ঢাকা | অক্টোবর ৭, ২০২৫ - ৩:৫৮ পূর্বাহ্ন

হত্যাকারীদের বিচার চেয়ে বাদীপক্ষের সংবাদ সম্মেলন

  • আপডেট: Monday, October 6, 2025 - 10:05 pm

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর চারঘাটে ২০০৯ সালে পারিবারিক বিরোধে একটি খুনের ঘটনায় করা মামলা রাজনৈতিক হিসেবে প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন আসামিরা। আর এতে সুপারিশ করেছেন রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ। এ নিয়ে গতকাল সোমবার দুপুরে রাজশাহী সিটি প্রেসক্লাবে মামলার বাদিপক্ষ সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সেখানে তারা আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছেন।

মামলার এজাহারের বর্ণনা অনুযায়ী, ২০০৯ সালের ৬ অক্টোবর চারঘাট উপজেলার রায়পুর গ্রামের বাসিন্দা রঞ্জু আহমেদ মোটরসাইকেল নিয়ে বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে প্রতিপক্ষরা তার গতিরোধ করে মারধর শুরু করেন। এ সময় তিনি চিৎকার শুরু করলে তার বাবা শামসুল ইসলাম, ভাই মনিরুল ইসলাম ও মো. মন্টু তাকে বাঁচাতে যান।

এ সময় সবাইকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুত্বর জখম করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার সময় মন্টু মারা যান। এ ঘটনায় সেদিন রঞ্জু আহমেদ বাদী হয়ে চারঘাট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রও দিয়েছে। মামলাটি এখন রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-৩ এ বিচারাধীন। ইতিমধ্যে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। যুক্তিতর্কের জন্য আগামী ১৪ অক্টোবর দিন ধার্য্য রয়েছে।

এরমধ্যেই গত ৩০ জুন মামলাটি রাজনৈতিক উল্লেখ করে প্রত্যাহারের জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছেন আসামি আসামি ইমদাদুল হক ওরফে আবু তালেব, রবিউল, আবু তাহের, রেজাউল হক, বজলু, ওহাব, নজরুল ইসলাম ও আবদুল খালেক।

আসামিদের প্রত্যেকের আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ লিখেছেন ‘জোর সুপারিশ করছি।’ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে মতামত চেয়ে আবেদনগুলো গত ২৯ জুলাই জেলা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর কাছে পাঠানো হয়েছে। এরই মধ্যে বাদীপক্ষ বিষয়টি জানতে পেরেছেন।

বিষয়টি জানতে পেরে মামলার বাদী রঞ্জু আহমেদ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতারের কাছে লিখিতভাবে আপত্তি জানিয়েছেন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের আইন-১ শাখায়ও লিখিতভাবে আপত্তি জানিয়েছেন। তার আবেদনে সুপারিশ করেছেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈশা। আর আবু সাঈদ চাঁদ যে মামলা প্রত্যাহারের আবেদনে সুপারিশ করেছেন, সে বিষয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কাছেও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন রঞ্জু।

সংবাদ সম্মেলনে বাদী রঞ্জু আহমেদ জানান, তার দাদা মৃত রহমত মণ্ডলের নামে দলিল থাকা ২ বিঘা ৪ কাঠা জমি দখলে নিয়ে বাড়ি করে আছেন গ্রামপ্রধান জুমারত সরকার। এই নিয়ে তার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ। সেই বিরোধের জের ধরে তার ওপর হামলা হয়। তাকে বাঁচাতে গিয়ে তার বাবা শামসুল হক ও ভাই মনিরুল ইসলাম ও মন্টুও আহত হন। হামলার ১০ মিনিটের মধ্যেই তার ভাই মন্টু মারা যান। আর ওই হামলার পর থেকে চারবছর বিছানাগত ছিলেন শামসুল হক।

পরে তিনিও মারা যান। এটি কোনোভাবেই রাজনৈতিক মামলা নয়। মামলার এজাহার, পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র, সাক্ষীদের সাক্ষ্য, তাদের জবানবন্দী ও জেরার কোনো জায়গায় আসেনি যে এটি আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ কিংবা রাজনৈতিক ঘটনার জেরে হত্যাকাণ্ড।

তিনি বলেন, আমি নিজে বিএনপি করার কারণে দীর্ঘ ১৫ বছর জেল-জুলুম ও হুলিয়ার মধ্যে জীবন পার করেছি। ৫ আগস্টের পর এখনও আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আসামিরা হুমকি দিয়েছে যে, মামলার রায় হলে তাদের ফাঁসি হবে, তাই তারা আরও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েই ফাঁসির দড়ি পরবেন। এ অবস্থায় আমি ঢাকায় পালিয়ে থাকছি। এলাকায় থাকতে পারছি না।

যোগাযোগ করা হলে মামলার প্রধান আসামি ইমদাদুল হক ওরফে আবু তালেব বলেন, ‘আমরা বিএনপি করি। তাই মামলায় আসামি করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদও সে সময় বাদী রঞ্জুকে আপস করার কথা বলেছিল। কিন্তু সে পাত্তাই দেয়নি। এখন চাঁদ চেয়ারম্যান (সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাঈদ চাঁদ) সুপারিশ করেছেন।’

পারিবারিক বিরোধের খুনের মামলা প্রত্যাহারে সুপারিশের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা আবু সাঈদ চাঁদ বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার কোনো বক্তব্য নাই, আমার কোনো মন্তব্য নাই। এটা পারিবারিক বিরোধে খুন না কি রাজনৈতিক খুন সেটা এলাকায় গিয়ে খোঁজ নেন।’