ঢাকা | নভেম্বর ৪, ২০২৫ - ৬:০৬ পূর্বাহ্ন

রাজশাহীতে ফসল বাঁচাতে কৃষকের লড়াই

  • আপডেট: Monday, November 3, 2025 - 10:37 pm

দুর্গাপুর ও সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: রাজশাহীর উপজেলাগুলোতে টানা বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাসে রোপা আমনের চরম ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নুয়ে পড়েছে বেশির ভাগ জমির ধান। সব মিলিয়ে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকেরা। এসব ধান রক্ষায় লড়াইয়ে নেমেছেন কৃষকেরা।

কৃষি বিভাগের পরামর্শে ঝুঁট বেধে ধানগাছ খাড়া করে ফলন বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। গতকাল সোমবার সকালে দুর্গাপুর উপজেলার আনোলিয়া গ্রামের কথা হয় কৃষক তাছের উদ্দিনের সঙ্গে।

তিনি বলেন, বাপু শেষ সময়ে ‘খরচ বাড়লো আর ফলন কমলো’। কী যে বিপদে পড়ছি। তিন বিঘা জমির ধান মাটিতে নুয়ে পড়ছে। এখন ধান কম হলেও লাড়া (খড়) বাঁচাতে ঝুঁট বাধছি। জানি ফলন তেমন হবে না। অথচ খরচ বাড়লো। কারণ শ্রমিক নিয়ে ঝঁট বাঁধতে হচ্ছে। শুধু আমার না, এই এলাকার প্রায় কৃষকের আধাপাকা ধান কমবেশি মাটিতে নুয়ে পড়ছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবার ৮৩ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষ হয়ে ছিল। মাঠে মাঠে ধানের পাক এসেছিল। অসময়ে প্রবল বৃষ্টিতে জেলার প্রায় উপজেলার ধান খেতের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। অফিসের প্রাপ্ত তথ্যমতে ২৭৬ হেক্টর ধান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে জমি থেকে পানি নামিয়ে ধানের ঝুঁট বেধে দিলে কৃষকেরা ক্ষতি কাটিয়ে উঠবে।

জেলার পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া গ্রামের আসলাম উদ্দিন বলেন, বাপের জন্মেও কার্তিক মাসে একরম বৃষ্টি দেখিনি। আড়াই বিঘা জমিতে ধান ছিল। সব ধান মাটিতে নুয়ে পড়ছে। শ্রমিক নিয়ে ধান ঝুঁট বেধে দিচ্ছি। ফলন কম হলেও খড় যেন ভাল থাকে। পৌর এলাকার দেবীপুর গ্রামের আহের উদ্দিন বলেন, আমার পুরো ধাখেত জমিতে শুয়ে আছে। সব শেষ হয়ে গেছে আমার। ঋণ দেনা করে বাড়ির ধানের ভাত খাবো বলে আশায় বুক বেধেছিলাম। কিন্তু অতি বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় শীষ ভারি হওয়ায় বাতাসে শুয়ে পড়ছে। শেষসময়ে এমন ক্ষতি বড় লোকসান হলো।

তথ্যমতে, ঘুর্ণিঝড় মোন্থার প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে রাজশাহী জেলার উপজেলা গুলোতেও টানা বৃষ্টি রোপা আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মাঠে মাঠে নুয়ে পড়ছে ধান। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) তথ্যমতে, গত শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সারা দিন গোদাগাড়ীতে ২৩৬ ও তানোরে ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।

দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাহারা পারভীন লাবনী বলেন, এটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। কারোর হাত নেই। উপজেলায় এবার ৫ হাজার ৫৬৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ হয়েছে। এতে ৩০ হেক্টর জমির ধান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে জমির পানি নেমে গেলে কৃষকেরা ক্ষতি কাটিয়ে উঠবেন।

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মাদ নাসির উদ্দিন বলেন, প্রত্যেক উপজেলায় নিদের্শনা দেয়া হয়েছে কৃষকেরা যেন জমিতে নুয়ে পড়া ধান ঝুঁট বেধে দেয় ও আইল কেটে পানি নামানোর ব্যবস্থা করে। তাহলে তেমন ক্ষতি হবে না। ধানগাছ খাড়া অথ্যৎ ঝুঁট বাধলে ফলনে তেমন কমবে না। কারণ জেলার সবগুলো উপজেলায় এখন ধান পাকতে শুরু করেছে।

জেলা রোপা আমনের কেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, তানোর গোদাগাড়ী একটু বেশি ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া প্রাথমিক তথ্যমতে জেলা ২৭৬ হেক্টর জমির ধান আংশিক ক্ষতি হয়েছে। সব ধানচাষিকে ঝুঁট বেধে ধান খাড়া করে দেয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

এদিকে, গত কয়েকদিনের তীব্র বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার রোপা আমন ধান ও সবজি খেত ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এতে উপজেলার হাজারো কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ধামাইনগর, সোনাখাঁড়া, পাঙ্গাশি, ধুবিল, চান্দাইকোনা ও নলকা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ ফসলি জমির রোপা আমন ধান বাতাসে লুটিয়ে পড়েছে। নিচু এলাকার ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক জায়গায় গাছের গোড়া পচে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি বেগুন, মরিচ, লাউ, শাকসবজি ও অন্যান্য ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ কমাতে কৃষকেরা এখন মাঠে পড়ে থাকা ধানগাছগুলো পুনরায় দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন।

স্থানীয় কৃষকেরা জানিয়েছেন, হঠাৎ বৃষ্টি ও বাতাসে তাদের বছরের পরিশ্রম ও স্বপ্ন ভেসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তবে রোদ উঠলে এবং পানি কমলে হয়তো কিছু ফসল বাঁচানো সম্ভব হবে। ধামাইনগর ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল হামিদ বলেন, আমি এক বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম। এখন সব ধান পানিতে ডুবে গেছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কীভাবে চলব বুঝতে পারছি না।

একই এলাকার কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, দু-এক দিনের মধ্যে পানি না নামলে শুধু ধানই নয়, পাশের সবজিগাছও পচে যাবে।

রায়গঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম বলেন, ভারি বৃষ্টি ও দমকা বাতাসের কারণে উপজেলার প্রায় ১২০ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান এবং ৬ হেক্টর জমির সবজি খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি পড়ে যাওয়া ধানগাছ গুচ্ছ করে বাঁধতে, যাতে পচে না যায়। ক্ষতির তালিকা প্রস্তুত করে দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।