সাহস ও আস্থায় পাঠকের হৃদয়ে প্রথম আলো
স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, নানা চড়াই-উতরাই ও ভীতির পরিবেশেও প্রথম আলো তার সাহসিকতা এবং বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার ধারা বজায় রেখেছে। বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় যে ভীতি ও চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছিল, তা মোকাবিলা করে পত্রিকাটি মানুষের আস্থার জায়গা ধরে রেখেছে।
শনিবার বিকেলে নগরীর অলকার মোড়ে রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির মিলনায়তনে সুধী সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। এতে সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, সম্পাদক, শিক্ষক, সমাজকর্মী, কৃষি উদ্যোক্তা, কর্মকর্তা, সংবাদপত্র এজেন্টসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন এবং তাদের মতামত তুলে ধরেন।
সুজনের রাজশাহী জেলার সভাপতি আহমদ সফি উদ্দিন সাংবাদিকতায় নিরপেক্ষতা বজায় রাখা এবং সিনিয়র সিটিজেনদের (প্রবীণ নাগরিক) জন্য বিশেষ পাতা চালুর দাবি জানান। এ ছাড়া সীমান্তের মানুষের খবর, সড়কে নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা, খেলাধুলার পাতায় গ্রামবাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ক্রীড়াচর্চাকে তুলে ধরার এবং আন্তর্জাতিক পাতায় রাজনীতির বাইরের সামাজিক উন্নয়নের খবর প্রকাশের অনুরোধ করেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহা. ফরিদ উদ্দীন খান বলেন, ‘আমি মনে করি প্রথম আলোর সবচেয়ে বড় অর্জন বাংলাদেশে যেখানে আস্থার একটা ব্যাপক সঙ্কট প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা নেই, সরকারের প্রতি আস্থা নেই, অনেক ক্ষেত্রে আস্থা নেই কিন্তু এমন একটা পত্রিকা বাংলাদেশে আমাদের সামনে আছে প্রথম আলো, যার উপরে বাংলাদেশের মানুষের আস্থা আছে। এটা একটা বড় অর্জন। আমি মনে করি যে বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা এবং আস্থা অর্জন করতে পেরেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় যখন কোন নিউজ দেখি তারপর আমি চেক করি যে প্রথম আলোতে এটা আসছে কি না, যতক্ষণ না প্রথম আলোতে এটা না দেখি ততক্ষণ সেই সংবাদটা সম্পর্কে আমার আস্থাটা জন্মে না। এখনো আমি সেই চেকটা করে থাকি।’
সমাবেশে পাঠকরা পত্রিকার আকার কিছুটা কমিয়ে আনা এবং প্রিন্ট সংস্করণের খবরের নিচে অনলাইন লিংক বা কিউআর কোড যুক্ত করার প্রস্তাব দেন। এছাড়া ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য ও গবেষণাধর্মী লেখার পরিমাণ বাড়ানোর অনুরোধ জানান পাঠকেরা। সুধী সমাবেশে প্রথম আলো নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়েছে। প্রথম আলোর সম্পাদক উপস্থিত পাঠকের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন।
প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, রাজশাহীর সঙ্গে প্রথম আলোর দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক রয়েছে এবং এই অঞ্চল সব সময়ই পত্রিকার বড় পাঠকভিত্তি তৈরি করেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপে দেখা গেছে, ছাপা ও অনলাইন মিলিয়ে দেশের মোট পাঠকের ৫৭ শতাংশ প্রথম আলো পড়েন এবং ৬৪ জেলার মধ্যে ৬১ জেলায় প্রথম আলো শীর্ষে রয়েছে।
তিনি জানান, ১৯৯৮ সালে প্রথম আলো যাত্রা শুরুর সময় লক্ষ্য ছিল সত্যনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন এবং নিজস্ব আয়ে টিকে থাকা। তখন ১৬ পৃষ্ঠা দিয়ে শুরু হলেও ধীরে ধীরে তা সর্বোচ্চ ৪০ পৃষ্ঠার ছাপা সংস্করণ ছাপা হয়েছে এবং একসময় প্রতিদিনের ছাপার সংখ্যা ৫ লাখেরও বেশি হয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন।
তিনি বলেন, ডিজিটাল যুগে ছাপা সংস্করণের ওপর চাপ বাড়লেও অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রথম আলোর অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক। প্রথম আলো সম্পাদক বলেন, সংবাদমাধ্যম এখন ‘প্রিন্ট ফাস্ট, অনলাইন ফাস্ট, মোবাইল ফাস্ট, ভিডিও ফাস্ট’ যুগ পার হয়ে ‘এআই ফাস্ট’ যুগে প্রবেশ করেছে। প্রযুক্তির এই দ্রুত পরিবর্তন সাংবাদিকতার সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত রাখা এবং মিথ্যা তথ্য, অপপ্রচারের বিরুদ্ধে লড়াই করা।
তিনি জানান, প্রথম আলো প্রতিদিন যাচাই-বাছাই, ফ্যাক্ট-চেকিং ও সতর্কতার ওপর জোর দিচ্ছে যেন মানুষের আস্থা অটুট থাকে। অতীতে বিভিন্ন সরকারের সময় বিজ্ঞাপন বন্ধ হওয়া, মামলা, হুমকি, প্রচারে বাধা সৃষ্টি- সবকিছুই প্রথম আলোর ওপর এসেছে। এমনকি সংসদে প্রথম আলোকে ‘শত্রু’ আখ্যা দেয়া হয়েছিল। তবুও সত্য প্রকাশের নীতি থেকে পত্রিকা সরে যায়নি এবং পাঠকদের সমর্থনেই এগিয়ে চলছে। মতিউর রহমান বলেন, সব চাপ-বাধা সত্ত্বেও সত্য, সততা ও পাঠকের বিশ্বাসই প্রথম আলোর শক্তি, আর সেই শক্তির ভিত্তিতেই আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা হবে।











