ঢাকা | নভেম্বর ১৫, ২০২৫ - ১১:৫৫ অপরাহ্ন

শিরোনাম

আসামির বক্তব্য প্রচার হওয়ায় আরএমপি কমিশনারকে তলব, চার পুলিশ প্রত্যাহার

  • আপডেট: Saturday, November 15, 2025 - 9:39 pm

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আব্দুর রহমানের ছেলে তাওসিফ রহমান সুমনকে (১৭) খুনের অভিযোগে পুলিশি হেফাজতে থাকা আসামি লিমন মিয়ার (৩৬) বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ায় আদালতে একটি বিবিধ মামলা হয়েছে।

এ বিষয়ে স্বশরীরে ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য আদালত রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার (আরএমপি) মোহাম্মদ আবু সুফিয়ানকে আদালতে তলব করেছেন। মামলার আগামী ধার্য তারিখ ১৯ নভেম্বর। এর আগেই পুলিশ কমিশনারকে আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাজশাহীর রাজপাড়া থানার আমলি আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদ এই আদেশ দেন। আদালতের পেশকার আমজাদ আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, ‘গণমাধ্যমে প্রচারিত বিভিন্ন সংবাদ হতে অত্র আদালতের গোচরীভূত হয়েছে যে ১৩ নভেম্বর রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আব্দুর রহমানের ভাড়া ফ্ল্যাটে অভিযুক্ত লিমন মিয়া কৌশলে প্রবেশ করে তাঁর নাবালক পুত্র তাওসিফ রহমানকে ধারালো ছুরি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি আঘাত ও শ্বাসরোধে মৃত্যু নিশ্চিত করে এবং তাঁর স্ত্রী তাসমিন নাহার লুসিকে হত্যার উদ্দেশে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করে। অভিযুক্ত লিমন মিয়াকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।

‘পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে দেখা যায়, অভিযুক্ত লিমন মিয়া পুলিশি হেফাজতে থাকাবস্থায় বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ভিকটিমকে দোষারোপ করে বক্তব্য প্রদান করে, যা আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি বনাম রাষ্ট্র ৩৯ বিএলডি ৪৭০সহ বিভিন্ন মামলায় প্রদত্ত মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

‘এ অবস্থায় পুলিশি হেফাজতে থাকাবস্থায় ভিকটিমকে দোষারোপ করে মিডিয়ার সামনে বক্তব্য প্রদান করার সুযোগ প্রদান করায় কেন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা আগামী ধার্য তারিখের মধ্যে স্বশরীরে এ আদালতে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।’

এদিকে রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আব্দুর রহমানের ছেলে তওসিফ রহমান তৌসিফকে (১৫) হত্যা এবং স্ত্রী তাসমিন নাহার লুসিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ৪ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

শনিবার বিকেলে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তাদের প্রত্যাহার করা হয়। রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র উপ-কমিশনার (ডিসি) গাজিউর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রাজপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু শাহাদাত, কনস্টেবল আব্দুস সবুর, মাহফুজার রহমান ও মিঠু সরদারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। জানা গেছে, ঘটনার একদিন পর পুলিশ হেফাজতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হত্যা মামলার আসামি লিমন মিয়ার ভিডিও বয়ান রেকর্ড করে সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে আরএমপি কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ানকে শোকজ করে তাকে স্ব-শরীরে আদালতে জবাব দিতে তলব করা হয়েছে।

পুলিশ কমিশনারকে আদালতে তলবের ঘটনায় পুলিশের ভেতরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসামি লিমনের পাহারায় নিয়োজিত রাজপাড়া থানা পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও তিন কনস্টেবলসহ চারজনকে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্তের পর তাদের পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অধিকতর তদন্ত শুরু হয়েছে এবং বিভাগীয় মামলার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।

উল্লেখ্য, এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী নগরের ডাবতলা এলাকায় ভাড়া বাসায় খুন হয় বিচারকের ছেলে তাওসিফ। হামলায় আহত হন বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহার লুসিও। এ ছাড়া হামলাকারী লিমন মিয়া নিজেও ধস্তাধস্তিতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।