তিস্তা বাঁচাতে আবারও জেগে উঠল উত্তরাঞ্চল!

সোনালী ডেস্ক: তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ দ্রুত শুরু করার দাবিতে আবারও উত্তাল হয়ে উঠেছে উত্তরাঞ্চল। রংপুর বিভাগের পাঁচটি জেলায় একযোগে মশাল প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করেছে ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ আন্দোলন।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার ১১টি পয়েন্টে একই সময়ে এ কর্মসূচি পালিত হয়। আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক, সাবেক উপমন্ত্রী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
প্রবাহিত ১৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে তিস্তা নদী রক্ষায় চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া আন্দোলন ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। আন্দোলনে অংশ নেয়া নেতা-কর্মীরা বলছেন, সরকারের উদাসীনতায় নদীটি আজ অস্তিত্ব সঙ্কটে। নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলাজুড়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা যদি টিকে না থাকে, তবে এই অঞ্চলের মানুষের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ডুবে যাবে।
অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, তিস্তা শুধু উত্তরাঞ্চলের নয়, এটি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ। অবিলম্বে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু করতে হবে। জনগণ এখন তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে রাস্তায় নেমেছেন। তিস্তা সমস্যা কোনো স্থানীয় ইস্যু নয়, এটি জাতীয় সমস্যা। ১৬ বছর ধরে এক ধরনের ফ্যাসিবাদী শাসন রংপুরের মানুষের বুকের মধ্যে জগদ্দল পাথরের মতো চাপা পড়ে আছে, তবু আমাদের কান্না থামেনি।
তিনি অভিযোগ করেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। সরকারের ধীরগতির কারণে নদীর জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের ঝুঁকি বাড়ছে। দুলু সতর্ক করে বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনার বিপক্ষে যারা দাঁড়াবে, তারা জাতীয় শত্রুতে পরিণত হবে। তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, নভেম্বরের মধ্যেই তিস্তা প্রকল্পের কাজ শুরু করতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়ে দুলু বলেন, সময়মতো কাজ শুরু না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে রংপুর বিভাগ অচল করে দেয়া হবে।
আন্দোলন সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে ভাঙন ও চর গঠনে তিস্তা পাড়ের লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। নদীভাঙনে বিলীন হয়েছে অসংখ্য বাড়িঘর ও কৃষিজমি। চর জেগে ওঠায় নদীর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, ফলে জীবিকা হারাচ্ছেন কৃষক ও জেলেরা। স্থানীয়রা বলছেন, বছরের পর বছর অবহেলায় তিস্তা এখন মৃতপ্রায় নদীতে পরিণত হয়েছে। এর আগে আন্দোলনের পক্ষ থেকে লালমনিরহাটে গণমিছিল, গণসমাবেশ, পদযাত্রা ও স্মারকলিপি দেয়াসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়।
বৃহস্পতিবারের মশাল প্রজ্বালন কর্মসূচিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, ছাত্র ও যুবসমাজের হাজারও মানুষ অংশ নেন। তাদের স্লোগান ছিল- ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই, তিস্তার ন্যায্য হিস্যা চাই।’ দুলুর মতে, নদী রক্ষায় জনগণের এই ঐক্য এখন স্পষ্ট প্রমাণ যে তিস্তা আর কেবল পরিবেশ বা অর্থনীতির বিষয় নয়, এটি উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। সেই পরিস্থিতি এড়াতে এখনই সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যদি তিস্তা পুনরুদ্ধার না হয়, এই অঞ্চলের মানুষ খাদ্যের জন্য রাজধানীমুখী লংমার্চে নামতে বাধ্য হবে।