ঢাকা | নভেম্বর ৩, ২০২৫ - ৪:৩৬ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

দুর্গাপুরে বৃষ্টির পানিতে ডুবে মারা গেল আড়াই হাজার মুরগি

  • আপডেট: Sunday, November 2, 2025 - 10:15 pm

ঋণের দুশ্চিন্তায় দুই পরিবার:

দুর্গাপুর প্রতিনিধি: এসএসসি পাস করে সংসারে অভাব অনাটনে লেখাপড়া বাদ দেন রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার কালীগঞ্জ গ্রামের রাব্বি হাসান (২০)। পরে বাড়ির পাশেই শুরু করেন পোল্ট্রি মুরগির খামার। দুই বছর লাভ লোকসান হলেও এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে একেবারে পথে বসে গেছেন তিনি। গত শুক্রবার রাতে ভারি বৃষ্টিপাতে হঠাৎ করে হাঁটুপানি জমে খামারে। এতে মারা প্রায় তার ১ হাজার ৫০০ পোল্ট্রি মুরগি। যার একেকটির ওজন কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম।

অপরদিকে একই দিনে উপজেলার আলীপুর গ্রামে সজল আহম্মেদ খামারেও একই অবস্থা। একই রাতে তার খামার তলিয়ে মারা ১০০০ পোল্ট্রি মুরগি। ফলে দুই পরিবারে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা। এ অবস্থা এনজিওর লোনের টাকা পরিশোধ নিয়ে বিপাকে পড়ছেন দুই পরিবার। খবর পেয়ে রোববার দুপুরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: জান্নাতুল ফেরদৌস তার কার্যালয়ে কর্মকর্তা কর্মচারি নিয়ে ক্ষতি গ্রস্ত দুটি খামারই পরিদর্শন করেছেন।

রোববার দুপুরে উপজেলার কালীগঞ্জ গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা রাব্বি হাসানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় পরিবারের সদস্যরা কান্নাকাটি করছেন। আশেপাশের প্রতিবেশী মানুষ রাব্বির বাড়িতে বাড়িতে ভিড় করছেন। সান্তনাও দিচ্ছেন অনেকে। বাড়ির ভিতরে রাব্বির স্ত্রী ডুকরে কাঁদছিলেন। বসে থাকা তার শ্বশুর জিয়াউর রহমানের চোখেও জল ঝরছিল।

জিয়াউর বলেন, আমাদের জমিজমা নেই বাপু। ছেলেটাকে লেখা পড়া করাতে পারিনি। মেট্রিক পাস করে ছেলে নিজের ইচ্ছাই মুরগির ব্যবসায় নামে। কিন্তু একেবারে পথে বসে গেলে। খামারের মালিক রাব্বি হাসান বলেন, তার পোল্ট্রি মুরগির বয়স ৩১দিন ছিল। ওজন হয়ে ছিল গড়ে ১ কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম। অনেক এনজিওতে ধর্না দিয়ে লোন নিয়ে প্রায় ১৫০০ পোল্ট্রি মুরগিকে খাইয়ে বড় করে তুলেছি। আমি খামারেই থাকি। এর আগে ভারী বর্ষণেও কোন দিন এ খামারে পানি উঠেনি।

শুক্রবার রাত ১২টার দিকে পুরো খামারের মধ্যে পানি জমে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন ডেকেও মুরগিগুলোকে বাঁচাতে পারিনি। আর পানিতে ডুবে গেলে একসাথে এতো মুরগি বাঁচানো সম্ভব নয়। রাব্বি বলেন, এই দেঁড় হাজার মুরগির বাজার মূল্য প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। দুই একদিনের মধ্যেই খামারের সব মুরগি বিক্রি হয়ে যেত। তার আগেই এতো বড় সর্বনাশ। আমি এখন কীভাবে ঋণ পরিশোধ করবো। একই গ্রামের প্রতিবেশী রহিমুদ্দিন বলেন, লোন নিয়ে খুব কষ্ট করে মুরগিগুলো পালন করছিল তারা। তাদের বাড়ির ভিটা ছাড়া কিছুই নেই। কীভাবে তারা লোন পরিশোধ করবে। তাদের এমন ক্ষতিতে পুরো গ্রামবাসী হায়হুতাশ করছে।

এদিকে আরেক খামারি আলীপুর গ্রামের সজল আহম্মেদ বলেন, আমার খামারের ১০০০ পোল্ট্রি মুরগি মারা গেছে। সেগুলোর বয়স ৫দিন । একটি কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে খামারে মুরগিগুলো তুলেছিলাম। এমন দুর্ঘটনায় বিরাট ক্ষতির মুখে পড়ে গেলাম। জানতে চাইলে দুর্গাপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, এটা খুবই দু:খজনক ব্যাপার। একসাথে এতো মুরগিগুলো মারা গেল। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। দুই খামারিকে উপজেলা প্রশাসন বরাবরে আবেদন করতে বলেছি। তারা আবেদন করলে আমরা ইউএনও ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সঙ্গে কথা বলে কোন সহযোগিতার ব্যবস্থা করতে পারি কি না চেষ্টা করব। তিনি বলেন, ওখানে গিয়ে জানতে পেরেছি খামারি রাব্বি পুরোটাই লোনের ওপর মুরগি চাষ করছিল। একেবারে বিক্রির শেষ সময়ে এসে সে ক্ষতিগ্রস্ত হলো।