ঢাকা | ডিসেম্বর ১৯, ২০২৫ - ১০:৫৪ অপরাহ্ন

শিরোনাম

জমি নিয়ে বিরোধে রক্তক্ষয়ী হামলা, আতঙ্কে দিন কাটছে কৃষক পরিবারের

  • আপডেট: Friday, December 19, 2025 - 12:07 am

মোহনপুর প্রতিনিধি: রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার মাটিকাটা গ্রামে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে এক কৃষক ও তার পরিবারের ওপর একাধিক দফা হামলা, মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনায় নারীসহ অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত এক নারী বর্তমানে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। ভুক্তভোগী কৃষকের নাম জয়নাল আবেদীন (৪৮)। তার বাবার নাম আইনাল হক। জয়নাল অভিযোগ করে জানান, অভিযুক্তরা তার প্রতিবেশী। দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিল, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংঘর্ষে রূপ নেয়।

অভিযোগ অনুযায়ী, গত ১০ ডিসেম্বর সকালে আনুমানিক ৯টার দিকে জয়নাল আবেদীনের বাড়ির সামনে থাকা একটি বেল গাছ থেকে জোরপূর্বক বেল পাড়তে যান অভিযুক্ত রিফাত (১৯)। এতে জয়নাল আবেদীন বাধা দিলে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয় এবং একপর্যায়ে রজিনা (৩০) ও রিফাত তাকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারেন। এতে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোলা জখম হয়। এসময় তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তার কন্যা শিরিনা খাতুন নিলাকেও (১৪) মারধর করে আহত করা হয়। একই দিন দুপুর আনুমানিক ১২টার দিকে অভিযুক্তরা আবারও জয়নাল আবেদীনের বসতবাড়ির সামনে এসে গালিগালাজ শুরু করে। অভিযোগে বলা হয়, আ. রশিদ (৬৫) হামলার নির্দেশ দেন। এরপর নওশাদ (৫০) বাশের লাঠি দিয়ে জয়নাল আবেদীনকে মারধর করেন। স্বামীকে রক্ষা করতে এগিয়ে এলে তার স্ত্রী সাবিনাকে (৩৫) মুসাদ (৪০) হাতে থাকা হাসুয়া দিয়ে মাথার বাম পাশে কোপ দেন। এতে তিনি গুরুতর রক্তাক্ত জখম হন। এছাড়া শিল্পী (৩০) ও এমরান (২২) বাশের লাঠি দিয়ে তাকে মারধর করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

স্থানীয়রা এগিয়ে এলে অভিযুক্তরা প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে আশপাশের লোকজন ও সাক্ষীদের সহায়তায় আহতদের ভ্যানে করে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক গুরুতর আহত সাবিনাকে ভর্তি করেন এবং জয়নাল আবেদীন এবং তার মেয়ে শিরিনা খাতুন নিলাকে (১৪) প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রিলিজ দেন। এ মারধরের ঘটনায় জয়নাল আবেদীন বাদী হয়ে মোহনপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-০৬। মামলাটি বর্তমানে বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। ওই মামলার কয়েকজন আসামি জামিনে মুক্ত হয়ে আসার পর গত ১৫ ডিসেম্বর খ্রিস্টাব্দ রাত আনুমানিক ৩টার দিকে সংঘবদ্ধভাবে তার বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় তারা এলোপাতাড়ি ঢিল নিক্ষেপ, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং শাবল দিয়ে দরজা-জানালার গ্রিল ভাঙচুরের চেষ্টা করে। একপর্যায়ে তারা জয়নাল আবেদীন ও তার পরিবারকে বাড়ি ছাড়তে বলে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। পরদিন সকালে জয়নাল আবেদীন বিষয়টি থানা পুলিশকে অবগত করেন এবং একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগকারী জয়নার আবেদীন জানান, আমি, আমার মেয়ে এবং আমার স্ত্রীকে তারা গুরুতর রক্তাক্ত জখম করলে আমি এবং আমার মেয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিই। আমার স্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় কোপ দেয়ার কারণে গত ১০ তারিখ থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থাকার পরে ডাক্তার আমার স্ত্রীর মাথার সিটি স্ক্যান করানোর জন্য রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে রেফার করেন। অভিযুক্তরা ঘটনার সাক্ষীদেরও বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারসহ এলাকার সচেতন মহল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, মুকুল চন্দ্র বলেন, মামলার পরপরই মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করে মহামান্য আদালতে প্রেরণ করেছি। বাকি আসামিরা জামিনে রয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারের প্রতি সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে।