ঢাকা | ডিসেম্বর ১৮, ২০২৫ - ১১:৫৭ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

মজুরী বাড়লেও দামে সংসার চালাতে হিমশিম ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর নারী শ্রমিকদের

  • আপডেট: Thursday, December 18, 2025 - 12:22 am

মিজান মাহী, দুর্গাপুর থেকে: এক লাফে নারী শ্রমিকের মজুরী বাড়ছে ৫৫০ টাকা। যা আগে ছিল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। এখন মজুরী বাড়লেও অসন্তোষ্ট ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর নারী শ্রমিকেরা। দেশের বাজারে সব কিছুর দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর নারী কৃষি শ্রমিকদের মজুরীও।

তবুও ভাল নেই এই নারী শ্রমিকেরা। আমন কাটার পর বেকার বসে থাকতে হবে ৩ মাস। জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর নারী শ্রমিক দিপালী কন্ডু, শীতা রাণী, কৃঞ্চা রাও সহ অনেকেই। তাদের সংসারে টানাপোড়ন যেন কিছুইতে কাটছে না। মজুরী বাড়লেও পরিবারের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর নারী শ্রমিক দিপালী কন্ডু জানান,তিনি নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর থেকে প্রায় ১২ বছর আগে কাজের সংকটে এই উপজেলায় আসেন। থাকেন একটি আমবাগানে তাবু গেড়ে। যখন এখানে এসেছিলে তখন তার মজুরী ছিল ১২০ টাকা। তারপরও ভালই চলছিল তার সংসার। ১২০ থেকেই সেই মজুরী এখন ৫৫০ টাকা। তারপরও টানাপোড়ণে দিনগুনছে তার সংসার।

দিপালী কন্ডু বলেন, আমন ধান কাটা শেষ হয়ে গেলে বসে থাকতে হবে প্রায় ৩মাস। এ নিয়ে সংসারে খরচ চালাবো কীভাবে দুচিন্তায় প্রতিটি দিন কাটছে তার। দাম বেড়েছে সবকিছুর। এখন পেঁয়াজের কেজি ১২০টাকা। শীতের সবজির বাজারও চড়া। মাছ মাংসের বাজারে তো যেতেই পারি না। কিনে খাবো ক্যামনে। সামনে কী হবে জানি না।

দুর্গাপুর কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর অধিকাংশ পরিবারের নারীরা মাঠে কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করে সংসার চালান। বিগত বছরগুলোতে মজুরী কম হলেও বর্তমানে নারী শ্রমিকদের মজুরী বাড়ছে। এ উপজেলায় স্থানীয় নারী শ্রমিক সহ প্রায় সাড়ে তিন থেকে ৪ হাজার হাজার ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর নারী কৃষি শ্রমিক রয়েছেন।

এদিকে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর নারী শ্রমিকদের সংসার চলে খেত খামারে কৃষি কাজ করে। সবজি, চাল, ডাল, তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মুল্যের দামসহ জীবন যাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব নারী শ্রমিকরা দিশেহারা হয়ে পরেছেন। দ্রব্যমুল্যের সাথে সংগতি রেখে আরও মজুরী বৃদ্ধির দাবী জানিয়েছেন তারা।

মাঠে ঘুরে কৃষকেরদর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একজন পুরুষ শ্রমিকের একদিনের মজুরী যেখানে সাড়ে ৬শ থেকে ৬৫০ টাকা । খেতে দিতে হয় তিনবেলা। সেখানে একজন নারী শ্রমিককে দেয়া হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। যা গত বছর ছিল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। গতকাল বুধবার দুপুরে দুর্গাপুর পৌর এলাকার দেবীপুর গ্রামে ধান কাটছিলেন ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর নারী শ্রমিক শীতা রাণী। কথা হয় তার সঙ্গে।

শীতা রানী জানান, আমন ধান কাটা ও লাগানোর সময় নারী শ্রমিকের চাহিদা বাড়ে। কিন্তু এখন যে সবজি চাল ডালের দাম, তাতে সংসার চলে না। মজুরী কিছুটা বাড়লেও ঋণের বোঝা ভারী হচ্ছে।

ঋণ কেন বাড়ছে জানতে চাইলে শীতা আরও বলেন, আমাদের সবসময় কাজ থাকেনা। এখন আমন কাটা তাই আমাদের কদর বাড়ছে। এরপর আবার তিন মাস বসে থাকতে হবে। বোরো ধান লাগানোর সময় আবার কাজে ফিরব। এখন যা আয় রোজগার করব, তাই দিয়ে আমার সংসার চালাতে হবে। বাজারে সব জিনিসের দাম বেড়েছে। ইচ্ছে থাকলেও আমরা সব জিনিস কিনে খেতে পারি না।

আরেক নারী শ্রমিক কৃঞ্চা রাও বলেন, পুরুষরা তিনবেলা খেয়ে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা পাচ্ছেন। আর আমাদের ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর বলে একবেলা খাবারই অনেকেই দিতে চায় না। তারপরও আমরা সকাল ৭টায় আসি, বিকেল ৫টায় কাজ থেকে উঠি। বাজারদর হিসেবে আমাদের নারীদের কাজের মজুরী আরও বাড়ানো উচিত।

জানতে চাইলে দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাহারা শারমিন লাবনী বলেন, কৃষি কাজে নারীদের অবদান অনেক। এখন আমন কাটার মৌসুম শেষ দিকে। নারী শ্রমিকেরা কাজ করার ফলে কৃষকেরা তাদের ঘাটতি মেটাতে পারে। এই নারী শ্রমিকদের মজুরী খুবই সামন্য ছিল। তবে এবার বাজার দ্রব্যর সঙ্গে এই নারী শ্রমিকদের মজুরী কিছুটা বেড়েছে।