ঢাকা | অক্টোবর ১৬, ২০২৫ - ১০:২০ অপরাহ্ন

রাকসু নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু, দীর্ঘ লাইন

  • আপডেট: Thursday, October 16, 2025 - 11:00 am

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।

সুদীর্ঘ ৩৫ বছর পর আজ অনুষ্ঠিত হলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ এবং সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ।

ভোটে কারচুপি ও জালিয়াতি ঠেকাতে এবারই প্রথমবারের মতো চালু করা হয়েছে থ্রিডি সিকিউরিটি সিস্টেম।

নির্বাচন কমিশন জানায়, এবারের রাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ২৮ হাজার ৯০১ জন এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৮৬০ জন। আজ বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ৯টায় শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি একাডেমিক ভবনে স্থাপিত ১৭টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে।

গতকাল (বুধবার) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে রাকসু নির্বাচন কমিশন সর্বশেষ প্রস্তুতির বিষয় তুলে ধরে। কমিশন জানায়, ভোটাররা তিন ধাপের যাচাই শেষে ভোট দিতে পারবেন। প্রতিটি ধাপে রাখা হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা।

নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, কারচুপি ঠেকাতে শুধু অমোচনীয় কালি নয়, আমরা থ্রিডি লেভেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। প্রথম ধাপে যাচাই করা হবে ভোটারের শিক্ষার্থী আইডি কার্ড, দ্বিতীয় ধাপে দেখা হবে ইউনিক আইডি নম্বর, এবং তৃতীয় ধাপে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা থেকে যাচাই শেষে ভোট দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে।

তিনি আরও জানান, কোনো ধাপে সন্দেহ দেখা দিলে ভোটারের তথ্য বিশেষ কিউআর কোড স্ক্যান করে যাচাই করা হবে।

 

প্রযুক্তিনির্ভর ভোটগ্রহণ ও গণনা

ভোটগ্রহণে ব্যবহার করা হচ্ছে ওএমআর মেশিন ও বিশেষ সফটওয়্যার। ছয়টি মেশিন ও সমপরিমাণ স্ক্যানারের মাধ্যমে ফলাফল প্রস্তুত করা হবে। নির্বাচন কমিশনের আশা, ভোটগ্রহণ শেষে সর্বোচ্চ ১৭ ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল প্রকাশ সম্ভব হবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বলেন, “আমরা একটি অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ এবং বিতর্কমুক্ত নির্বাচন উপহার দিতে চাই। প্রযুক্তিনির্ভর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আমাদের এই লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে।”

ব্যালট পেপার ছাপা ও নিরাপত্তা

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনুযায়ী ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে। প্রতিটি ভোটারের জন্য পৃথক সিরিয়াল নম্বরযুক্ত ব্যালট প্রস্তুত করে তা গোপনীয়তা রক্ষা করে সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং নির্ধারিত কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসারের মাধ্যমে পাঠানো হবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, “ব্যালট পেপার মুদ্রণ থেকে বিতরণ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে কঠোর গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা বজায় রাখা হয়েছে। অতিরিক্ত কোনো ব্যালট মুদ্রণ করা হয়নি।”

নিরাপত্তা বলয়ে ঘেরা ভোট

নির্বাচন উপলক্ষে ক্যাম্পাসজুড়ে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ভোটকেন্দ্র ও আশপাশে মোতায়েন করা হয়েছে ২,৩০০ পুলিশ সদস্য, ১২ প্লাটুন র‍্যাব ও ৬ প্লাটুন বিজিবি। সহায়তায় থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসি, রোভার স্কাউট ও স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের স্বেচ্ছাসেবক দল। ১০০টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।

বুধবার থেকেই শিক্ষার্থী পরিচয়পত্র বা পাসকোড ছাড়া কেউ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারছে না।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবু সুফিয়ান গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “নিরাপত্তা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে আমরা পরিকল্পনা করেছি। সাইবার জগতেও আমরা সজাগ রয়েছি, যাতে কোনো ধরনের অপপ্রচার বা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো না হয়, সে জন্য আমাদের একটি আলাদা সাইবার টিম কাজ করছে।”

তিনি আরও জানান, নির্বাচনের দিন সাতটি প্রবেশপথ খোলা থাকবে, যেখানেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। কেউ যদি পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে, তবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভোট পরিচালনায় প্রশিক্ষিত কর্মকর্তারা

ভোট পরিচালনার দায়িত্বে থাকছেন ২১২ জন শিক্ষক, যাঁদের আগে থেকেই প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

ফলাফল প্রস্তুতিতে বিশেষ কমিটি

ভোটের ফলাফল তৈরিতে রয়েছে ৪৩ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি। নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দ জানান, “আমরা ডাকসু ও জাকসুর অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েছি। রাকসুতে সেই অভিজ্ঞতার আলোকে আরও সতর্ক হয়েছি। তাড়াহুড়ো করে ভুল বা অগ্রহণযোগ্য কোনো ফলাফল প্রকাশ করা হবে না।”

পর্যবেক্ষণে প্রশাসনের কমিটি

নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে গঠিত হয়েছে ১০ সদস্যের একটি কমিটি। এই কমিটির সভাপতি অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এম রফিকুল ইসলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

উল্লেখ্য, রাকসু নির্বাচনের যাত্রা শুরু হয় ১৯৬২ সালে। গত ৬৩ বছরে মোট ১৪বার এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৮৯ সালে।