ঢাকা | অক্টোবর ৭, ২০২৫ - ২:১৫ পূর্বাহ্ন

কৃষকের টাকা নেই: ফসলের বিনিময়ে মিলছে সেচের পানি

  • আপডেট: Monday, October 6, 2025 - 10:11 pm

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের রোপা আমন ধান চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। এ মৌসুমে সব এলাকাতেই সেচ মেশিনে জমিতে সেচ দেয়া হচ্ছে। সেচ মেশিন মালিকেরা জমিতে পানি সেচ বাবদ ধানের সিকি ভাগ কিংবা চার ভাগের এক ভাগ নেয়ার চুক্তি করেছেন বলে কৃষক ও সেচ মালিকেরা জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার কৃষকরা জমিতে সেচের খরচ বাবদ টাকার পরিবর্তে ফসলের ভাগ দিতে আগ্রহী বেশি। কেননা ইরি আবাদে মৌসুমে কৃষকদের হাতে নগদ টাকা থাকে না। তারা ধার দেনা করে কোন মতে জমি চাষ করে। সেই সঙ্গে জমিতে সেচ বাবদ নগদ টাকা দেয়া তাদের কাছে ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ঘামে ফলানো ফসল দিয়েই পানির মূল্য পরিশোধে আগ্রহ প্রকাশ করছেন তারা।

জেলা কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, এবারের মৌসুমে জেলায় মোট ৭৫ হাজার হেক্টর পরিমাণ জমিতে রোপা আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এখনও অনেক মাঠে কৃষকরা রোপা আমন ধানের চারা লাগাচ্ছেন। জেলার উল্লাপাড়া, তাড়াশ, রায়গঞ্জ উপজেলায় বেশি জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ করা হচ্ছে। কৃষকরা বেশি হারে ফলন মেলে এমন সব জাতের চারা জমিতে লাগিয়েছেন। কোনো কোনো এলাকায় বেশিরভাগ মাঠে আগাম জাতের রোপা আমন ধানের আবাদ করা হয়েছে। এখন সেসব জমিতে আগাছা নিড়ানি দেয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, রোপা আমন জমিতে সেচ মেশিনে পানি সেচ দেয়া হচ্ছে। এ সময় স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন সেচনির্ভর রোপা আমন জমিতে পানি কম লাগে। একবার বৃষ্টি হলে অন্তত সপ্তাহখানেক জমিতে পানির দরকার হয় না। সেচ মেশিন মালিকেরা রোপা আমন ধানের জমিতে পানি সেচ বাবদ ফসলের সিকি ভাগ, নয়তো চার ভাগের এক ভাগ নেবেন বলে মৌখিক চুক্তি করে পানি সেচ দিচ্ছেন।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার দিঘলকান্দি গ্রামের কৃষক মনজুর রহমান বলেন, রোপা আমন ধানের জমিতে কয়েকটি অগভীর সেচ মেশিনে চাহিদামতো পানি সেচ দেয়া হচ্ছে। পানি সেচের খরচ বাবদ আমরা ফসলের চারভাগের একভাগ মেশিন (সেচ মালিক)-কে দেই । এতে আমাদের নগদ টাকা দিতে হয় না। ফসল কেটে তারপর সেচের দাম পরিশোধ করি।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বেলুটিয়া গ্রামের সেচ মেশিন মালিক হরমুজ আলী বলেন, আমার সেচ মেশিনে প্রায় ১শ বিঘা জমিতে পানি সেচ দেয়া হচ্ছে। ওই জমির ফসলের চার ভাগের এক ভাগ নেওয়ার চুক্তিতে সেচ দেয়া হচ্ছে। তিনি আরও দাবি করেন, অনেকে বলে পানির মূল্য ফসলের চার ভাগের এক ভাগ নেওয়ায় কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা পুরো মৌসুম জমিতে পানি দেই। কিন্তু ভাগ দেয়ার সময় আমাদের জন্য নিম্ন ফলনের যে ফসল, সেটিই রেখে যায় কৃষকরা।

এছাড়া কোনো কারণে জমির ফসল না হলেও আমরা কোনো আলাদা খরচ নিই না। বিদ্যুতের দাম বাড়লে আমাদের ভাগ বাড়েনি। তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শর্মিষ্ঠা সের গুপ্ত জানান, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী সেচের বিনিময়ে কৃষকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যে কারণে আমরা সেচের বিনিময়ে কৃষকদের নগদ টাকা দেয়ার কথা বলি।