ২ ডিগ্রি কমার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়ে রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক রাজিব খান বলেন, শুক্রবারের তুলনায় গতকাল শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমেছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে হিমেল হাওয়া বেড়েছে রাজশাহীতে, যা আরও কয়েকদিন বইতে পারে। ফলে শীতের তীব্রতা বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নগরবাসীর দুর্ভোগ: গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই উত্তরাঞ্চলজুড়ে হিমেল হাওয়া বইছে অবিরত। রাতে ছিল হিমেল বাতাস, সেইসঙ্গে কুয়াশায় ঢেকে ছিল চারদিক। গতকাল সকালে সূর্যের দেখা না মেলায় বেড়েছে শীতের তীব্রতা। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে নিম্নআয়ের মানুষসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের। বুধপাড়া রেল বস্তিতে থাকা বিভিন্ন বয়সের মানুষ আগুন জ্বেলে শরীর গরম রাখছেন। কেউ চা হাতে নিয়ে কাঁপছেন, কেউ গায়ে মোটা কম্বল জড়িয়ে নীরবে বসে রয়েছেন। তাদের দাবি, রাজশাহীতে এখনও সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে শীত বস্ত্র দেয়া হয়নি। ফলে গরম কাপড়ের অভাবে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটছে তাদের। রাজশাহী নগরীর বুধপাড়া এলাকার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক সফিকুল ইসলাম বলেন, ভোরে কাজে বের হব ভাবছিলাম, কিন্তু উঠে দেখি বাতাস বইছে। কিছুক্ষণ থেমে সকাল ৭টার দিকে বের হয়েছি। বাতাসের কারণে টেকা কষ্টকর হয়ে গেছে। হাতে গ্লাভস না থাকলে ঠান্ডায় হাত জমে যায়। মাফিন নামে এক স্কুলছাত্রী বলে, স্কুল নেই তবে কোচিংয়ে যাচ্ছি। শুক্রবারও এতো শীত লাগেনি, শনিবার যতটা লাগছে। শীত বাড়িয়েছে হিমেল হাওয়া। সকালে বের হওয়া একেবারেই কঠিন হচ্ছে। কাশিয়াডাঙা এলাকার মুদি দোকানী আব্দুল রশীদ বলেন, গত রাত থেকেই বাতাস অনুভূত হচ্ছিল। রাতেও কুয়াশা পড়েছে দেখলাম। সকালে এর তীব্রতা বেড়ে এখন জবুথবু অবস্থা। শীতের এমন তিব্রতা বাড়তে থাকলে স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় প্রভাব পড়তে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

শীতবস্ত্র কিনতে ভিড়: শীতের তিব্রতা বাড়ায় রাজশাহী নগরের কুমারপাড়া এলাকা থেকে সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত শীতের কাপড়ের বাজার জমে ওঠে। সপ্তাহে প্রতি শুক্রবার এই বাজার বসে। বাজারটি ‘হলিডে মার্কেট’ নামে স্থানীয়ভাবে পরিচিত। ব্যবসায়ীরা বলেন, রাজশাহীতে শুক্রবার বেশির ভাগ বিপণিবিতান বন্ধ থাকে। বিশেষ করে জামাকাপড়ের বড় দোকানগুলো বন্ধ থাকায় এসব দোকানের বিক্রয়কর্মী ও কর্মচারীরা এক দিন ছুটি কাটানোর বদলে ব্যবসা করেন। দোকানে থাকা বিক্রি না হওয়া পোশাক ও ঢাকা থেকে আনা কম দামি পোশাক নিয়ে ফুটপাতে একদিনের জন্য তাঁরা বেচাবিক্রি করেন। এ জন্য ভোরের দিকে এসে তাঁদের দোকানের জায়গা দখলে নিতে হয়। বেচাবিক্রি চলে রাত –৯টা ১০ টা পর্যন্ত। তবে শহরের বাইরে থেকে অনেকে বিক্রির জন্য সাপ্তাহিক এই বাজারে পোশাক নিয়ে আসেন। শুক্রবার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, নগরের কুমারপাড়া থেকে সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ফুটপাতে হলিডে মার্কেটে শীতের কাপড়ের দোকানগুলোয় উপচে পড়া ভিড়। ফুটপাতের দুই ধারে বসা এই বাজারে ৫০ থেকে ৭০০ টাকায় শীতের কাপড় বিক্রি হচ্ছে। রাস্তার দুই ধার ছাড়াও সাহেব বাজারের মূল রাস্তাসহ পুরাতন নাটোর রোডের দুই পাশেও শীতের পোশাক নিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা।

শীত বাড়ায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি: শীতের তীব্রতা বাড়ায় রাজশাহীতে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। হাসপাতালগুলোতে ভর্তি রোগীদের মধ্যে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। এসব রোগীর মধ্যে শিশু ও বয়স্করাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। আর আক্রান্তদের বেশিরভাগই ডায়রিয়ায় ভুগছেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালের মেডিসিন ও শিশু ওয়ার্ডে ঠান্ডাজনিত রোগীর চাপ বেড়েছে। বহির্বিভাগে অন্য রোগীর সংখ্যা কমলেও ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেড়েছে। প্রতিদিন ৩ শ’ থেকে সাড়ে ৩ শ’ রোগী ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগের উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন, যার মধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই বেশি। হাসপাতালের চিকিৎসকদের মতে, শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার সংক্রমণ তুলনামূলক বেশি দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন বয়সী রোগীরাও এসব সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন। আক্রান্তদের অনেকেই ডায়রিয়া, জ্বর-সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কে বিশ্বাস গণমাধ্যমকে বলেন, ঠান্ডাজনিত রোগ থেকে বাঁচতে গরম কাপড় ব্যবহার করতে হবে এবং যতটা সম্ভব ঠান্ডা পরিবেশ এড়িয়ে চলতে হবে। শিশুদের ঠান্ডা বাতাস থেকে দূরে রাখতে হবে। শৈত্যপ্রবাহের সময় শিশুদের ঘরের বাইরে কম বের করার পরামর্শ দেন তিনি। পাশাপাশি ঘরে ঠান্ডা বাতাস ঢুকতে না পারে, সেদিকেও অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে বলেন।