ঢাকা | নভেম্বর ২২, ২০২৫ - ১১:০০ অপরাহ্ন

বাঘায় স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় স্বামী সুরুজ গ্রেপ্তার

  • আপডেট: Saturday, November 22, 2025 - 10:13 pm

বাঘা প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাঘায় স্ত্রীর শরীরে ডিজেল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের মামলার প্রধান আসামি গৃহবধূ অনন্যা খাতুনের স্বামী সুরুজকে (৩২) ঢাকা মহানগরীর পল্লবী থানাধীন মিরপুর-১২ (লালডেগ) নামক এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে ছদ্মবেশে রিকশাচালক হিসেবে কাজ করতো।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রদ্যুৎ কুমার প্রামানিক জানান, গত শুক্রবার দিবাগত রাতে র‌্যাব-৪ ও পুলিশের যৌথ অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে থানায় আনা হয়। গতকাল শনিবার দুপুরে তাকে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদনসহ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। সে বাঘা পৌরসভার চক নারায়ণপুর গ্রামের শহিদুল মাঝির ছেলে। চলতি মাসের ১ তারিখে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে।

জানা যায়, প্রেম ঘটিত সম্পর্কে পরিবারের অমতে বিয়ে করেন সুরুজ-অনন্যা দম্পতি। মাদকাসক্ত সুরুজ বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন সময় নেশার টাকা ও যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন করতেন। মৃত্যুর আগে গৃহবধূ তাঁর মাকে ফোন করে নির্যাতনের বিষয়টি জানান। হত্যাকাণ্ডের পর সুরুজ আত্মগোপনে চলে যায়। তার পরিবারের দাবি ছিল, অভিমানে আত্মহত্যা করেছেন। প্রতিবেশী আজিজুল হক ও সান্টু জানিয়েছেন, বাঁচাও-বাঁচাও চিৎকার শুনে তারা ওই বাড়িতে গিয়ে বাড়ির গেট বন্ধ দেখেন। ধাক্কা দিলে বাড়ির লোকজন দরজা খুলে দিলে আগুনে ঝলসানো গৃহবধূ অনন্যা খাতুনকে পড়ে থাকতে দেখেছেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১০ বছর আগে এজাহারনামীয় প্রধান আসামি সুরুজের (৩২) সাথে অনন্যা খাতুন মুন্নির (২৫) বিয়ে হয়। তাদের ২টি সন্তানও রয়েছে। বিয়ের পর শ্বশুর-শাশুড়ি অনন্যাকে প্রায়ই গালিগালাজ ও অপমান করতো বলে অভিযোগ আছে। তাদের প্ররোচনাতেই সুরুজ হঠাৎ আড়াই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। অনন্যা খাতুনের পরিবার তার সংসারে সুখের কথা বিবেচনা করে ২০১৮ সালের মে মাসে এক লাখ টাকা যৌতুক প্রদান করে। এর পরেও সুরুজ তার পরিবারের সদস্যদের প্ররোচনায় আরও দেড় লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। যৌতুকের টাকা দিতে অস্বীকার করলে অনান্যকে বিভিন্ন সময়ে মারপিট এবং শারীরিক নির্যাতন ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতো সুরুজ।

এ নিয়ে গত মাসের ৩১ তারিখ অনন্যার সাথে সুরুজের ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে সে স্ত্রীকে চড়-থাপ্পড় মারে। ঘটনার দিন ১ নভেম্বর ভোর ৪ টায় যৌতুকের টাকার জন্য অনন্যার ওপর রাগ করে বাড়ির উঠানে নিয়ে তাকে পুড়িয়ে মারার উদ্দেশে গায়ে ডিজেল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয় সুরুজ। তার ডাক-চিৎকারে স্থানীয়রা অনন্যাকে উদ্ধার করে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানকার চিকিৎসক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করলে সকাল ৮টায় রামেকের বার্ন ইউনিটে ভর্তির পর বিকাল পৌণে ৬টায় চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। পরে অনন্যার সহোদর বড় ভাই মিঠু বাদি হয়ে সুরুজসহ তার পিতা-মাতাকে আসামি করে বাঘা থানায় হত্যা মামলা দাযের করেন। বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফম আছাদুজ্জামান জানান, গ্রেপ্তার সুরুজকে গতকাল শনিবার আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। মামলায় জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রযেছে।