ঢাকা | নভেম্বর ২৮, ২০২৫ - ১০:৫৯ অপরাহ্ন

একটি হত্যাকাণ্ডে পুরো পরিবার নিঃস্ব

  • আপডেট: Friday, November 28, 2025 - 9:48 pm

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর আত্রাই উপজেলার দিঘীরপাড় পশ্চিমপাড়া গ্রামের দিনমজুর আব্দুর রহিম শেখ (৪০) ছিলেন পরিবারের একমাত্র ভরসা। ক্যান্সার আক্রান্ত স্ত্রী, শারীরিক-মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়ে, বয়সের ভারে ন্যুব্জ মা এবং চার বছরের একটি শিশুসন্তান তাদের সেবা-যত্ন, চিকিৎসা ও ভরণপোষণ সব তাঁকেই সামলাতে হতো। কিন্তু চাচাতো ভাই ও ভাতিজাদের হামলায় নিহত হওয়ায় নিঃস্ব হয়ে গেছে পুরো পরিবার। হতবাক গ্রামবাসীও; সবার মনে একটাই প্রশ্ন- এ পরিবার এখন কীভাবে চলবে?

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রহিমের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, বারান্দার চৌকিতে কাতর শুয়ে আছেন বৃদ্ধা মা রবিজান বেওয়া (৭২)। তার পাশেই ক্যান্সারে আক্রান্ত স্ত্রী মর্জিনা বিবি (৩২)। চৌকির নিচে মাটিতে নীরবে খেলছে প্রতিবন্ধী মেয়ে বেহেস্তি খাতুন (১৩)। বাড়ির আঙিনায় ছুটাছুটি করছে অবুঝ শিশু নীরব (৪)। সে এখনও বোঝেই না, তার বাবা আর কোনোদিন ফিরবে না। স্বজন আর প্রতিবেশীরা এসে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করলেও সবার চোখে অশ্রু, মনে একটাই ভয় ‘এই পরিবার কীভাবে বাঁচবে?’

স্ত্রী মর্জিনা ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বলেন, প্রায় ১৫ বছর আগে তিন শতক জায়গা চাচাতো ভাই খালেকের কাছে বিক্রি করেন রহিম। কয়েক দিন আগে খালেক ওই জমির কাগজপত্র ও পরিচয়পত্রের কপি চায়। রহিম বলে ২-৩ দিন পরে দেবে। এতে খালেক রেগে যায়।’ তিনি আরও বলেন, সোমবার রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেলে প্রায় ১০টার দিকে খালেক, আরিফ, বারিকসহ ১৩-১৪ জন এসে রহিমকে ডেকে নেয়। বাইরে বের হতেই আবার কাগজ চায়। না দিতে পারায় লোহার শাবল দিয়ে মারতে থাকে।

আমার শাশুড়ি বাঁচাতে গেলে তাঁকেও মারে।’ স্থানীয়রা গুরুতর আহত রহিমকে উদ্ধার করে আত্রাই হাসপাতালে নিলে অবস্থা খারাপ হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে মঙ্গলবার বিকেলে তাঁর মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার তাঁকে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় রহিমের বড় বোন মরিয়ম বিবি ৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৫-৬ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

রহিমের ভগ্নিপতি খলিলুর রহমান বলেন, রহিম ছাড়া এই পরিবারের উপার্জনকারী কেউ নেই। তিনি নিজের পরিবারকে বাঁচাতে দিনরাত খেটেছেন। অথচ তাঁকেই হত্যা করল!’ তিনি দ্রুত গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। গ্রামবাসী সোহেল, বাচ্চু মণ্ডল ও জিল্লুর বলেন, ঘাতকরা রহিমকে নয়, পুরো পরিবারকেই ধ্বংস করেছে।’ আত্রাই থানার ওসি মুনসুর রহমান জানান, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিরা পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সম্রাট হোসেন জানান, ‘পরিবারটি খুবই অসহায়। ব্যক্তিগতভাবে এবং ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সহায়তার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।’ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও দ্রুত সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউএনও নুরে আলম সিদ্দিক।