স্কুল মাঠ যেন বিস্তীর্ণ জলাধার

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: চারদিকে থই থই পানি। দেখে মনে হবে বিশাল কোনো জলাশয়। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ময়লা পানি মাড়িয়ে শ্রেণিকক্ষে আসা-যাওয়া করছেন। মাসের পর মাস জলাবদ্ধতা থাকলেও সমস্যা সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।
দুর্ভোগের এ চিত্র দেখা গেছে সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার মঙ্গলবাড়ীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উল্লাপাড়া পৌর শহরের ঝিকিড়া বন্দর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। জলাবদ্ধতার কারণে এডিস মশার কামড় ও খোস-পাঁচড়ার ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবাড়ীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ চার মাস ধরে হাঁটু পানিতে ডুবে আছে। শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত সমাবেশ ও খেলাধুলা বন্ধ হয়ে গেছে। নোংরা পানি মাড়িয়ে শ্রেণিকক্ষে আসেন শিক্ষকরা। একই অবস্থা শিক্ষার্থীদের। অনেকেরই পায়ে ঘা হয়ে গেছে। এ অবস্থায় গামবুট পরে স্কুলে আসেন প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন। আক্ষেপ করে প্রধান শিক্ষক বলেন, মাঠের ৯৫ ভাগে পানি। নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। জলাবদ্ধ নোংরা পানিতে মশা বাসা বেঁধেছে। পানি পায়ে লাগলেই চুলকানি হয়। শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষকদের দূরবস্থা নিরসনে এক মাস আগে মাটি ফেলে মাঠ ভরাটের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছি; সাড়া মেলেনি।
তাড়াশ পৌর এলাকার দক্ষিণ সীমান্তে মঙ্গলবাড়ীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থান। শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১০৭ জন শিক্ষার্থী আছে। দুটি ভবনে বিভক্ত বিদ্যালয়ের মাঠটি বছরে চার মাস থাকে জলাবদ্ধ। এ সময় শিক্ষার্থীদের প্রাত্যহিক সমাবেশ ও খেলাধুলা বন্ধ থাকে। দুই বছর আগে মাঠ-সংলগ্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি পুকুর সংস্কার করা হয়। পুকুরের পাড় অস্বাভাবিক উঁচু করায় পানি নিষ্কাশনের পথ একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টি হলেই মাঠে হাঁটুপানি জমে যায়। শিক্ষার্থীরা জানায়, নোংরা পানি মাড়িয়ে ক্লাসে ঢুকতে হয়। অনেকেরই পায়ে ঘা হয়ে গেছে। মাঝেমধ্যে পা পিছলে পড়ে গেলে পোশাক, বই-খাতা ভিজে যায়। মাঠে পানি থাকায় খেলাধুলা বন্ধ। এ কারণে অনেকেই বিদ্যালয়ে আসতে চায় না।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আপেল মাহমুদ জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে কী ব্যবস্থা নেয়া যায়, খতিয়ে দেখা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত জাহান জানান, জলাবদ্ধতা নিরসন বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের আবেদন পেয়েছি। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া পৌর শহরের ঝিকিড়া বন্দর মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠটি খুবই নিচু। প্রতিবছর বর্ষা এলেই মাঠে হাঁটুপানি জমে যায়। কখনও পানি শ্রেণিকক্ষে ঢুকে পড়ে। এতে বিপত্তি আরও বাড়ে। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসছে এই দুরবস্থা।
স্কুল কর্তৃপক্ষ পানি নিষ্কাশন বা মাঠ উঁচু করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনেক বার আবেদন জানালেও কাজ হয়নি। ১৯৯৭ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয় শ্রেষ্ঠ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল। শিক্ষার্থী সংখ্যা ৯শ এবং শিক্ষক ১৭ জন। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে তাদের কাদাপানি মাড়িয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে হয়। অভিভাবকরা জানান, চলতি বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে। মাঠ থেকে পানি সরছে না। মাঝে মাঝে পৌরসভা থেকে পানি সেচে ফেলা হলেও বৃষ্টি হলে আবার পানি জমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। মাঝেমধ্যেই তারা বই-খাতা, পোশাক ভিজিয়ে ফেলছে। মাঠটি অন্তত ২ ফুট উঁচু করে ভরাট করলে এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেত।
প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, স্কুল ভবনগুলো উঁচু হলেও মাঠ খুব নিচু। ফলে বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। আগে আশপাশে আবাসিক ভবন ছিল না। বৃষ্টির পানি পাশের নালা দিয়ে বাঁখুয়া বিলে চলে যেত। বর্তমানে অপরিকল্পিতভাবে চারপাশে আবাসিক ভবন নির্মিক হওয়ায় পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন বৃষ্টি হলেই মাঠে পানি জমে যায়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও জনপ্রতিনিধিদের জানালেও তারা আমলে নেননি।
তবে এ বছর পৌর প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কয়েক দফা মেশিন দিয়ে মাঠের পানি অপসারণের ব্যবস্থা নেন। দুর্ভোগ নিরসনে স্থায়ী সমাধান দরকার বলে জানান প্রধান শিক্ষক। শিক্ষা কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন জানান, এ সমস্যা দীর্ঘ দিনের। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে। মাঠ ভরাট করতে কাবিখা বা কাবিটা প্রকল্পের বরাদ্দ ব্যবহার করে এর স্থায়ী সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।