ঢাকা | নভেম্বর ২৮, ২০২৫ - ১০:৫৮ অপরাহ্ন

লোকসান মাথায় নিয়েই রাজশাহী চিনিকলে আখ মাড়াই শুরু

  • আপডেট: Friday, November 28, 2025 - 10:09 pm

স্টাফ রিপোর্টার: দীর্ঘদিনের লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়েই রাজশাহী চিনিকলে শুরু হয়েছে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের আখ মাড়াই কার্যক্রম।

শুক্রবার সুগার মিলস লিমিটেড’র আয়োজনে রাচিক কেইন কেরিয়ার প্রাঙ্গনে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন করা হয়েছে। বিকেল ৩ টায় রাজশাহী সুগার মিলের কেইন কেরিয়ারে আখ ফেলে মাড়াই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব ওবায়দুর রহমান।

জানা যায়, ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠার পর এক সময় লাভজনক প্রতিষ্ঠান হলেও ধীরে ধীরে লোকসানের ঘরে পড়ে রাজশাহী চিনিকল। বিশেষ করে ২০১০ সালের পর থেকে প্রতিবছরই ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকার লোকসান গুনতে হয়েছে সরকারকে। তবুও প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ না করে বিশাল অঙ্কের ভর্তুকি দিয়ে সচল রাখছে সরকার।

গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে লোকসানের পরিমাণ কিছুটা কমেছে উল্লেখ করে চিনিকল কর্তৃপক্ষ বলছে- এবার লোকসান আরও কমবে বলে আশাবাদী। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিষ্ঠালগ্নের পুরোনো আদিকালের মেশিনপত্র ব্যবহার করতেই প্রতি বছর বিপুল অর্থ ব্যয় হচ্ছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন ও অতিরিক্ত জনবল কমালে দ্রুত লোকসান কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে মনে করেন তারা।

চলতি মৌসুমে ৭৫ হাজার মেট্রিক টন আঁখ মাড়াইয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত বছরের লক্ষ্যমাত্রা (৫৫ হাজার মেট্রিক টন) থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। গত বছর বাস্তবে ৭০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই হয়েছিল। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ থেকে ১২ হাজার মেট্রিক টন বেশি আখ আসবে বলেই মনে করছে কর্তৃপক্ষ। কৃষককে দেয়া হয়েছে ১১ কোটি টাকা কৃষিঋণ।

এছাড়া ৪ থেকে ৫শ’ অতিরিক্ত কৃষকও সরবরাহ করবেন কলের জন্য আখ। প্রতি একরে ২০ থেকে ২৫ মেট্রিক টন ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা গত কয়েক বছরের তুলনায় বেশি। কৃষকদের উৎসাহিত করতে এবার আখের দাম ও পরিবহন খরচ দুটোই বাড়ানো হয়েছে। সেন্টারে ১০০ কেজি (১ কুইন্টাল) আখ দিলে মিলবে ৬১২ টাকা সরাসরি চিনিকলে দিলে পাবেন ৬২৫ টাকা। এ বছর ৪২টি সেন্টার থেকে আখ সংগ্রহ করা হবে। পাশাপাশি অনেক কৃষক সরাসরি কলে আখ দিতে পারবেন, এতে পরিবহন ভাড়াও বেশি পাবেন তারা।

রাজশাহী চিনি কলের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) গোলাম মোস্তাফা সারোয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, এবার আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি। লোকসান কমাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দেশের উত্তরাঞ্চলের একমাত্র সরকারি চিনিকলটিকে টিকিয়ে রাখতে সরকার ও কৃষকদের যে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চলছে-চলতি মৌসুমে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শুক্রবার আখ মাড়াইয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আকতার, রাজশাহী পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের সচিব মোহাম্মদ মুজিবর রহমান। রাজশাহী সুগার মিলস লিমিটেড’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবীর এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসএফআইসি চেয়ারম্যান ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রশিদুল হাসান।

উপস্থিত ছিলেন পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরাফাত আমান আজিজ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ মেহেদী হাসান, হড়গ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও পবা-মোহনপুর আসনের জামায়াতের মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, পবা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সহকারী অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক, রাজশাহী সুগার মিলস ইউনিয়নের সভাপতি মাসুদ রানা সহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং রাজশাহী সুগার মিলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব ওবায়দুর রহমান বলেন, রাজশাহী সুগার মিলস অন্যতম একটি মিল। চাষিরাই আমাদের শক্তি। সুগার মিল বাঁচলে কৃষক, শ্রমিকরা বাঁচবে। চাষিরা ঠিকমত আখ সরবরাহ করলে মিলটি আবারও ঘুরে দাঁড়াবে। মিলের আধুনিকায়নে সরকার কাজ করছে। কৃষকদের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার আখের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। আখ দেয়ার সাথে সাথে মোবাইলে মেসেজ এবং পেমেন্টসহ অন্যান্য সহযোগিতা অব্যাহত আছে। সুগার মিলটিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

উল্লেখ্য, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৫০০ একর জমিতে, এর মধ্যে আখ চাষ হয়েছে ৫৪১৬ একর জমিতে। আর প্রতি ১০০ কেজি আখ মাড়াই করে ৫.৫ কেজি চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৬০০০ একর জমিতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।