ঢাকা | নভেম্বর ২২, ২০২৫ - ১২:২৮ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

ঢাকা ও আশেপাশে তীব্র ভূমিকম্পে দুই শিশুসহ নিহত ১০, আহত ছয় শতাধিক

  • আপডেট: Friday, November 21, 2025 - 10:49 pm

৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প

সোনালী ডেস্ক: ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে অন্তত ১০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে বংশালের কসাইটুলি এলাকায় তিন পথচারী, রাজধানীর মুগদায় এক নিরাপত্তাকর্মী, রূপগঞ্জে এক শিশু, নরসিংদীতে এক শিশুসহ পাঁচজন মারা গেছে।

এদিকে ভূমিকম্পে আহত হয়ে ছয় শতাধিক মানুষ দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রায় দুইশজন ভর্তি হয়েছেন।

শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হালনাদাকৃত তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে সরকারি হাসপাতালগুলোতে মোট ৬০৬ জন আহত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ১৬৭ জনকে ভর্তি করা হয়েছে এবং গুরুতর অবস্থায় ১৬ জনকে অন্য হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।

তবে এর বাইরেও বহু রোগী দেশের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং কোথাও কোথাও ভর্তি রয়েছেন বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এই তথ্য এখনো হালনাদাগকৃত তথ্যে যুক্ত হয়নি। ফলে আহতের সংখ্যা হাজারের বেশি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

ঢাকা
পুরান ঢাকায় কসাইটুলিতে একটি ভবনের রেলিং ভেঙে পড়ে তিন পথচারী নিহত হয়েছেন। তারা হলেন রাফিউল ইসলাম (আনুমানিক ২০ বছর), আব্দুর রহিম (৪৮) ও তাঁর ছেলে মেহরাব হোসেন (১২)। নিহতদের মধ্যে রাফিউল ইসলাম স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের শিক্ষার্থী বলে পরিবার জানিয়েছে। আব্দুর রহিমের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রকোনায়। তিনি সুরিটোলা স্কুলের পেছনে ভাড়া বাসায় থাকতেন।

এছাড়া মুগদার মদিনাবাগে ভূমিকম্পে নির্মাণাধীন ভবনের রেলিং ধসে মাথায় পড়ে মাকসুদ (৫০) নামের এক নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। আজ শুক্রবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে মুগদা মদিনাবাগ মিয়াজি গলিতে ঘটনাটি ঘটে। স্থানীয়রা তাঁকে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক দুপুর পৌনে ১২টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন। মুগদা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ভূমিকম্পে দেয়াল ধসে ফাতেমা নামে ১০ মাসের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের ইসলামবাগ ৫ নম্বর ক্যানেল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নরসিংদী
সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের গাবতলী এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল থেকে ইট ধসে পাশের বাড়ির ছাদের ওপর পড়ে। এতে ওই বাড়ির বাড়ির সানশেড ভেঙে মো. ওমর (৮), তার বাবা দেলোয়ার হোসেন ও দুই বোন আহত হয়।

তাদের প্রথমে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাবা ও ছেলেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নিয়ে গেলে ছেলে মো. ওমরকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাবা দেলোয়ার হোসেনও মারা গেছেন।

পলাশ উপজেলার মালিতা পশ্চিমপাড়া গ্রামের কাজেম আলী ভূঁইয়া (৭৫) মাটির ঘরের দেয়ালের নিচে চাপা পড়েন। সেখান থেকে তাঁকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে নরসিংদী ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অপর দিকে শিবপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফজাল হোসাইন জানান, ভূমিকম্পের সময় গাছ থেকে পড়ে আহত হন শিবপুর উপজেলার ইউনিয়নের আজকীতলা পূর্বপাড়া গ্রামের শরাফত আলীর ছেলে ফোরকান মিয়া (৪৫)। আহত অবস্থায় তাঁকে উপজেলা হাসপাতালে আনার পর মারা যান তিনি।

ডাঙ্গা ইউনিয়নের ইসলামপাড়া নয়াপাড়ার বাসিন্দা নাসিরউদ্দিন (৬৫) ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কে স্ট্রোক করে মারা গেছেন বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন।

শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে এই ভূমিকম্প হয়। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির তীব্রতা ছিল ৫ দশমিক ৭। উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর মাধবদী। ভূমিকম্পটিকে মাঝারি মাত্রার বলছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আহত ছয় শতাধিক

ভূমিকম্পে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছয় শতাধিক ব্যক্তি আহত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে প্রায় ২০০ জন আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের শিক্ষার্থী আরাফাত (২০) ও নুরুল হুদা (২০), হাজী মুহম্মদ মহসীন হলের তানজিল হোসেন (২৬), সাদিক শিকদার (২৬), তানভীর আহমেদ (২৫) ও ফারহান তানভীর রাজিব (২৪)। এছাড়া ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকা থেকে আহত হয়ে এসেছেন-তানভীর (২২), সুবিয়া (১৪), সোহেল (৩৫), হারুনুর রশিদ (৫৬), আবুল খায়ের (৬০), অজ্ঞাতপরিচয় রিকশাচালক (৪০), হারুনুর রশিদ (৫৫), রিপন (২৮), বিল্লাল (৬), ফারজানা তানভীর (২৩), প্রভা (১৮), গালিব (১৮), মধুসুদন (৩০), সজীব (২২), নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের আবুল খায়ের (৩০) ও ইব্রাহীম (২৫)।

পাশাপাশি আরমানিটোলার ঘটনায় আরও ১০ জনেরও বেশি লোক মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আর নরসিংদীতে আহত হয়েছেন শতাধিক। তারা নরসিংদী সদর হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া গাজীপুর মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তায় এলাকায় ভূমিকম্পের সময় তাড়াহুড়া করে নামার সময় একটি কারখানার ৬ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে হাইজাদী ইউনিয়নসহ বিভিন্ন গ্রামে একাধিক বাড়ির দেয়াল ভেঙে গেছে। এতে অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন।

কোথাও হেলে পড়েছে ভবন, কোথাও ফাটল-কোথাও আগুন:

ভূমিকম্পে কোথাও হেলে পড়েছে ভবন। কিছু কিছু ভবনে দেখা দিয়েছে ফাটল, কোথাও খসে পড়েছে পলেস্তরা। আবার কোথাও কোথাও আগুন লাগারও খবর পাওয়া গেছে। গণমাধ্যমে পাঠানো এক খুদে বার্তায় ফায়ার সার্ভিস জানায়, পুরান ঢাকা আরমানিটোলার কসাইটুলিতে আটতলা ভবন ধসে পড়ার খবর পাওয়া যায়। সদরঘাট ও সিদ্দিকবাজার ফায়ার স্টেশন থেকে দুটি ইউনিট সেখানে গমন করে। পলেস্তরার কিছু আলগা অংশ ও কিছু ইট খসে পড়েছিল। ফায়ার সার্ভিস জানায়, খিলগাঁওয়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পার্শ্ববর্তী দোতলা একটি ভবনে ইট পড়ে একজন আহত হয়েছেন।

স্থানীয় লোকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। সূত্রাপুরের স্বামীবাগে আট তলা একটি ভবন অন্য একটি ভবনে হেলে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। সূত্রাপুর স্টেশন ঘটনাস্থলে গেছে। ফায়ার সার্ভিস আরও জানায়, কলাবাগানের আবেদখালী রোডে একটি সাততলা ভবন হেলে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশন থেকে একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গেছে। এখনো হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ভবন ঠিক আছে, লোকজন আতঙ্কিত হয়ে ফোন করেছে। ভূমিকম্পে বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগারও ঘটনা ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিস জানায়, বারিধারা এফ ব্লকের ৫ নং রোডে একটি বাসায় আগুনের সংবাদ পাওয়া গেছে। বারিধারা ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট অগ্নিনির্বাপনে কাজ করছে। আগুনটি ভূমিকম্পের জন্য কিনা তা জানা যায়নি বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এছাড়া মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় একটি বাসায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। গজারিয়া ফায়ার স্টেশন থেকে দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়েছে।