ঢাকা | নভেম্বর ১০, ২০২৫ - ৪:৫০ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

উত্তরাঞ্চলের মাঠে মাঠে আগাম শীতের সবজি

  • আপডেট: Sunday, November 9, 2025 - 10:27 pm

নওগাঁ ও সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: প্রকৃতিতে শীতের আমেজ এখনো পুরোপুরি জমে ওঠেনি। সকালে কুয়াশা খানিক পড়লেও সূর্য ওঠার সঙ্গেই তা মিলিয়ে যাচ্ছে। তবে এরই মধ্যে বাজারে আসতে শুরু করেছে শীতকালীন আগাম জাতের সবজি, তবে দাম বেশ চড়া। শুধু বাজারে নয়, জেলার মাঠে মাঠে এখন শুধু সবুজের সমারোহ। মাঠ জুড়ে রয়েছে আলু, শিম, করলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, বেগুন, লাল শাক, পুঁই শাক, পালংশাকসহ বিভিন্ন ধরনের শীতের আগাম শাক সবজি।

এসব সবজির ভালো দাম পাওয়ার আশায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খেত পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষকরা। আর এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সবজির ভালো ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। তারা বলছেন, বর্তমান বাজারে একটি ফুল কপির দাম ৫০-৭০ টাকা আর প্রতি কেজি মুলা ও বেগুন মাঠ থেকেই বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকায়। চলতি মৌসুমে জেলায় ২ হাজার ৭৫৫ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের সবজি চাষ হয়েছে। যা উত্তরাঞ্চলের সব জেলায় চেয়ে সবচেয়ে বেশি।

সরেজমিনে দেখা যায়, নওগাঁ সদর উপজেলার বর্ষাইল, কীর্ত্তিপুর, বক্তারপুর, চকআতিথা, তিলকপুর এলাকার মাঠগুলোতে শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, করলা, বেগুন, মুলা, লাউ, পটল, বরবটি, গাজর, পালং শাক, লাল শাকসহ হরেক রকম আগাম শীতের সবজি চাষ করা হয়েছে। কৃষকরা সবজির খেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার কেউ সার-বালাইনাশক প্রয়োগ করছেন।

বর্ষাইল গ্রামের সবজি চাষি মাহাফুজ আলম দিদার জানান, তিনি এ বছর আগাম শীতকালীন ফুলকপি ও মুলা চাষ করেছেন এক বিঘা জমিতে। প্রতি বিঘাতে হাল চাষ, মই, চারা রোপণ, বেড তৈরি, জমি নিড়ানি, পানি সেচ, সার এবং কীটনাশক বাবদ খরচ হয় ১০/১২ হাজার টাকা। আগাম এসব সবজি চাষে খরচ কিছুটা হয় তাই লাভের পরিমাণটা অনেক বেশি হয়। সব খরচ বাদ দিয়ে তিনি লাখ টাকার সবজি বিক্রি করবেন।

বদলগাছী উপজেলা বালুভরা গ্রামের কৃষক কোরবান আলী মণ্ডল বলেন, সব জমি আগে চাষ করে রেখেছি। কয়েকদিন আগের বৃষ্টিতে প্রায় সব জমি বীজ বপনের উপযুক্ত হয়েছিল। প্রায় প্রতিটি জমির মাটিতে রস রয়েছে। তেমন সেচ দিতে হয়নি। ভালো দামের আশায় আগাম এসব শীতকালীন সবজি চাষ করেছি। বর্তমানে বাজারে দাম ভালো। সামান্য কিছু লাল শাক ও ফুলকপি বিক্রি করেছি। ভালো দাম পেয়েছি।

নওগাঁ সদর উপজেলার কীর্ত্তিপুর গ্রামের আগাম সবজি চাষি সুলতানুল আলম মিলন বলেন, শীত মৌসুমের জন্য যেসব সবজি চাষ করা হয় তা থেকে দাম ভালোই পাওয়া যায়। কিন্তু পরিচর্যা বেশি করতে হয়। পোকামাকড়ের আক্রমণ বেশি হয়। আবার বৃষ্টি হলে চারা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে ভালো দামের আশায় আগাম সব সবজি চাষ করা হয়। তবে অসময়ে বাজারে এই সবজির চাহিদা থাকে অনেক। এ কারণে এই সবজিগুলো বাজারে বেশি দামে বিক্রি করা যায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক খলিলুর রহমান বলেন, বৃষ্টির পর থেকে কৃষকরা আগাম শীতকালীন বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ শুরু করেছিল। যা এরই মধ্যে বাজারে উঠতে শুরু করেছে। কৃষকরাও ভালো দাম পাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আগাম শীতকালীন সবজি চাষে একটু ঝুঁকি বেশি থাকে। এজন্য কৃষকদের সঠিক সময়ে এবং সঠিক পদ্ধতিতে সুষম সার, জৈব সার এবং কীটনাশকের সঠিক ব্যবহারের জন্য মাঠ পর্যায়ে তাদের পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। তবে কৃষকদের জন্য এ বছর আবহাওয়া বেশ অনুকূলে রয়েছে।

এদিকে, সিরাজগঞ্জেও এবার আগাম শীতকালীন বিভিন্ন সবজি বাগান চাষাবাদে বাম্পার ফলন হয়েছে। এ নতুন সবজি হাট-বাজারে উঠতে শুরু করেছে। দাম ভালো থাকায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। ইতিমধ্যেই এ চাষাবাদে স্বচ্ছলতা ফিরে পেয়েছে অনেক কৃষক। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জেলার ৯টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আগাম শীতকালীন সবজি চাষাবাদে ৮ হাজার ৫শ হেক্টর জমির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ চাষাবাদে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি চাষাবাদ করেছে কৃষকেরা। সবচেয়ে বেশি এ চাষাবাদ হয়েছে কাজিপুর, উল্লাপাড়া, রায়গঞ্জ, কামারখন্দ ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে। যমুনা নদীর তীরবর্তী ৫টি উপজেলার চরাঞ্চলেও লাভজনক এ চাষাবাদ করা হয়েছে।

এসব আগাম শীতকালীন সবজির মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছে-লাউ, কুমড়া, পালংশাক, মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ডাটা, সিম ও বেগুন। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও প্রায় ২ মাস আগে এসব সবজি চাষাবাদ করেছে কৃষকেরা। ইতিমধ্যেই এসব সবজি হাট-বাজারে উঠতে শুরু করেছে। নতুন সবজি হওয়ায় গ্রাহকের চাহিদাও বাড়ছে এবং দামও ভালো থাকায় কৃষকেরা খুশি। স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, খরচ কম, লাভ বেশি-এ শীতকালীন সবজি চাষাবাদে কৃষকেরা আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

সিরাজগঞ্জ কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক এ. কে. এম. মঞ্জুরে মওলা বলেন, আগাম শীতকালীন বিভিন্ন সবজি চাষাবাদে কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগ। বিশেষ করে কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে থেকেও পরামর্শ দিয়েছেন। এবার এ চাষাবাদে বাম্পার ফলন হয়েছে এবং অতিবৃষ্টিতে এ সবজি বাগানে কিছুটা ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে। তবে বাজার ভালো থাকায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।