ঢাকা | অক্টোবর ১৩, ২০২৫ - ৩:৪৬ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

রাজশাহীতে হারিয়ে যাচ্ছে লাঙলে হালচাষ

  • আপডেট: Sunday, October 12, 2025 - 9:00 pm

মোজাম্মেল হক, চারঘাট থেকে: কালের বিবর্তনে ঘরে বসে খুব সহজেই মানুষ নানা সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। সেই অগ্রযাত্রা থেমে নেই কৃষিভিত্তিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও। দিন দিন নতুন যন্ত্র আবিষ্কারের ফলে দেশ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী বাঙালির চিরচেনা সেই গরুর কাঁধে জোয়াল লাঙল দিয়ে জমি চাষের চিত্র।

দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় এক সময় গরু-লাঙল দিয়ে জমি চাষ আর মই দেয়ার দৃশ্য সবার নজর কাড়ত। বাড়ি থেকে বের হয়ে মাঠের দিকে নজর পড়তেই দেখা যেত শত শত কৃষক বাঁশের ফালা দিয়ে তৈরি করা ধারালো লাঙল কাঠের হাতল আর জোয়ালের মাধ্যমে গরুর কাঁধে বেঁধে দিয়ে জমি চাষ করছে। সে সময় গরু-লাঙল ছাড়া জমি চাষ করার কথা চিন্তাই করা যেত না। অথচ গরু-লাঙলের সঙ্গে কৃষকের সেই মিতালীর দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না।

যুগের পরিবর্তন আর বিজ্ঞানের ক্রমাগত উন্নতির কারণে গরু-লাঙলের স্থান দখল করে নিয়েছে ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলারসহ বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি। কৃষক এখন তার সুবিধামতো দিনের যে কোনো সময় ট্রাক্টর বা পাওয়ার টিলার নিয়ে মাঠে গিয়ে অল্প সময়ে প্রয়োজনীয় জমি চাষ এবং মই দিয়ে ফসল আবাদ করছে। তবে ওই ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষে পরিশ্রম এবং সময় কমেছে। কিন্তু ফসলের গুণগতমান এবং স্বাদ কমে গেছে এবং জমির উর্বরতাও হ্রাস পাচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলার বেশ কয়েকজন প্রবীণ কৃষকদের সাথে কথা হলে তারা জানান, গরুর লাঙ্গল দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২ বিঘা জমি চাষ করা সম্ভব। আধুনিক যন্ত্রপাতির থেকে গরুর লাঙলের চাষ গভীর হওয়ায় জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। এ পদ্ধতির চাষ, সার ও কীটনাশকের জন্য সাশ্রয় হয়। কষ্ট হলেও আমাদের গরু দিয়ে হাল চাষ করতে খুব ভালো লাগত। বর্তমান সময়ে তথ্যপ্রযুক্তির আবির্ভাবের কারণে এভাবেই ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য। আগামী প্রজন্ম হয়তো বই পড়ে জানতে পারবে এক সময় গ্রামাঞ্চলে গরু দিয়ে হাল চাষ করা হতো বলে তারা জানান।

উপজেলার কেজিপুর গ্রামের তহির উদ্দিন বলেন, পড়া লেখা না করায় ছোটবেলা থেকেই হাল চাষের কাজ করতাম। বাড়িতে হাল চাষের জন্য বলদ গরু ছিল ১ জোড়া। কিন্তু কালের বিবর্তনের সাথে সাথে সব কিছুরই পরিবর্তন ঘটেছে। ফলে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে গরু, মহিষ, লাঙ্গল ও জোয়াল দিয়ে জমিতে হাল চাষ। বর্তমানে আধুনিকতার স্পর্শে ও বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে কৃষকদের জীবনে এসেছে নানা পরিবর্তন। আর সেই পরিবর্তনের ছোঁয়াও লেগেছে কৃষিতে।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষি বিদ আল মামুন হাসান বলেন, জমিতে গরু দিয়ে হাল চাষ করালে সার এবং বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানগুলো ভালোভাবে মেশে। যার ফলে জমির উর্বরতা বাড়ে। তবে এ পদ্ধতিতে হাল চাষে অধিক সময় ব্যয় করতে হয় কৃষকদের। বর্তমান সময়ে হাল চাষের জন্য আধুনিক ট্রাক্টরের আবিষ্কার হওয়ায় অল্প সময়ে কৃষকরা তাদের জমি চাষ করতে পারে।

যার কারণে পুরোনো পদ্ধতিতে গরু দিয়ে হাল চাষ এখন আর তেমন একটা দেখা যায় না। তবে কৃষকদের জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধির জন্য রাসায়নিক সারের পাশাপাশি জৈব সার অধিক পরিমাণে ব্যবহারের জন্য আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। যার কারণে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি ও ফসলের ফলন বৃদ্ধি হচ্ছে বলে তিনি জানান।