নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল চালুতে জোর তৎপরতা

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী মহানগরীর দীর্ঘদিনের যানজট নিরসনে অবশেষে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) ও রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ)। দূরপাল্লার বাসগুলোকে নগরী থেকে সরিয়ে নওদাপাড়া বাস টার্মিনালে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে টার্মিনালটি পরিদর্শন করেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান। সঙ্গে ছিলেন রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) চেয়ারম্যান এসএম তুহিনুর আলম। রাজশাহী নগরীকে যানজটমুক্ত করতে ২১ বছর আগে নির্মাণ হয়েছে নতুন বাস টার্মিনাল। কিন্তু সেখান থেকে যাত্রী উঠানো-নামানো করা হয় না। নগরীর উত্তরপ্রান্তে নওদাপাড়া এলাকার প্রায় সাড়ে ৭ একর জায়গার বাস টার্মিনালটি শুধু গাড়ি রাখার কাজেই ব্যবহার হয়।
আর যাত্রী ওঠা-নামানো হয় নগরীর শিরোইলের বাস টার্মিনালেই। বেলা ১১টার পর রাজশাহীর নওদপাড়া বাস টার্মিনাল পরিদর্শনে আসেন পুলিশ কমিশনার ও রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান। প্রথমেই তারা বাস টার্মিনালের প্রবেশদ্বার পরিদর্শন করে। সেইসাথে টার্মিনালের ভেতরে বাস কাউন্টার ও যাত্রীদের বসার স্থানও পরিদর্শন করেন। এসময় তারা নানা পরামর্শও দেন।
পরিদর্শন শেষে পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিদিন শত শত দূরপাল্লার বাস নগরীতে প্রবেশ করে। এতে প্রধান সড়কগুলোতে যানজট তৈরি হয়, যাত্রী ও সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন। গত এক বছর ধরে আমরা চেষ্টা করছি যেন নওদাপাড়া টার্মিনাল থেকেই এসব বাস যাত্রী উঠানামা করে।
তিনি বলেন, পরিবহন মালিকদের সুবিধা দিতে আরডিএ বিভিন্ন অবকাঠামোগত কাজ করছে। আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, দূরপাল্লার বাস কাউন্টার নগরীর যেকোনো জায়গায় থাকতে পারে, কিন্তু যাত্রী উঠানামা অবশ্যই নওদাপাড়া টার্মিনাল থেকে করতে হবে। ঢাকায় কাউন্টারে কোনো বাস থাকে না, সব যাত্রী উঠানামা নির্দিষ্ট টার্মিনাল থেকে হয়। রাজশাহীতেও সেটা করা সম্ভব। আমরা একাধিকবার পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তারা নানা অজুহাত দিচ্ছেন। কিন্তু এই শহরের যানজট নিরসনের স্বার্থে সবাইকে নিয়ম মানতে হবে।
রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এসএম তুহিনুর আলম বলেন, নওদাপাড়া বাস টার্মিনালটি আধুনিকরণের জন্য একটি প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে। সেই প্রকল্প পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে এবং টেন্ডার প্রক্রিয়া এখন শেষ পর্যায়ে। টার্মিনালের সামনের দোকানগুলো ধীরে ধীরে অপসারণ করা হবে। একই সঙ্গে নতুন কাউন্টার, যাত্রী বিশ্রামাগার ও শৌচাগারের ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য শুধু যানজট কমানো নয়, নওদাপাড়ার এই টার্মিনালকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নিত করা। সেই লক্ষ্যে আমরা পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি। তারই ধারাবহিকতায় টার্মিনাল পরিদর্শনে এসেছি। আশা করছি, খুব শিগগিরই দূরপাল্লার সব বাস এই টার্মিনাল থেকেই যাত্রী পরিবহন করবে। তারা নগরীতে ঢুকবে না।
রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম হেলাল বলেন, যাত্রীদের সুবিধার জন্য সরকার নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল নির্মাণ করেছে। কিন্তু টার্মিনালের সামনে গড়ে ওঠা দোকানগুলো যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে। তিনি দাবি করেন, টার্মিনালে যাত্রীদের বসার জায়গা, চলাচলের সু-ব্যবস্থা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও শৌচাগার ঠিকভাবে চালু হয়নি। এসব সুবিধা না থাকলে যাত্রীরা কষ্ট পাবেন। তারা আসবেন না।
তিনি বলেন, শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকায় বাসের কাউন্টার আছে। নওদাপাড়ায় বাস টার্মিনালের সামনের জায়গাগুলোতে বিভিন্ন দোকানপাট হয়েছে। এগুলো উচ্ছেদ করতে হবে। তারপর সেখানে তাদের কাউন্টার করে দিতে হবে। তাহলে তারা নওদাপাড়া আসবেন।
পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন আরএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) নাজমুল হাসান, উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) নূর আলম সিদ্দিকী, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অর্থরাইজড অফিসার আবদুল্লাহ আল তারিক, রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সভাপতি রফিকুল ইসলাম তোতা ও রাজশাহী জেলা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পাখি।
রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তারা আশাবাদী, খুব শিগগিরই নওদাপাড়া টার্মিনাল পুরোপুরি কার্যকর হলে স্বস্তিদায়ক, যানজটমুক্ত নগরী হবে রাজশাহী।