ঢাকা | ডিসেম্বর ১৬, ২০২৫ - ৬:১৬ অপরাহ্ন

বদলির পরও চেয়ার ছাড়ছেন না রাজশাহী জেলা পরিষদ কর্মকর্তা

  • আপডেট: Wednesday, November 5, 2025 - 11:59 pm

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মু. রেজা হাসানকে বদলি করা হয়েছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রেষণ-১ অধিশাখা থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে তাকে বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ে বদলি করা হয়।

রাষ্ট্রপতির আদেশে ওই প্রজ্ঞাপনে সই করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্নসচিব আবুল হায়াত মো. রফিক।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের বর্ণিত কর্মকর্তাকে (উপসচিব) বদলিপূর্বক নামের পাশে বর্ণিত পদে প্রেষণে নিয়োগের নিমিত্ত তাঁর চাকরি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হলো। জনস্বার্থে জারি করা এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে।

বদলির এই আদেশে গত ৬ অক্টোবর ২০২৫-এর মধ্যে মু. রেজা হাসানকে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ ছেড়ে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সরকারি আদেশের পুরো একমাস অতিবাহিত হলেও এখনো জেলা পরিষদের কর্মস্থল ছেড়ে যাননি তিনি।

এদিকে, গত ১৯ অক্টোবর ২০২৫ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের জেলা পরিষদ শাখা থেকে জারি করা পৃথক প্রজ্ঞাপনে নবযোগদানকৃত উপসচিব মিজ উম্মে ফাতিমাকে রাজশাহী জেলা পরিষদের নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসিবে পদায়ন করা হয়।

কিন্তু গতকাল বুধবার পর্যন্ত তাকে পদয়ানকৃত কর্মস্থলে যোগদান করতে দেখা যায়নি। বরং তার স্থানে এক মাস আগে বদলিকৃত মু. রেজা হাসানকেই অফিস করতে দেখা গেছে। গতকাল বুধবারও তিনি জেলা পরিষদে অফিস করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে তার (রেজা হাসান) বিরুদ্ধে বদলির সরকারি আদেশ অমান্য করার অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়া তার বদলির আদেশ স্থগিত করতে তিনি রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় লবিংও করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, কী মধু আছে জেলা পরিষদে! বদলির আদেশের পরও কেন চেয়ার ছাড়ছেন না প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজা হাসান।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের মে মাসে সচিব হিসেবে রাজশাহী জেলা পরিষদে যোগদান করেন রেজা হাসান। এ পদে কিছু সময় দায়িত্ব পালন করে জেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও প্রতাপশালী আওয়ামী লীগ নেতা মীর ইকবালকে কাজে লাগিয়ে সচিব থেকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন নিয়ে আসেন রেজা হাসান। তৎকালীন চেয়ারম্যান মীর ইকবালের সঙ্গে যোগসাজস করে তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও ঠিকাদারী কাজ ইকবালের ছেলে ও আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীদের পাইয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেন। ফলশ্রুতিতে তিনি এবং সাবেক চেয়ারম্যান মীর ইকবাল মোটা অংকের কমিশন গ্রহণ করতেন। এছাড়াও অর্থের বিনিময়ে পছন্দের লোকজনকে সুবিধামতো স্থানে কাজ করার ব্যবস্থা ও জেলা পরিষদের মতো প্রতিষ্ঠানে দালাল সিন্ডিকেট গড়ে তোলারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

বদলির সরকারি আদেশের পরও কীভাবে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জানতে চাইলে মু. রেজা হাসান বলেন, ‘এটি রেগুলার একটি কাজ। প্রজ্ঞাপনে যোগদানের বিষয়ে যে তারিখ দেয়া আছে; তা প্রতিটি অর্ডারেই দেয়া থাকে। পদায়নকৃত কর্মকর্তা রংপুর সিটি কর্পোরেশনে কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকে তিনি রিলিজ পাওয়ার পর মন্ত্রণালয়ে যোগদান করে গত ৩০ অক্টোবর বিভাগীয় কমিশনার অফিসে যোগদান করেছেন। এখন বিভাগীয় কমিশনার স্যার আমাকে রিলিজ দিয়ে বদলিকৃত স্থানে যোগদানের অনুমোদন দেবেন। এটি একটি প্রক্রিয়া। যা চলমান আছে। নতুন কর্মকর্তার এই প্রক্রিয়াগুলো শেষ করতেই মূলত দেরিটা হয়েছে।’

তাহলে প্রজ্ঞাপনে যোগদানের যে তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে তা কোন ফ্যাক্টর কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না; প্রতিটি আদেশেই এমন তারিখ দেয়া থাকে। তবে যোগদান ও রিলিজের বিষয়টি অনুমোদন দেন বিভাগীয় কমিশনার স্যার। আগের অফিসার না আসলে তো আমি দায়িত্ব হস্তান্তর করতে পারব না। আমাকে তো কাউকে দায়িত্বটা হস্তান্তর করতে হবে। তিনি (নতুন পদায়নকৃত নির্বাহী কর্মকর্তা) ইতিমধ্যেই যোগদানের কাগজপত্র বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় দিয়েছেন। এখন তাকে দায়িত্ব দেয়া এবং আমাকে অব্যাহতি দেয়ার বিষয়টি কমিশনার স্যার অনুমোদন দেবেন। তিনি অনুমোদন দিলেই আমি দায়িত্ব হস্তান্তর করতে পারবো। প্রক্রিয়াটি এখনও চলমান আছে।’ তিনি জোর করে চেয়ার দখল করে আছেন কিনা এমন প্রশ্ন করলে বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা পরিষদের নতুন পদায়নকৃত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজ উম্মে ফাতিমা তার যোগদানের কাগজপত্র গত ৩০ অক্টোবর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে জমা দিয়ে সেখানে যোগদান করেছেন। কিন্তু গতকাল বুধবার (৫ নভেম্বর) পর্যন্ত তাকে নতুন কর্মস্থলে দেখা যায়নি।