লোকসান নিয়েই আখ মাড়াইয়ে যাচ্ছে রাজশাহী চিনি কল
ক্ষতি কমার আশা কল কর্তৃপক্ষের:
স্টাফ রিপোর্টার: দীর্ঘদিনের লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়েই আগামী ২৮ নভেম্বর থেকে রাজশাহী চিনি কলে শুরু হচ্ছে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের আখ মাড়াই কার্যক্রম। এ উপলক্ষে ইতিমধ্যে জোর প্রস্তুতি চলছে। মেশিনপত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সেফটি চেকিংসহ সব ধরনের কাজ করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কল কর্তৃপক্ষ আশা করছে, চলতি মৌসুমে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি আখ মাড়াই হবে।
১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠার পর একসময় লাভজনক প্রতিষ্ঠান হলেও ধীরে ধীরে লোকসানের ঘরে পড়ে রাজশাহী চিনি কল। বিশেষ করে ২০১০ সালের পর থেকে প্রতিবছরই ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকার লোকসান গুণতে হয়েছে সরকারকে। তবুও বিশাল অঙ্কের ভর্তুকি দিয়ে সচল রাখছে সরকার। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে লোকসানের পরিমাণ কিছুটা কমেছে উল্লেখ করে কল কর্তৃপক্ষ বলছে-এবার লোকসান আরও কমবে বলে আশাবাদী।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিষ্ঠালগ্নের পুরোনো আদিকালের মেশিনপত্র ব্যবহার করতেই প্রতি বছর বিপুল অর্থ ব্যয় হচ্ছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন ও অতিরিক্ত জনবল কমালে দ্রুত লোকসান কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে মনে করেন তারা। চলতি মৌসুমে ৭৫ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াইয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত বছরের লক্ষ্যমাত্রা (৫৫ হাজার মেট্রিক টন) থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
গত বছর বাস্তবে ৭০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই হয়েছিল। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ থেকে ১২ হাজার মেট্রিক টন বেশি আঁখ আসবে বলেই মনে করছে কর্তৃপক্ষ। কৃষককে দেয়া হয়েছে ১১ কোটি টাকা কৃষিঋণ। এছাড়া ৪ থেকে ৫শ অতিরিক্ত কৃষকও সরবরাহ করবেন কলের জন্য আখ। প্রতি একরে ২০ থেকে ২৫ মেট্রিক টন ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা গত কয়েক বছরের তুলনায় বেশি। কৃষকদের উৎসাহিত করতে এবার আখের দাম ও পরিবহন খরচ দুটোই বাড়ানো হয়েছে। সেন্টারে ১০০ কেজি (১ কুইন্টাল) আখ দিলে মিলবে ৬১২ টাকা সরাসরি চিনি কলে দিলে পাবেন ৬২৫ টাকা।
এ বছর ৪২টি সেন্টার থেকে আখ সংগ্রহ করা হবে। পাশাপাশি অনেক কৃষক সরাসরি কলে আখ দিতে পারবেন, এতে পরিবহন ভাড়াও বেশি পাবেন তারা। মাঠ পর্যায়ে আখ কলে আনার প্রস্তুতি জোরদার হয়েছে। কলের ভেতরে চলছে মেশিনপত্র ধোয়া-মোছা, লাইনচেক, মেরামতসহ আনুষঙ্গিক কাজ। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই সব প্রস্তুতি শেষ হবে।
রাজশাহী চিনি কলের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) গোলাম মোস্তাফা সারোয়ার বলেন, মড়াই উদ্বোধন উপলক্ষে আমরা দ্রুতগতিতে কাজ করছি। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা আগামী ২৮ নভেম্বর উদ্বোধন করবেন। এবার আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি। লোকসান কমাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দেশের উত্তরাঞ্চলের একমাত্র সরকারি চিনি কলটিকে টিকিয়ে রাখতে সরকার ও কৃষকদের যে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চলছে-চলতি মৌসুমে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।









