ঢাকা | অক্টোবর ১২, ২০২৫ - ১১:০২ পূর্বাহ্ন

বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মাটির বাড়ি

  • আপডেট: Saturday, October 11, 2025 - 9:00 pm

গোদাগাড়ী ও তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী, তানোর উপজেলাসহ বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের নির্দশন সবুজ শ্যামল ছায়াঘেরা শান্তির নীড় মাটির দ্বিতল বাড়ি। যাকে গ্রামের মানুষ বলতো, গরিবের এসি ঘর। কিন্তু আভিজাত্যের দাপটে, মানুষের জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি পাওয়ায় এমন মাটির দোতলা বাড়ি এখন আর তেমন নজরে পড়ে না।

বেশি দিনের কথা নয়, ১৫ থেকে ২০ বছর পূর্বে উত্তরাঞ্চলের প্রতিটি গ্রামে নজরে পড়তো মাটির ঘর। কিন্তু গ্রামের আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন এসেছে, মানুষের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, সরকারি পাবলিক লিমিটেড ব্যাংকসহ বিভিন্ন এনজিওর ঋণ ও কায়িক পরিশ্রম করা গরিব পরিবারগুলো এখন তৈরি করছে ছোট্ট আকারে দালান। তার ওপরে তুলছেন টিনের চালা কিংবা ছাঁদ।

এক সময় গোদাগাড়ী উপজেলার ৯টি ও তানোর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি গ্রামে এ মাটির বাড়ি-ঘর, মাটির দোতলা চোখে পড়তো। যেখানে লাল বা চিপটে মাটি সহজলভ্য সেখানে এ ঘরগুলো বেশি তৈরি করা হয়। কিন্তু কালের বিবর্তনে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে এই ঐতিহ্যবাহী মাটির দ্বিতল বাড়ি। এই বাড়ি শীত ও গরম মৌসুমে আরামদায়ক বলে গ্রামের গরিব ও দরিদ্র মানুষের পাশাপাশি অনেক বিত্তবানও এই মাটির দ্বিতল বাড়ি তৈরি করতেন।

এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, অতি প্রাচীনকাল থেকেই মাটির বাড়ির প্রচলন এবং গ্রামের মানুষের কাছে এই বাড়ি ঐতিহ্যের প্রতীক ছিল। এঁটেল বা আঠালো মাটি কাদায় পরিণত করে ২-৩ ফুট চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হয়। ১০-১৫ ফুট উঁচু দেয়ালে কাঠ বা বাঁশের সিলিং তৈরি করে তার ওপর খড় বা টিনের ছাউনি দেয়া তৈরি করা এই মাটির বাড়িতে গৃহিণীরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাটির দেয়ালে বিভিন্ন রকমের আল্পনা এঁকে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতেন।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বর্ষা মৌসুমে মাটির ঘরের ক্ষতি হয় বলে বর্তমান সময়ে দীর্ঘ স্থায়িত্বের কারণসহ গ্রামাঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক পরিবর্তন হওয়ায় গ্রামের মানুষরা ইট-সিমেন্টের বাড়ি নির্মাণে আগ্রহী হচ্ছেন। ভূমিকম্প বা বন্যা না হলে একটি মাটির বাড়ি শত বছরেরও বেশি স্থায়ী হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে কালের বির্বতনে ইট-বালির দালান কোঠা আর বড় বড় অট্টালিকার কাছে হার মানছে মাটির বাড়ি।

উপজেলার গোদাগাড়ী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদুল গনি মাসুদ বলেন, বাপদাদার তৈরি মাটির বাড়িতে এখনও আমরা বাস করচ্ছি, মাটির তৈীি বাড়িতে বিদ্যুৎ চলে গেলেও ঘরগুলি ঠন্ডা হওয়ায় বাস করতে ভাল লাগে। মনে হয় এসি রুমে বাস করচ্ছি। ২৪ নগর এলাকার মাহাবুব অলম বলেন, মাটির তৈরি এই বাড়ি তারা পেয়েছেন পৈত্রিকভাবে। তাদের পূর্ব পুরুষরাও এই মাটির তৈরি বাড়িতেই জীবন কাটিয়ে গেছেন। তাই এখনও তারা এই বাড়িগুলো ভাঙেন নি।

গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার ফলেই গত ১০ বছরের মধ্যেই মাটির দোতলা বাড়ি ভেঙে পাঁকা বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। সেই সাথে এখন আর কেউ নতুন ভাবে মাটির বাড়ি তৈরি করার কথা মাথায় আনতে চাচ্ছেন না, যার যা আছে তা দিয়েই সকলেই ইট-সিমেন্ট দিয়ে পাঁকা বাড়ি তৈরি করছেন। অনেকেই বলছেন এ অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় মাটির দোতলা বাড়ির ছবি ছাড়া আর বাস্তবে মাটির দোতলা বাড়ি খুঁজে পাওয়া যাবে না।