ঢাকা | নভেম্বর ১৪, ২০২৫ - ১১:৫৫ অপরাহ্ন

শিরোনাম

চাঁপাইয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে চলছে চোরাই মোবাইলের কারবার

  • আপডেট: Friday, November 14, 2025 - 10:07 pm

সীমান্তে সক্রিয় দু’দেশের সিন্ডিকেট:

স্টাফ রিপোর্টার: চাঁপাইনবাবগঞ্জে হাত বাড়ালেই মিলছে চোরাই ও অবৈধপথে আসা মোবাইল ফোন। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের ছিনতাই হওয়া ফোন চলে আসছে বাংলাদেশে। প্রকাশ্যে চলছে এসব মোবাইল ফোনের বেচাকেনা। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিয়েও চোরাই মোবাইলের কারবার চলছে। এতে দুই দেশের চোরাই ফোন কারবারিদের সিন্ডিকেট রয়েছে। সূত্র বলছে, সীমান্তে বছরে কয়েক কোটি টাকার ভারতীয় মোবাইল ফোন চোরাচালান হয়ে আসে।

দেশের যে কয়টি সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে মোবাইল ফোন চোরাচালান হয় তার মধ্যে সোনামসজিদ অন্যতম। সোনামসজিদ স্থলবন্দরে পণ্য আমদানির আড়ালে ভারত থেকে মাদক ও অস্ত্রের পাশাপাশি মোবাইল চোরাচালান নতুন কোনো ঘটনা নয়। গত ২৪ সেপ্টেম্বর সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে পাথরের আড়ালে আসা মোবাইল ফোনের একটি চালান জব্দ করে স্থলবন্দর কাস্টমস। ওই চালানে আইফোনসহ বিভিন্ন দামি ব্র্যান্ডের ৪২টি মোবাইল ফোন ছিল।

সোনামসজিদ সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা মহানন্দা ব্যাটালিয়নের (৫৯ বিজিবি) তথ্য বলছে, গত তিন বছরে ১০৭ কোটি টাকার বেশি চোরাচালান পণ্য জব্দ করেছে তারা। এর মধ্যে ৩ হাজার ৩২৪টি ভারতীয় চোরাই মোবাইল ফোন রয়েছে। আটক করেছে ২৯১ জন চোরাকারবারিকে।

জানা গেছে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট পল্লী বিদ্যুৎ মোড় এলাকায় মহানন্দা ব্যাটালিয়নের (৫৯ বিজিবি) একটি বিশেষ টহল দল অবস্থান নেয়। এ সময় একটি মোটরসাইকেল থামানোর সংকেত দিলে আরোহীরা ব্যাগ ফেলে পালিয়ে যায়। চোরাকারবারিদের ফেলে যাওয়া ব্যাগ তল্লাশি করে ২৪টি ভারতীয় চোরাই মোবাইল ফোন উদ্ধার করে শিবগঞ্জ থানায় জমা দেয় বিজিবি।

এ ঘটনার পর আলমগীর নামে এক ব্যক্তি ফেসবুক লাইভে এসে দাবি করেন, তার ব্যাগে থাকা ৮ লাখ টাকা বিজিবি ছিনিয়ে নিয়েছে। তবে বিজিবির দাবি, গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী আলমগীর আলী দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় চোরাই মোবাইল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সেদিনও তিনি চোরাকারবারির কাছ থেকে ২৪টি মোবাইল সংগ্রহ করেছিলেন। দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগ তোলার পর বিষয়টি সামনে আসে। তবে বিজিবি বলছে, এটা একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অপচেষ্টা।

অভিযুক্ত চোরাকারবারি আলমগীরের চোরাই মোবাইল কেনার একটি খসড়া হিসাব সাংবাদিকদের হাতে এসেছে। সেখানে দেখা গেছে, তিনি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ২৪টি চোরাই মোবাইল কিনেছেন। যার মূল্য ৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে জমা দিয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। বিক্রেতার কাছে ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা বাকি রেখে অবৈধপথে আসা চোরাই মোবাইলগুলো নিয়ে আসছিলেন।

অনুসন্ধান বলছে, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে চুরি ও ছিনতাই হওয়া ফোন পাচার হয়ে চলে আসছে বাংলাদেশের বাজারে। চোরাই ফোন বেচাকেনার ‘হাব’ হিসেবে পরিচিত শিবগঞ্জ বাজার। এগুলোর বিশেষত্ব হচ্ছে- স্বল্প দামে জনপ্রিয় প্রায় সব ব্র্যান্ডের ফোন পাওয়া যায়। তবে ফোনগুলো পুরানো। মেলে বক্স ছাড়া।

এছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের অভিজাত মোবাইল শপিংমল আব্দুল মান্নান সেন্টু মার্কেটেও বিক্রি হচ্ছে দামি ব্র্যান্ডের ভারতীয় চোরাই ফোন। শুধু শপিংমল নয়, কানসাট বাজার, রানীহাটি বাজার, বারোঘরিয়া বাজারসহ বিভিন্ন মার্কেটেও ভারতীয় চোরাই ফোন বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে। সোনামসজিদ স্থলবন্দর কাস্টমসের সহকারী কমিশনার সাব্বির আহমেদ জিসান গণমাধ্যমকে বলেন, একেবারে নিশ্চিত তথ্য না থাকলে আমরা পণ্যবাহী ভারতীয় ট্রাকে তল্লাশি চালাতে পারি না। তাই বন্দর দিয়ে এক পণ্যের আড়ালে বা ট্রাকচালকদের মাধ্যমে পণ্য চোরাচালানের সুযোগ থেকেই যায়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, চোরাচালান বন্ধে বিজিবি সক্রিয় রয়েছে। গত তিন বছরে ২৯১ জনকে আটকসহ ১০৭ কোটি টাকার বেশি চোরাচালান পণ্য জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৩২৪টি ভারতীয় চোরাই মোবাইল ফোন রয়েছে।

সোনালী/জগদীশ রবিদাস