ঢাকা | নভেম্বর ১৩, ২০২৫ - ১১:২৯ অপরাহ্ন

নগরীতে বাড়িতে ঢুকে বিচারকের ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা, স্ত্রী আহত

  • আপডেট: Thursday, November 13, 2025 - 9:00 pm

নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সুপ্রিম কোর্ট

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আবদুর রহমানের ভাড়া বাসায় ঢুকে ছেলে তাওসিফ রহমানকে (সুমন) ছুরিকাঘাত করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বেলা আড়াইটার পর নগরের ডাবতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

দুর্বৃত্তের হামলায় বিচারক আবদুর রহমানের স্ত্রী তাসমিন নাহার গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র শংকর কুমার বিশ্বাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে, বিচার বিভাগের একজন সদস্যের পরিবারের ওপর এ নৃশংস আক্রমণ নিন্দনীয়, অমানবিক এবং গভীরভাবে বেদনাদায়ক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি জানিয়েছেন, ঘটনাটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সুপ্রিম কোর্ট।

আবদুর রহমানের গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলায়। তিনি পরিবার নিয়ে শহরের ডাবতলা এলাকায় ভাড়া বাড়ীতে বসবাস করতেন। তাওসিফ রহমান নবম শ্রেণিতে পড়ত বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। হাসপাতালের মুখপাত্র শংকর কুমার বিশ্বাস বলেন, তাসমিন নাহারকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার শরীরে অস্ত্রপচার করা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে একজন দুর্বৃত্তকে আটক করা হয়েছে। আহত হওয়ায় তাকেও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হামলাকারী হিসেবে আটক ব্যক্তির নাম ইমন। তার বাড়ি গাইবান্ধায়। ভবনে ঢোকার সময় ওই যুবক দারোয়ানের কাছে থাকা খাতায় নিজের নাম লিখেছেন লিমন। ‘বিচারকের ভাই’ পরিচয় দিয়ে তিনি পাঁচতলার ফ্ল্যাটে যান। ভবনটির দারোয়ান মেসের আলী বলেন, ওই যুবককে তিনি আগে কখনো দেখেননি। বিচারককে ভাই পরিচয় দেওয়ায় তিনি ঢুকতে দেন।

তবে তার আগে নাম ও মুঠোফোন নম্বর লিখিয়ে নেন। দুপুর আড়াইটার দিকে ওই যুবক ফ্ল্যাটে যান। এর প্রায় ৩০ মিনিট পর ফ্ল্যাটের গৃহকর্মী তাকে এসে জানান, ফ্ল্যাটে বিচারকের ছেলে ও স্ত্রীকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। এরই মধ্যে ভবনের অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারাও চলে আসেন। তারা সবাই ফ্ল্যাটে ঢুকে তিনজনকেই আহত পান। এরপর তিনজনকেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, নিহত সুমনের মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে। আর হামলকারী যুবক ও বিচারকের স্ত্রীকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। খবর পেয়ে গতকাল বিকেল ৫টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান।

পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, হামলাকারী ব্যক্তির পকেটে একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে তিনি চালক। তার সঙ্গে পূর্ববিরোধ থাকতে পারে। পুলিশ কমিশনার জানান, সিলেটের জালালাবাদ থানায় এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে জিডি করেছিলেন তাসমিন নাহার। কেন এই ঘটনা ঘটেছে তা তারা এখনো বিস্তারিত জানেন না।

এদিকে রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় শেষ খবর অনুযায়ী- বিচারকের স্ত্রীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে এবং অভিযুক্ত যুবককে রামেক হাসপাতালের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।

ঘটনাটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সুপ্রিম কোর্ট: বিচার বিভাগের একজন সদস্যের পরিবারের ওপর এ নৃশংস আক্রমণ নিন্দনীয়, অমানবিক এবং গভীরভাবে বেদনাদায়ক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।

বৃহস্পতিবার রাজশাহীর মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আবদুর রহমানের বাসভবনে ঘাতকের আঘাতে তার ছেলে নিহত এবং স্ত্রী আহত হওয়ার ঘটনায় এক শোক বার্তায় এ মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি।

শোক বার্তায় প্রধান বিচারপতি রাজশাহীতে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট ও সমগ্র বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছেন এবং আহত বিচারকের স্ত্রীর দ্রুত সুস্থতা কামনা করছেন।

সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন জানায়, প্রধান বিচারপতির নির্দেশনায় সুপ্রিম কোর্ট এ ঘটনা সংশ্লিষ্ট সব অগ্রগতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং দ্রুততার সঙ্গে একটি যথাযথ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সম্পন্নের জন্য সংশ্লিষ্ট সবার যথাযথ পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছে যাতে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটিত হয় এবং দোষীদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শাস্তি প্রদান করা হয়।