ঢাকা | অক্টোবর ১০, ২০২৫ - ১:৪৫ পূর্বাহ্ন

উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি পাবনা মানসিক হাসপাতালে

  • আপডেট: Thursday, October 9, 2025 - 9:55 pm

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস আজ:

কলিট তালুকদার, পাবনা থেকে: দেশের একমাত্র মানসিক চিকিৎসাসেবায় বিশেষায়িত পাবনা মানসিক হাসপাতাল। বর্তমানে হাসপাতালটি নানা সঙ্কটের মধ্যদিয়ে চলছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, জনবল সঙ্কট, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, খানাখন্দে ভরা রাস্তার কারণে হাসপাতালটির এই দশা। বিষেশজ্ঞ চিকিৎসক ও কর্মচারী সঙ্কটে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা।

সঙ্কট কাটিয়ে হাসপাতালটিকে আধুনিকায়ন করার দাবি সকলের। জানা যায়, অবিভক্ত ভারতবর্ষের এই অঞ্চল থেকে মানসিক রোগীদের চিকিৎসার জন্য ভারতের বর্তমান ঝাড়খন্ড রাজ্যের রাজধানী রাঁচিতে যেতে হতো। পাকিস্তান ও ভারত আলাদা রাষ্ট্র হওয়ার পর ১৯৫৭ সালে পাবনা শহরের শীতলাই জমিদার বাড়িতে মানসিক হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করে তখনকার পাবনা জেলার সিভিল সার্জন মোহাম্মদ হোসেন গাঙ্গুলী পাবনার মানসিক হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করেন।

এর দুই বছর পর ১৯৫৯ সালে পাবনা শহরের অদূরে হেমায়েতপুরে ১১১ দশমিক ২৫ একর জমির উপর হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়। জমির বেশির ভাগই ছিল শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের। পরে এই হাসপাতালের ৩০ একর জমি পাবনা মেডিকেল কলেজকে দেয়া হয়। প্রথমে হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা ছিল ৬০। ১৯৬৬ সালে প্রথম দফায় শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে ১৫০ ও পরে ২০০ করা হয়। সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে হাসপাতালটি ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। হাসপাতালের মোট ১৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৪টি পুরুষ আর ৫টি নারী ওয়ার্ড রয়েছে। সময়ের চাহিদায় হাসপাতালটির শয্যা সংখ্যা বেড়ে ৫০০ শয্যায় উন্নিত হলেও। বাড়েনি হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও চিকিৎসকের পদ। পর্যাপ্ত চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর অভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। স্বল্পসংখ্যক কর্মচারী দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগী দেখার সময় সীমা ও হাসপাতাল চত্বরের যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে রয়েছে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীর স্বজনদের অভিযোগ।

হাসপাতাটিতে বর্তমানে ৩১ জন চিকিৎসকের পদ থাকলে কর্মরত আছে ২২ জন, ক্লিনিক্যাল সা কোলজিস্ট এর ২টি পদই শূন্য রয়েছে। সাইকিয়াট্রিক সোসাল ওয়ার্কারের ৪ টি পদেও মধ্যে ২টি পদ শূন্য রয়েছে। ২য় শ্রেণির ৩১৬ টি পদেও মধ্যে কর্মরত আছে ৩০৯ জন। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের। অফিস সহায়ক ৪০টি পদের মধ্যে কর্মরত আছে মাত্র ৫ জন ৩৫টি পদই রয়েছে ফাঁকা। ওয়ার্ড বয় ৭০টি পদের মধ্যে কর্মরত রয়েছে ২৬ জন। কুক মশালচী ২০ টি পদেও মধ্যে কর্মরত আছে ৮জন। ৩০ টি সুইপার পদের বিপরীতে কর্মরত আছে মাত্র ১৫ জন। সব মিলিয়ে হাসপাতালটির ৬৪৩টি পদের মধ্যে কর্মরত আছে ৪৬৭টি। হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগী দেখার সময় সীমা নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। বেলা ১২ টা পর্যন্ত রোগী দেখা হয় বহির্বিভাগে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে রোগী সঠিক সময়ে এসে পৌছাতে না পেরে বেকায়দায় পরতে হয়। আবাসিক হোটেলগুলো মানসিক রোগীদের রাখতে চাই না। বাধ্য হয়ে হাসপাতালের পাশে অবস্থিত শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের আশ্রমে গিয়ে রাত কাটাতে হয়।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, এই হাসপাতালটিকে বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছেন পাবনা শহরবাসী ও বাইরে থেকে আসা মানুষ গুলো। হাসপাতাল চত্বরে পার্কের মতো ফুচকা, চটপটি ও ঘোড়ার গাড়ি পাওয়া যায়। হাসপাতালের রোগীরা তাদের কৌতুহল এবং বিনোদনের বস্তুতে পরিণত হয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, শুধু সাধারণ মানুষ নয়, সরকারি কর্মকর্তারাও পাবনায় এলে এই হাসপাতালে পরিবারসহ বেড়াতে আসেন। এই অমানবিক আচরণ বন্ধে বারবার উদ্যোগ নেয়া হলেও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের চাপে সেটি সম্ভব হয় না।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এহিয়া কামাল বলেন, এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রয়োজন রয়েছে। জনবল সঙ্কটের কারনে রোগীদের সঠিকভাবে চিকিৎসা সেবা দিতে পারছি না। ৫ জনের কাজ করাতে হচ্ছে একজনকে দিয়ে। জনবল সঙ্কট সমাধানে বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানানো হচ্ছে। আশা করি সমস্যার সমাধান হবে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান মানসিক হাসপাতাল পরির্দশনে আসেন। সে সময় তিনি বলেন, হাসপাতালটির শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করা ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগসহ হাসপাতালটির মান উন্নয়নের একটি বৃহত্তর প্রকল্প গ্রহণ করা যা আগামী একনেকে উপস্থাপন করা হবে। একনেক সভায় পাশ হলে হাসপাতালটির শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয় বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ শুরু হবে।