রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা: নিম্নআয়ের মানুষের দুর্ভোগ
স্টাফ রিপোর্টার: হেমন্তের মাঝামাঝি এসে রাজশাহীতে শীত জাঁকিয়ে বসতে শুরু করেছে। এরফলে হাসপাতালে বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। বেড়েছে নিম্নআয়ের মানুষের দুর্ভোগ। ভিড় বেড়েছে গরম কাপড়ের দোকানে।
রাজশাহীতে গতকাল ছিল এই মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। হটাৎ শীতের প্রকোপ বৃদ্ধিতে নিম্নআয়ের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। মানুষজন আক্রান্ত হচ্ছেন শীতজনিত অসুখে। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে বয়স্ক ও শিশুদের ভীড় দেখা যাচ্ছে বেশি। চিকিৎসকরা এসময় একটু সাবধানে চলাচল করতে পরামর্শ দিচ্ছেন।
শীতের তীব্রতা বৃদ্ধিতে দোকানিরা গরম কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। ক্রেতারাও ভিড় করছেন গরম কাপড় কেনাকাটায়। নিম্নআয়ের মানুষরা ভিড় করছেন ফুটপাতের গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দামও বাড়িয়েছেন দোকানিরা।
এদিকে এখন পর্যন্ত জেলার কোথাও দরিদ্র মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরন করার খবর পাওয়া যায়নি। শীতের শুরুতেই দরিদ্র শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরন করা উচিত বলে মনে করেন সচেতন মহল।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানায়, গতকাল শুক্রবার রাজশাহীতে তাপমাত্রা ছিল সর্বনিম্ন ১৪ দশমিক ৫ এবং সর্বোচ্চ ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আদ্রতা ছিল সকাল ৬ টায় ৮৬ শতাংশ এবং সন্ধ্যা ৬ টায় ৯৫ শতাংশ। এটি ছিল চলতি মৌসুমে রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
এ বছরের শীতের দাপট বিষয়ে আবহাওয়াবিদরা বলেন, নভেম্বরের শুরু লগ্নে একটু একটু করে শীতের আমেজ মিলছে প্রকৃতিতে। সারাদেশের কোথাও কোথাও দেখা মিলছে ভারী কুয়াশা। দেশে এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। গত বুধবার ভোরে ওই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মো. ওমর ফারুক জানান, গত বছরের তুলনায় এবার শীতের প্রকোপ বাড়তে পারে। গত বছরের উদাহরণ দিয়ে বলেন, গত বছর তো শীত কম ছিল সেই তুলনায় এবছর শীত বাড়বে। আমরা এখন পর্যন্ত উত্তরঅঞ্চলের জেলাগুলোতে শীতের দাপট বেশি দেখতে পেয়েছি।
শৈত্যপ্রবাহের সময় সন্ধ্যা থেকে সকাল দশটা পর্যন্ত কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকবে চারপাশ। কোথাও কোথাও দিনের বেলায়ও কুয়াশা দেখা যাবে। নভেম্বরের শেষের দিকে উত্তর অঞ্চলের রাজশাহী, দিনাজপুর এবং পঞ্চগড়ের মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে।
এদিকে শীতে রাজশাহীতে বেড়েছে সর্দি-জ্বরের প্রকোপ। পরিস্থিতি এমন যে অনেক ঘরে ঘরেই সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের প্রাদুভার্ব দেখা দিয়েছে। আক্রান্তদের অধিকাংশই শিশু। শিশুরা ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে স্কুলেও উপস্থিতি কমছে। এরপরে রয়েছেন বয়স্করা। গড়ে প্রতিদিন রাজশাহীর হাসপাতালে ৬০০-৭০০ রোগী আসছে সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে। বিশেষ করে হাসপাতালের বর্হিবিভাগে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীরা আসছে বেশি। যাদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা বেশি। এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ শিশুদের জ্বর-স্বর্দির সিরাপ বিতরণ করতে হচ্ছে বর্হিবিভাগের ডিসপেনসারি থেকে।
পবার বাগধানী এলাকার ৬৫ বছর বয়স্ক রোগী আমেনাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন মেয়ে রহিমা। তিনি বলেন, ‘গ্রামে প্রায় ১৫ দিন আগ থেকেই শীত পড়তে শুরু করেছে। ঠান্ডা পানিতে গোসল করার কারণে মায়ের সর্দি-জ্বর আর কাশি হয়েছে। হঠাৎ করে শীত শুরু হওয়ার কারণেই মনে হয় এটি হয়েছে।’ তাই চিকিৎসার জন্য তাকে রামেক হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। এলাকার অনেকেই এখন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের বর্হিবিভাগ সূত্র মতে, এ হাসপাতালে গড়ে মেডিসিন বিভাগেই ১৩-১৫শ’ রোগী আসে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে। তাদের মধ্যে এখন ৬০০-৭০০ রোগী আসছে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে।
এ হাসপাতালের বর্হিবিভাগের ডিসপেনসারির ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম জানান, ‘গড়ে প্রতিদিন ৩০০-৪০০ শিশুদের জ্বরের সিরাপ বিতরণ করা হচ্ছে। শীতের কারণে মনে হয় সর্দি-জ্বর বেড়েছে।’
হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে সর্দি-জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। কয়েকদিন গেলে আবার এটি ঠিক হয়ে যাবে। যেসব রোগী চিকিৎসা নিতে আসছে, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত।’










