ঢাকা | নভেম্বর ১০, ২০২৫ - ১২:১৬ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

গলায় ছুরিকাঘাত নিয়ে তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি, মেডিকেলে রিকশাচালকের মৃত্যু

  • আপডেট: Sunday, November 9, 2025 - 10:34 pm

মোহনপুর প্রতিনিধি: রাজশাহীর মোহনপুরে এক অটোরিকশাচালক গলায় ছুরিকাঘাত নিয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে একটি বাজারে পৌঁছান। তবে সেখানে গিয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি। কারা তাঁর গলা কেটেছে বা তাদের নিয়ে কোনো তথ্য তিনি জানাতে পারেননি।

পরে গত শনিবার রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। ওই অটোরিকশার চালকের নাম ফজলুর রহমান (৩৫)। তাঁর বাড়ি তানোর উপজেলার অমৃতপুর গ্রামে।

পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাটি ছিনিয়ে নিতে তাঁর গলায় ছুরিকাঘাত করা হয়। গত শনিবার সন্ধ্যার পর কেশরহাট পৌর বাজার থেকে শিয়ালকোলা বাজারগামী সড়কের তিলাহারী গ্রামের বিলে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, নিহত ফজলুল করিম তানোর উপজেলার অমৃতপুর গ্রামের মৃত ইব্রাহিমের ছেলে। তিনি রাজশাহীর আসাম কলোনি বউবাজার এলাকায় পরিবারের সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন এবং পেশায় অটোরিকশা চালক ছিলেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সন্ধ্যার পর তিলাহারী গ্রামের বিলের রাস্তা দিয়ে ফজলুল করিম রক্তাক্ত অবস্থায় অটোরিকশা চালিয়ে কেশরহাট বাজারে পৌঁছান। তাকে রক্তাক্ত ও আহত অবস্থায় দেখে স্থানীয়রা উদ্ধার করে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। শনিবার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে।

নিহতের স্ত্রী এসনেহার খাতুন (৩০) জানান, আমার স্বামী শনিবার সকালে অটোরিকশা নিয়ে বের হন। সকাল ১০টার সময় বাড়ি ফিরে খেয়ে আবার বেরিয়ে যান। তিনি আমাকে চিংড়ি মাছ রান্না করতে বলেন, কারণ আমার বড় ছেলে অসুস্থ। খাওয়া-দাওয়া শেষে আমরা আমার মায়ের বাড়ি কাদিরপুর গ্রামে গিয়ে আমার মা ও ছোট ছেলে রাতুলকে আনতে যাব-এমনটাই বলেছিলেন আমার স্বামী। এরপর থেকে তার সঙ্গে আর কোনো কথা হয়নি।

মাগরিবের আজানের পর এক অচেনা লোকের ফোনে জানতে পারি, আমার স্বামী ছুরিকাঘাতে আহত অবস্থায় মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আছেন। আমার নাম্বারটি আমার স্বামী নাকি ওই লোকের মোবাইলে তুলে দিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, আমার স্বামীর নিজের অটোরিকশা ছিল। তার কাছে মোবাইল থাকত না। কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, আমরা জানি না। পরিবারের সবাই মিলে পরামর্শ করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ফজলুলের বড় ছেলে আল আমিন (১৭) রাজশাহীর আসাম কলোনি বউবাজার হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এবং ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে পবিত্র আল কুরআনের ৩০ পারার হাফেজ হয়। ছোট ছেলে রাতুল (১৩) বর্তমানে তানোর উপজেলার হরিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত এবং বর্তমানে নানাবাড়ি কাদিরপুর গ্রামে অবস্থান করছে।

রোববার এ সংবাদ লেখার সময় নিহতের মামা অমৃতপুর গ্রামের গুলবার হোসেন (নাজির উদ্দিন মন্ডলের ছেলে) জানান, লাশের ময়নাতদন্ত শেষে নিজ গ্রাম অমৃতপুরে পারিবারিক গোরস্থানে দাফনের প্রস্তুতি চলছে।

মোহনপুর থানার সেকেন্ড অফিসার মোদাচ্ছের হোসেন খান বলেন, এ বিষয়ে ঘটনার পর থেকেই ছায়া তদন্ত চলমান রয়েছে। আমরা অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছি। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে এখনও কোন লিখিত অভিযোগ হয়নি। তবে অভিযোগ প্রাপ্তি সাপেক্ষে মামলার অজু করা হবে।নিহতের পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয়দের মতে, ঘটনাটি পরিকল্পিত হতে পারে-তবে প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনে তদন্ত প্রয়োজন।