বাগমারায় পাকা সড়ক ধসে পড়ল নদীতে, ৫০ গ্রামবাসীর দুর্ভোগ
স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার মোহনগঞ্জ থেকে পবার নওহাটা পর্যন্ত পাকা সড়কের ডান পাশের প্রায় ৩শ মিটার অংশ বারানই নদীতে ধসে পড়েছে।
ফলে সড়কটি দিয়ে ভারী ও মাঝারি ধরনের যানবাহন চলাচল একদমই বন্ধ হয়ে গেছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় এলাকার পরিবহনমুখী প্রায় ৫০টি গ্রামের মানুষ।
খবর পেয়ে এলজিইডি কর্মকর্তারা ট্রাফিক সাইন স্থাপন ও বালু ফেলে ‘হালকা’ যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করলেও স্থানীয়দের দাবি, ধারাবাহিকভাবে সড়কটি যেভাবে নদীতে ধসে পড়া শুরু হয়েছে, অতি দ্রুত কার্যকর পরিকল্পনার মাধ্যমে তা পুন:মেরামত না করলে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
গতকাল সোমবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বাগমারার মোহনগঞ্জ থেকে পবা উপজেলার নওহাটা পর্যন্ত সংযোগ সড়কের চেইনেজ ৫০০ মি. থেকে ৮০০ মি. পর্যন্ত অংশের (ডান পার্শ) প্রায় ৩০০ মিটার পার্শ্ববর্তী বারানই নদীতে ধসে পড়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ধসের পরিমাণ প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গত ৩০ নভেম্বর আকস্মিকভাবে সড়কটি ধসে যাওয়ায় ওই পথগামী ভারী ও মাঝারি ধরনের সকল যানবাহন; এমনকি পায়ে হেঁটে চলাচলও পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় পরিবহনমুখী জনসাধারণকে। খবর পেয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মুুনছুর রহমানের নেতৃত্বে উপজেলা এলজিইডি’র কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। দুর্ঘটনা এড়াতে তাদের তত্ত্বাবধানে সেখানে ট্রাফিক সাইন স্থাপন করা হয় এবং বালু ও অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে আপাতত পায়ে হাঁটার মতো চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। তবে ভারি ও মাঝারি ধরনের যানবাহন চলাচল এই পর্যন্ত বন্ধ আছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন সড়কটি দিয়ে ৫০টি গ্রামের প্রায় হাজার-হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। বিশেষ করে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বাগমারার চকহায়াতপুর, মোহনগঞ্জ, হায়াতপুরসহ দুর্গাপুরের আনুলিয়া, সুখানদিখী-দাওকান্দি এলাকার মানুষ। এই সড়কটি দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স, আকাশ পথের যাত্রী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়িসহ বিভিন্ন কোম্পানির বাহন মালামাল নিয়ে যাতায়াত করে থাকে।
বাগমারার পার্শ্ববর্তী উপজেলা আত্রাই থেকে খুব কম সময়ে রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স রামেক হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকেও যাতায়াত করে। কেউ আবার সড়কটি ব্যবহার করে হযরত শাহমুখদুম (র:) রাজশাহী বিমানবন্দরে আসেন। এছাড়াও গ্রামের মানুষ শাকসবজিসহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে এই সড়কটি দিয়েই রাজশাহী শহরে খুব কম সময়ে যাতায়াত করে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বাগমারা উপজেলার দক্ষিণের শেষপ্রান্ত মোহনগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মোড় থেকে সড়কটি চলে গেছে দাওকান্দি, বড়গাছী, নওহাটায়। সড়কটি দিয়ে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গামী ছাত্র ছাত্রী, অফিস আদালতসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষও যাতায়াত করে থাকেন। মোহনগঞ্জ-নওহাটা সংযোগ সড়কের বারানই নদীর তীরবর্তী মোহনগঞ্জের জামরুলের বাড়ির সামনে সড়কের অংশটি ধসে পড়ার কারণে সড়কটি স্থানীয়ভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
মোহনগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা ভ্যানচালক মুন্না শেখ বলেন, সড়কটি যাতায়াতের জন্য অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। মোহনগঞ্জ ও হাসনিপুরে রোববার ও বৃহস্পতিবার হাট বসে। সড়কটি নদীতে ধসে পড়ায় যানবাহন চলাচল করতে না পারায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
দিপালী নামের এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, দাওকান্দিতে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। মোহনগঞ্জ ডিগ্রি কলেজসহ মোহনগঞ্জে আছে মসজিদ মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সড়কটি ধসে পড়ার কারণে শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে যেতেও নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এই কলেজ শিক্ষার্থী দ্রুত সড়কটি সংস্কারের দাবি জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাগমারা উপজেলা প্রকৌশলী মুুনছুর রহমান বলেন, ঘটনার দিনই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সেখানে যেকোনো দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রাফিক সাইন স্থাপন করা হয়েছে। বালুসহ বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে সাময়িকভাবে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভারি ও মাঝারি ধরনের যানবাহনগুলোকে আপাতত চলাচলে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। তাদেরকে পাশের একটি মাটির সড়ক দিয়ে চলাচলের জন্য বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো পর গত ৩ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী মহোদয়, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলার সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী এবং ল্যাবরেটরী টেকনিশিয়ানসহ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। যেহেতু সড়কের পাশে নদী আছে, তাই চাইলেই এখানে কোনকিছু করা যাবে না। বিশেষজ্ঞ ডিজাইন দলের পরামর্শ লাগবে। ইতিমধ্যেই সড়কটি মেরামত এবং পরামর্শের জন্য রাজশাহীর হেড অফিস থেকে ডিজাইন দল ও ঊর্ধ্বতন কর্তকর্তাদের জানানো হয়েছে। সেখান থেকে সাড়া এলেই আমরা পুর্ণাঙ্গভাবে কাজ শুরু করবো।
সোনালী/জগদীশ রবিদাস









