ঢাকা | নভেম্বর ১৩, ২০২৫ - ১:৪৫ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

ইট পাথরের নগরী, তবুও ফিরেছে শামুকখোল-পানকৌড়ি

  • আপডেট: Wednesday, November 12, 2025 - 10:41 pm

জগদীশ রবিদাস: সবুজে সমৃদ্ধ পদ্মাপাড়ের রাজশাহী নগরী এখন ইট-পাথরের শহরে পরিণত হয়েছে। উন্নয়নের দোহাইয়ে কাটা হয়েছে হাজারো গাছ। নির্মল বাতাসের স্বীকৃতি হারানো এই শহরে তবুও যে কয়টি গাছ বেঁচে আছে; সেসব গাছের মগডালের সবুজ পাতার আড়ালে উঁকি দিচ্ছে শত-শত সাদা-কালো বাহারি পাখি।

শহরের কোলাহল, এরই মাঝে বিশাল গাছটিই এখন শামুকখোল পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়। প্রতিদিন ভোরে শুরু হয় তাদের কিচিরমিচির, ডানা ঝাপটানো আর খাবার খোঁজার ব্যস্ততা। শুকনো ডাল, পাতা আর খড়কুটো জুড়ে তৈরি হয় এদের বাসা। প্রতি বছর বর্ষার শুরুতেই তারা ফিরে আসে এই গাছে-পুরনো ঠিকানায়, নতুন প্রজন্মের গল্প লিখতে। শহরের কোলাহলেই গাছগাছালিতে ফিরে এসেছে শামুকখোল আর পানকৌড়ি। প্রতিবছরই নিয়ম করে তারা আসছে, বাসা বাঁধছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আশে-পাশের গাছে। উঁচু গাছ থেকে নিচু গাছেও তারা আশ্রয় নিয়েছে। যা মুগ্ধ করছে সবাইকে।

দূর থেকে দেখলে মনে হয় হেলিপ্যাডে যেন হেলিকপ্টার নামছে। পুরো গাছের শাখা-প্রশাখায় সাদা আলো জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। বাতাসের দোলায় ডানার ঝাপটানি দিয়ে আকাশে পেজা তুলোর মেঘপুঞ্জের মতো ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ছে অসংখ্য পাখি। কেউবা বসে আছে ধ্যানে, কেউ বা বাচ্চাদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে, কেউ বা নিজেদের মধ্যে খুনশুটি করছে। কেউ বা আবার খাবার সন্ধানে উড়ছে আকাশজুড়ে। এ যেন অঘোষিত শামুকখোল পাখির অভয়ারণ্য।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পাশের দোকানি সমশের আলী জানান, প্রতিবছর জুন-জুলাই মাসে পাখিগুলো আসে। আবার ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসের দিকে চলে যায়। গত ১০-১২ বছর থেকে তিনি এমনটিই দেখছেন। সোহেলী পারভীন হাসপাতালে এসেছেন কাজে। তিনি গাছের দিকে মোবাইল তাক করে ছবি তুলছেন।

জানালেন, এতো কোলাহলে পাখি বাসা বাঁধে, আগে কখনো দেখেননি। তাই ছবি তুলে রাখছেন। প্রতিবছরই নিয়ম করে আসে শামুকখোল আর পানকৌড়ি। পাখিদের আগমনে খুশি স্থানীয় মানুষও। কেউ ছবি তোলে, কেউ আবার মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকে। নগরায়নের চাপে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক গাছ, কমে আসছে পাখিদের আবাস।

হাসপাতাল ও আশেপাশের এলাকায় এদের থাকার মানে-এলাকায় এখনো নিরাপত্তা ও খাদ্যভান্ডার টিকে আছে, মনে করেন প্রাণী বিজ্ঞানী অধ্যাপক এএম সালেহ রেজা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, হাসপাতাল ও তার আশেপাশে পাখিগুলো প্রতিবছর আসছে, মানে সেখানে তারা নিরাপদ, খাদ্য নিরাপত্তা ও বাচ্চা উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশ পাচ্ছে।